পুতুল ছেড়ে অস্ত্র, প্রাপ্তি ধর্ষণ-বঞ্চনা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ মারিয়া যখন মাত্র ১০ বছরের শিশু, সশস্ত্র এক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে বিক্রি হয়ে যান তিনি। যে বয়সে তাঁর পুতুল খেলার কথা, সেই বয়সে হাতে অস্ত্র তুলে নিতে বাধ্য হন। কচি বয়সেই হয়েছে ধর্ষণ, নিপীড়ন ও বঞ্চনার মতো নিদারুণ অভিজ্ঞতা।
মারিয়ার বয়স এখন ২৬ বছর। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে অনেক দূরে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন তিনি। কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে। গেরিলাদের সঙ্গে কাটানো শৈশব সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন, ‘মৃত্যুর জন্য বছরের পর ধরে বছর অপেক্ষা।’
মারিয়া অবশ্য তাঁর ছদ্মনাম। পরিবারের আর্থিক অনটন কাজে লাগিয়ে তাঁকে নিজেদের করে নেয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী রেভ্যুলেশনারি আর্মড ফোর্সেস অব কলম্বিয়া—ফার্ক। ৫০ বছর ধরে ফার্ক গেরিলাদের বিরুদ্ধে সেনাদের যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধে সেখানকার শিশুদের কড়া মূল্য দিতে হচ্ছে।
কাল রোববার দেশটির জনগণ পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোট দেবেন। প্রেসিডেন্ট হুয়ান ম্যানুয়েল সানতোসকে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় নিয়ে আসতে চান। শান্তি আলোচনার মাধ্যমে রক্তক্ষয়ের অবসান ঘটাতে চান তিনি।
এক সরকারি হিসাবে, পাঁচ হাজারেরও বেশি শিশুকে জোর করে নিজেদের দলে নিয়েছে ফার্কসহ বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠী। এদের মধ্যে ৭০ শতাংশ যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। ৮৪ শতাংশ যুদ্ধ করেছে।
মারিয়াও ছিলেন এমন এক শিশু। দাদি ও ফুপুর সঙ্গে থাকতেন কলম্বিয়ায়। পরিবারের সদস্যরা ফার্কের কাছ থেকে পাঁচ হাজার ডলার সমমূল্যের ঋণ নিয়েছিলেন। সেই অর্থ পরিশোধ করতে না পেরে ছোট্ট মারিয়াকে বিদ্রোহীদের হাতে তুলে দেন তাঁরা।
স্মৃতির পাতা উল্টে মারিয়া বলতে থাকেন, ‘দুই বিদ্রোহী আমার কাছে আসেন। আমি দৌড়াতে শুরু করি। তাঁদের মধ্যে একজন আমাকে ধরে ফেলেন। বলেন, “তুমি পালাতে পারবে না। কারণ তুমি এখন আমাদের।”’
মারিয়ার হাতের আঙুলে গেরিলাদের ছাপ মেরে দেয় বিদ্রোহীরা। প্রায় পাঁচ বছর ধরে গেরিলাদের সঙ্গে ছিলেন তিনি। কাঁধে ছিল একে-৪৭ রাইফেল। এ সময় অনেক বেসামরিক মানুষকে ফার্কের হাতে খুন হতে দেখেছেন তিনি। নিজেও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। কৌশল খাটিয়ে কৃষকের কাছ থেকে ‘বিপ্লবী চাঁদা’ তোলার কাজ পান মারিয়া। পালানোর সুযোগ আসে। ১৫ বছর বয়সে ফার্কের কাছ থেকে পালান তিনি।
মারিয়া জানান, জঙ্গলের ভেতর দিয়ে টানা চার দিন হেঁটেছেন। ক্ষুধার তাড়নায় সাপ মেরে পর্যন্ত খেয়েছেন। ওই সময় ক্লান্তির কোনো অনুভূতি ছিল না। জীবন-মৃত্যু বাজি রেখে মুক্তিই ছিল একমাত্র লক্ষ্য।
এরপর সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন মারিয়া। তখন তাঁর জীবনের আরেক দুঃসহ অধ্যায়ের সূত্রপাত ঘটে। কর্তৃপক্ষ তাঁর পরিবার খুঁজতে থাকে। পরে ছাড়া পান। কিন্তু গেরিলা জীবনের ভয়ংকর ছাপ তাঁর শরীরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শিশুযোদ্ধা থেকে মারিয়া হন অন্তঃসত্ত্বা ভিখারি। কোনো কাজ পাচ্ছিলেন না। অতীত জানলেই মানুষ তাঁকে তাড়িয়ে দিত। একপর্যায়ে একটি সরকারি পুনর্বাসন সংস্থা তাঁকে সাহায্য করে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন তিনি।
দুই বছর আগে হাইস্কুল থেকে ডিপ্লোমা করেছেন মারিয়া। বিয়ে করেছেন। দ্বিতীয় মেয়ের মা তিনি। বাসার নিচতলায় মুদির দোকান দিয়েছেন। একই সঙ্গে গোরিলা জীবন থেকে ফিরে আসা শিশুদের পুনর্বাসনে সহায়তা করছেন।
২০১২ সাল থেকে গোরিলাদের সঙ্গে সরকারের চলা শান্তি আলোচনায় সফল হবে বলে আশাবাদী মারিয়া। তাঁর প্রত্যাশা, বিদ্রোহীরা তাদের ভুল বুঝবে।