ইংলাককে এক সপ্তাহ আটকে রাখা হতে পারে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ সেনা অভ্যুত্থানের পর সেনাবাহিনীর হাতে আটক হওয়া থাইল্যান্ডের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা ও তাঁর সরকারের নেতাদের এক সপ্তাহ পর্যন্ত আটকে রাখা হতে পারে। আজ শনিবার দেশটির সেনাবাহিনী এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা জানায়।
আজ এএফপির খবরে জানানো হয়, গত বৃহস্পতিবার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে থাইল্যান্ডের ক্ষমতা নেওয়ার পর আজই প্রথম এ ধরনের ব্রিফিং দিল সেনাবাহিনী। এর মধ্যে সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক সমালোচনা পাত্তা না দিয়ে দেশটির শাসন ক্ষমতায় তাঁর প্রভাব আরও বিস্তার করেছে।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ইংলাক সিনাওয়াত্রাসহ যাঁদের আটক করা হয়েছে, তাঁদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। তবে তাঁদের কোথায় আটকে রাখা হয়েছে, এ বিষয়ে কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে সামরিক জান্তা।
থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল উইনথাই সুভারী বলেন, আটক ব্যক্তিদের সপ্তাহ খানেক পর্যন্ত আটকে রাখা হতে পারে। তবে তা নির্ভর করছে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক এই হাঙ্গামার মধ্যে তাঁরা নিজেদের কীভাবে সম্পৃক্ত করবেন তার ওপর।
দেশটির কেন্দ্রীয় সেনাবাহিনীর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল থিরাচাই নাকওয়ানিচ বলেন, ইংলাক আটক আছেন। তবে তিনি বেশ ভালো আছেন।
দুই দিন আগে দেশে সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার অভ্যুত্থানের ঘোষণা দেয় সেনাবাহিনী৷ দেশের সংবিধান স্থগিত ও জনসমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়৷ আটক করা হয় অনেক রাজনীতিককে৷ সেনাপ্রধান জেনারেল প্রাইউথ শান-ওশা নিজেকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা দেন৷ কয়েক মাস ধরে চলা রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কথা বলে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়৷
এ ঘটনার পর ইংলাক সিনাওয়াত্রাসহ দেশটির শতাধিক রাজনীতিবিদকে গতকাল ব্যাংককের সেনাঘাঁটিতে তলব করে জান্তা সরকার। হাজিরা দিতে গতকাল দুপুরের পর ব্যাংককের একটি সেনা কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যান ইংলাক৷ এরপর তিনি আরেকটি সেনা কার্যালয়ে যান৷ সেখানে তাঁকে কয়েক ঘণ্টা রেখে পরে একটি অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়৷এ সময় পরিবারের কয়েকজন সদস্যসহ তাঁর দল পুয়ে থাইর বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকেও আটক করা হয় বলে জানা গেছে।
গতকাল টেলিভিশনে সম্প্রচার করা এক বিবৃতিতে বলা হয়, সেনাবাহিনী ১৫৫ জন রাজনীতিকের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সংকট নিরসন’ করতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অভ্যুত্থানের ঘোষণার পর সেনারা ব্যাংকক ও এর আশপাশে শিবির গেড়ে থাকা ইংলাকপন্থী ও বিরোধী বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছেন৷
নিজেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া সেনাপ্রধান প্রাইউথ বলেছেন, ‘দেশে দ্রুততার সঙ্গে স্বাভাবিক অবস্থা’ ফিরিয়ে আনতেই সেনারা ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন৷ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে তিনি বলেন, সব থাই নাগরিককে অবশ্যই শান্ত থাকতে হবে এবং সরকারি কর্মীদের স্বাভাবিক নিয়মে কাজ করতে হবে৷
এই অভ্যুত্থানের ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে থাইল্যান্ড৷ দেশে বেসামরিক আইন (নির্বাচিত সরকার) ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র মেরি হার্ফ জানিয়েছেন, থাইল্যান্ডকে দেওয়া ৩৫ লাখ ডলারের সামরিক সহায়তা স্থগিত করা হতে পারে।
সেনা সরকারের বিরোধিতা করে ব্যাংককে বিক্ষিপ্তভাবে বিক্ষোভ করছে দেশটির সাধারণ জনগণ। তাদের স্লোগান, ‘আমরা গণতন্ত্র চাই। সেনাশাসন চাই না।’