ভারতে প্রতি ২২ মিনিটে একজন ধর্ষিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ ভারতের জাতীয় অপরাধ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে প্রতি ২২ মিনিটে একজন নারী ধর্ষিত হচ্ছেন। রূপালী পর্দায় নারীর উপস্থিতি এর জন্য অনেকটা দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।ভারতের সীমানা ছাড়িয়ে বলিউডের বিশ্ব দাপিয়ে বেড়ানোর ইতিহাস দীর্ঘদিনের। বলিউডের ছবিতে নারীদের যেভাবে ‘উপস্থাপন’করা হয় তা দেশটিতে যৌন সহিংসতাকে উস্কে দিচ্ছে কি-না, সে বিতর্কও চলছে জোরেসোরে! এক প্রতিবেদনে এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন বৃটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের (বিবিসি) চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রতিবেদক টম ব্রুক। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে কথা বলছেন বলিউডের নামিদামী তারকারাও। তবে তাতেও কী থেমেছে যৌন সহিংসতা? ২০১২ সালের ডিসেম্বরে নয়াদিল্লিতে চলন্ত বাসে ২৩ বছর বয়সী এক মেডিকেল ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। বলিউডের অন্যতম শীর্ষতারকা শাহরুখ খানের এক টুইটার বার্তার মাধ্যমে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে সে সংবাদ সারা বিশ্বে আলোড়ন তোলে। টুইটারে তিনি বলেছিলেন, আমি অত্যন্ত দুঃখিত যে আমিও এই সমাজ ও সংস্কৃতির একজন। আমি অত্যন্ত দুঃখিত যে আমিও একজন মানুষ। এরপরও দেশটিতে অসংখ্য যৌন সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। ওই অসংখ্য খবরের মধ্যে গত মাসে পশ্চিম বঙ্গে গণধর্ষণের একটি ঘটনাও রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ২০ বছর বয়সী ওই নারী সমাজপতিদের সিদ্ধান্তে গণর্ধষণের শিকার হয়েছেন। এসব বেদনাদায়ক ঘটনার জন্য ভারতীয় নারীরাই দায়ী কি-না সে প্রশ্নও উঠেছে! বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় চলচ্চিত্রে নারীদের যেভাবে উপস্থাপন করা হয় তাতে কিছু উন্নয়নের চিহ্ন লক্ষ্য করা গেলেও দেশটির একজন শীর্ষ চলচ্চিত্র পরিচালক মীরা নায়ার বলিউডের মূলধারার চলচ্চিত্রে ‘নারীদের উপস্থাপন’ নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট নন। মীরা বলেন, যখন পর্দায় কোনো নায়িকার আর্বিভাব ঘটে তখন তাকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যেন সে যৌন আবেদন সৃষ্টি করে। আমি একে অশ্লীলতাই বলব। তিনি বলেন, আমাদের অনেক চলচ্চিত্রই সেকেলে, বাঁধাধরা। বলিউডের চলচ্চিত্রে প্রতিনিয়ত এমন গান দেখানো হয় যেগুলো অত্যন্ত জনপ্রিয় ও একইসঙ্গে আবেদনও সৃষ্টি করে। দর্শকদের জন্য এগুলো বিনোদনের খোরাক হলেও বিষয়টিকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন এই খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা। মীরা বলেন, সব চলচ্চিত্রেই এমন দৃশ্য দেখানো হয় যেখানে বলিউড রাণীরা পুরুষকে বিমোহিত করতে সবকিছুই করে থাকেন। আমার আপত্তি এখানেই। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, আমার মনে হয় না এটি (নারীর উপস্থাপন) পুরুষ ও নারীদের মধ্যে কোনো ধরনের মিথস্ক্রিয়া তৈরি করে। ভারতীয় চলচ্চিত্র তারকা তিলোত্তমা শৌমি বলছেন, কিভাবে বলিউডে নারীরা অভিনয় করছেন শুধু তার ওপরই জোর দেওয়া উচিত নয়। এটা বরং পুরুষদেরও প্রতিকৃতি। তার মতে, পুরুষরা আক্রমণাত্মক, না হয় রক্ষণশীল। নৈমিত্তিক এই ব্যাপারটি পুরুষদের যেমন ক্ষতি করছে তেমনি নারীদেরও। বিষয়টির প্রভাব সমাজে প্রতিনিয়তই পড়ছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মাসে থ্রিডি ভার্সনে পুনঃমুক্তি পেয়েছে ভারতীয় চলচ্চিত্র শোলে। ওই চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যে দেখানো হয়েছে- মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও একজন নারী একজন পুরুষের আক্রমণাত্মক অবস্থাকে দৃঢ়তার সঙ্গে প্রতিরোধ করছে। ওই দৃশ্যে নারীর আবেগকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যেন সে মুখে বলছে ‘না, কিন্তু বোঝাতে চাইছে ‘হ্যাঁ। যৌনতার সঙ্গে পরিপূর্ণ এই মিথস্ক্রিয়া ভারতের প্রায় সব চলচ্চিত্রেই দেখা যায়। একজন নারীকে বশ করতে পুরুষের এই চরিত্র ভারতের প্রায় প্রতিটা চলচ্চিত্রেই চোখে পড়ে। বলিউডে সামাজিকভাবে অনেকের চেয়ে প্রগতিশীল হিসেবে পরিচিত শীর্ষতারকা আমির খানও সমালোচনা করছেন এমন চলচ্চিত্রের। তিনি বলছেন, এমন চলচ্চিত্রও তৈরি হয় যেখানে কিছু বিষয়কে জাকজমকপূর্ণ অথবা শান্ত প্রকৃতির দেখানো হয়। যেটা নিতান্তই দুর্ভাগ্যজনক। এটা আমাদের চিন্তাভাবনাকে প্রতিফলিত করে। তার মতে, এই (চলচ্চিত্র) ক্ষেত্রটিতে অনেক সৃষ্টিশীল মানুষ রয়েছেন যারা ভাবছেন বিষয়টি নিয়ে বলার অনেক কিছুই রয়েছে। আমরা যা, তাই এটির প্রতিফলন এবং তা দুঃখজনক। তবে বিষয়টি যে সংশোধন হওয়া উচিত তা ভাবছেন না বলিউডের অনেকেই। এ বিষয়ে শাহরুখ খান বলেন, আমি অত্যন্ত পরিষ্কার যে, ভারতীয় চলচ্চিত্রগুলোতে এমন কিছু নেই যেখানে নারীদের অবমূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। কেউ এটি বলে থাকলে বিষয়টি তার ক্ষীণদৃষ্টির পরিচায়ক। নারীদের লক্ষ্য করে সহিংসতার বিষয়টি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা হয়েছে—এমন কিছু চলচ্চিত্রও রয়েছে। তবে এর সংখ্যা বেশি নয়। ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘নো ওয়ান কিল্ড জেসিকা’ তার মধ্যে অন্যতম, যা নির্মিত হয়েছে দিল্লির মডেল ও একটি বারের অতিথিসেবিকা জেসিকা লালের জীবন নিয়ে সত্য ঘটনা অবলম্বনে, যাকে ১৯৯৯ সালে হত্যা করা হয়। তিলোত্তমা শৌমির মতে, কাহিনীর প্রয়োজনে চলচ্চিত্রে যৌন সহিংসতার বিষয়টি দেখানো যেতে পারে তবে এর বাইরে অবশ্যই কিছু নয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বলিউডের মতো হলিউডেও চলচ্চিত্রে নারীর সরব উপস্থিতি রয়েছে। তবে সেখানে নারীর উপস্থাপন অনেক বেশি বাস্তবভিত্তিক। আমির খানে বলেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলার যথাযথ প্রয়োগ নেই। যদি আপনি ভারতে ধর্ষণকে একটি অপরাধ হিসেবে দেখেন তবে দেখবেন অধিকাংশ ধর্ষণের মামলারই বিচারই নেই। আমি মনে করি চলচ্চিত্র শিল্পের তদারকি দরকার। আমরা কিভাবে নারীদের চলচ্চিত্রে উপস্থাপন করছি সে বিষয়টিও নজরে রাখতে হবে। আমার মনে হয় এটি বড় সমস্যা ও একই সঙ্গে বৃহৎ ঘটনাও। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই কি আমাদের পরাস্ত করছে, বলেন তিনি।