সহিংসতার অভিযোগ তুলে সরকার বিরোধী জনপ্রতিনিধি দমনে অভিযান
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ সরকার বিরোধী জনপ্রতিনিধি দমনে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে অভিযান শুরু করেছে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়। এরই অংশ হিসেবে সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতনিধি উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের বরখাস্ত করা হচ্ছে। চট্রগ্রাম, কক্সবাজারের, সিলেট, কুষ্টিয়া পঞ্চগড়. চাপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের কয়েকটি জেলায় অনুসন্ধান চালিয়েও এর সত্যতা মিেিলছে। সাধারণ মানুষের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা অভিযোগ করে বলেছেন, স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের কর্মকান্ডে যোগ না দিলেই তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। দমন-পীরণ চালানো হচ্ছে।
‘বিরোধী দলের হরতালে সহিংসতা করেছেন’ এ অভিযোগে সম্প্রতি ৬ জন উপজেলা চেয়ারম্যান ও একজন ইউপি চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এরা সকলেই বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত বলে জানা গেছে। অব্যাহতি দেওয়া এই জনপ্রতিনিধিরা এখন পলাতক রয়েছেন। পুলিশ দিয়ে তাদের পরিবারকে হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিরা যে দলের সমর্থক হয়ে থাকুন না কেন, তাদের দায়িত্ব ‘জনসেবা । কিন্তু তাঁরা সে কাজ না করে যদি হিংসাত্বক কাজের মাধ্যমে জাতীয় সম্পদ ক্ষতি করেন এবং ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন তবে তাদেরকে আইনানুগভাবে অপসারণ করা ছাড়া আমাদের কোন পথ খোলা নেই।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সকল জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়ে সহিংসতায় জড়িত স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত যে ক’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখনো অনেক জেলা থেকে তালিকা আসেনি। আসা মাত্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, অনেকে অপরাধে জড়িত থাকায় এখন গা ঢাকা দিয়েছেন। পরিষদের কাজকর্ম সচল রাখতে সেসব জায়গায় ভাই চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।
সচিব বলেন, রামু’র বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বান্দরবন জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান তোফাইল আহামদ, কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম শাহাজালাল চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সাম্প্রতিক রাষ্ট্রবিরোধী সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় কুষ্টিয়া সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোশাররফ হুসাইন, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ বাবর আলী এবং শিবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান কেরামত আলীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এসব জায়গায় ভাইস চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
অনুসন্ধান চালিয়ে জান গেছে, সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জালাল আহমেদকে গত ২২ এপ্রিল সোমবার দায়িত্ব থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এছাড়াও সহিংসতায় জড়িত থাকাসহ তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি ফৌজদারি অপরাধের ২০টি মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশি হয়রানি ও গ্রেফতারের ভয়ে তিনি পলাতক রয়েছেন।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, পঞ্চগড় উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়াতের আমীর মো. আব্দুল খালেকের সরকারি জিপ জব্দ করা হয়েছে। ‘সরকারি জিপটি দলীয় কাজে ব্যবহার করা হয়’ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের এমন প্রতিবেদনের কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি সূত্র জানায়, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে গত এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে দেশের ৬৪ জেলা প্রশাসককে পত্র দিয়ে সরকার বিরোধী কর্মকান্ডে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অবস্থান, তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ ও অতিত কর্মকান্ডের ফিরিস্তি জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়। আবু আলম মো. শহীদ খান নিজেই এই পত্রে স্বাক্ষর করেন। মূলতঃ এর পর থেকেই সরকার বা আওয়ামী লীগ বিরোধীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় পর্যায়ে দমন-পীরণ শুরু হয়।
সূত্র আরো জানায়, ইতিমধ্যে ২৬টি জেলার জনপ্রতিনিধির তথ্য স্থানীয় সরকার বিভাগে এসে পৌচেছে। এরা সকলেই স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপি ও জামায়াত নেতা। তাদের বিরুদ্ধে থাকা পুরনো অভিযোগ আবার পূনরুজ্জিবিত করারও চেষ্টা চলছে বলে সূত্র জানায়।