চালু হচ্ছে কনটেন্ট ফিল্টারিং; ইসলামবিরোধীর চেয়ে সরকারবিরোধী কনটেন্টের বিরুদ্ধেই বেশি প্রয়োগের আশংকা!

Uploaপ্রযুক্তি রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ দেশের ভার্চুয়াল জগতে নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে ‘কনটেন্ট ফিল্টারিং’ বা ‘প্রযুক্তি ছাকনি’ ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। তবে এই প্রযুক্তি ছাকনিকে ব্যক্তি ও ইন্টারনেট স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন প্রযুক্তিবিদরা। বিষয়টিকে রাজনৈতিক উদ্বেগের নতুন মাত্রা বলে মনে করছেন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অনেকেই।

জানাগেছে, ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়েগুলোতে (আইআইজি) স্থাপন করা হচ্ছে নিয়ন্ত্রণমূলক প্রযুক্তি ‘কনটেন্ট ফিল্টারিং’ বা ‘প্রযুক্তি ছাকনি । বিদ্যমান ৩৬টি আইআইজিগুলোতে এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংযোজনের পর ওয়েব ইন্টারফেসের মাধ্যমে এর মূল নিয়ন্ত্রণ থাকবে বিটিআরসির প্রধান কার্যালয়ে।

বিটিআরসি’র সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয়, সমাজ, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোতে জড়িত ওয়েবসাইটগুলো থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এমন বিষয় সনাক্ত করে তা বন্ধ করে দেয়া হবে। ২৪ ঘণ্টা নজরদারিতে সলিউশনস প্রোভাইডারকেও সার্বক্ষণিক সহায়তা দিতে হবে।

জানাগছে, এ ধরনের নিয়ন্ত্রণ সফটওয়্যার বা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে যে কারো ব্যক্তিগত একাউন্টে সহজেই প্রবেশ করা যাবে এবং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

সূত্র মতে, বিশেষ এই প্রযুক্তি স্থাপনে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ইতিমধ্যে সাড়াও পেয়েছে বিটিআরসি। প্রতিটি আইআইজিতে এ প্রযুক্তি বসানোর পর ইন্টারনেটের নজরদারি বা নিয়ন্ত্রণের মূল ক্ষমতা থাকবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির হাতে।

প্রসঙ্গত, নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরালো করতে গত ৮ এপ্রিল আন্তজার্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ‘ইন্টারনেট সেফটি সলিউশন’ চেয়ে ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দেয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।

বিজ্ঞপ্তিতে সাড়া দিয়ে নির্দিষ্ট সময় ২০ মে’র মধ্যে বেশ কয়েকটি আন্তজার্তিক ইন্টারনেট সলিউশনস প্রোভাইডার কোম্পানি বিটিআরসিতে আগ্রহপত্র (এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট/) জমা দিয়েছে।

খুব শিগগিরেই এগুলো যাচাই-বাছাই করে পুরো প্রক্রিয়া শুরু করা হবে বলে জানিয়েছে বিটিআরসি সূত্র।

সূত্র মতে, নির্বাচিত কোম্পানিকে মূল সাইট চালু রেখেই সহজে আপত্তিকর বিষয়গুলো ইন্টারনেট থেকে আপত্তিকর বিষয় সরিয়ে ফেলা যায় এমন ইন্টারনেট নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করে দিতে বলা হবে। একইসঙ্গে এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা আইআইজিগুলোতে বসানোর পরও যেন ইন্টারেনেটের গতিতে কোনো প্রভাব না এবং আইআইজিগুলো নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে পারেন সে বিষয়টিও নিশ্চিত করা হবে।

এ বিষয়ে ইন্টারন্টে সার্ভিস প্রোভাইডারদের সংগঠন আইএসপিবি’র সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক এবিসি নিউজ বিডিকে জানান, অনেকদিন আগেই একটি গোয়েন্দা সংস্থার উদ্যোগে এই ব্যবস্থা নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু এটি বাস্তবায়নে ৫০ কোটি টাকার বাজেট সংস্থান নিয়ে জটিলতার কারণে এটা এতোদিন সম্ভব হয়নি।

তিনি বলেন, জাপান ছাড়া পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশেই এই পদ্ধতি চালু আছে। তবে এটা যেন অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা না হয় সে বিষয়েও বিটিআরসিকে সচেষ্ট থাকতে হবে।

অপরদিকে ফাইবার অ্যাট হোম’র চিফ স্ট্রাট্রেজিক অফিসার ও তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির এবিসি নিউজ বিডির কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, এটি একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়। তবে এক কথায় এটা ইন্টারনেট স্বাধীনাতার ওপর হস্তক্ষেপ।

তিনি আরো বলেন, এই প্রযুক্তি ছাকনি স্থাপনের ফলে আগামীতে আরও কিছু জটিলতা তৈরি হবে। কেননা যে প্রযুক্তি ব্যবহার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তার মাধ্যমে ভালো-মন্দ দুইই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এটা নির্ভর করবে এ কাজে সংশ্লিষ্টদের ওপর। তাছাড়া ব্যক্তিগত স্বাধীনতা লঙ্ঘনের পাশাপাশি এর মাধ্যমে অনলাইন লেনদেনের বিষয়টিও ঝুঁকিপূর্ণ হবে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ