সোহেল রানাকে যাবজ্জীবন কাড়াদন্ডের সুপারিশ তদন্ত কমিটি’র
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ ধসে পড়া রানা প্লাজার জমি বাজেয়াপ্ত করে পঙ্গু-ক্ষতিগ্রস্থ ও নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে অর্থ সহায়তা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি। এছাড়াও তদন্ত রিপোর্টে ভবনের মালিক সোহেল রানার জাবজ্জীবন কারাদন্ডের সুপারিশ করা হয়েছে।
বুধবার বিকেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ে স্বরাষ্ট্র সচিব সি.কিউ.কে মুস্তাকের কাছে ৫টায় তার দপ্তরে ৪’শ পৃষ্টার তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেন অতিরিক্ত সচিব মাইন উদ্দিন খন্দকার। এর আগে ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি মন্ত্রনালয়ে রুদ্ধদার বৈঠক করে।
তদন্ত রিপোর্ট দাখিল শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত সচিব মাইন উদ্দিন খন্দকার বলেন, রানা প্লাজার জমি বাজেয়াপ্ত করে পঙ্গু ও ক্ষতিগ্রস্থ এবং নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে অর্থ সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি অঙ্গহানীদের কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজনের সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। এছাড়াও ভবন মালিক সোহেল রানাকে দন্ডবিধির ৩০৪ ও ৩৪ ধারায় সর্বোচ্চ স্বাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সোহেল রানার বিরুদ্ধে গণহত্যার সামিল (খুন বলে গণ্য নহে) হিসেবেঅভিযোগ আনা হয়েছে। এজন্যই সর্বোচ্চ স্বাস্তি যাবজ্জীবনের সুপারিশ করা হয়েছে। পাঁচ কারখানার মালিকের বিরুদ্ধেও অনুরুপ স্বাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত রিপোর্টে।’ একই সঙ্গে দেশের সকল পোশাক কারখানা দক্ষ কারিগরি টিম দিয়ে পরিক্ষা-নীরিক্ষা করার সুপারিশ করা হয়েছে।
ভবন ধসের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দায়ী স্থানীয় মেয়র, কাউন্সিলর, সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারসহ সহায়তাকারী অন্যদের বিরুদ্ধেও একই সুপারিশ করা হবে বলে জানান তদন্ত কমিটি প্রধান মাইন উদ্দিন খন্দকার।
তিনি আরো জানান, রানা প্লাজা ধনেসর ঘটনায় ৭টি পর্যবেক্ষনসহ ১২টি সুপারিশ ও ৩টি অনুসুপারিশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, রানা প্লাজার ধসের ঘটনা আমাদের দেশের পোশাক শিল্পকে বিপন্ন করে তুলেছে। তবে উদ্ধার কজে আমাদের মানবতাকে জাগ্রত করেছে। মানুষ মানুষের জন্য তার প্রমান মিলেছে।
মাইন উদ্দিন খন্দকার বলেন, রানা প্লাজা নির্মানে বিল্ডিং কোড মানা হয়নি। ব্যবহার করা হয়েছে নিন্মমানের নির্মান সামগ্রী বিশেষ করে ইট বালু সুরকি সিমেন্ট রড ছিল খুবই নিন্মমানের।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে পরিত্যাক্ত ভবন, বিপনীবিতান হিসাবে গড়ে তোলা ভবনে এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়া ভবনে অনেক গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যা এখনই বন্ধে সুপারিশ করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘রানা প্লাজা বিপনীবিতান হিসাবে গড়ে তুলে সেখানে পোশাক কারখানা করা হয়েছিল। অনেক স্থায়ী শ্রমিক সেখানে কাজ করতো। এছাড়া লোহার ভারী যন্ত্রপাতি, জেনারেটর বসানো হয়। এগুলো দিনের পর দিন কম্পন সৃষ্টি করে। ফলে মৃদু মৃদু কম্পনে রড সিমেন্ট কমপেকশন (আরসিসি) ভাঙ্গচুর হয়ে যায়।’
মাইন উদ্দিন খন্দকার বলেন, এমতাবস্থায় সরকার, কারখানা মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা একত্রে বসে জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় উদ্যোগ নেয়াসহ আরো কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।
সোহেল রানার রাজনৈতিক সংস্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে এই অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘সে পলিটিক্যাল অভারলেপ বা রাজনৈতিক মুখোশ নেয়। তার পলিটিক্স মুদ্রামার্কা পলিটিক্স।’
উল্লেখ্য, গত ২৪ এপ্রিল সাভারের নয় তলা ভবন রানা প্লাজা ধসে পড়ে। এতে পাঁচটি পোশাক কারখানা ছিল। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে উদ্ধারকারী সংস্থার লোকজন গত ১৩ মে উদ্ধার অভিযান শেষ করে। সরকারি হিসাব অনযায়ী, এই ভবন ধসে ১,১৩০ জন নিহত হয়।