পরিবহন ধর্মঘটে অচল চার জেলা
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ রাজশাহী, সুনামগঞ্জ, পাবনা ও নেত্রকোনায় বিভিন্ন দাবিতে পরিবহন ধর্মঘট চলছে। তিন জেলায় রোববার সকাল থেকে এবং নেত্রকোনায় দ্বিতীয় দিনের মতো ধর্মঘট চলছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো এ সংক্রান্ত খবর- রাজশাহী: রাজশাহী বিভাগে রোববার সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। এতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সড়ক পথে রাজশাহীর সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা। বাসের সঙ্গে বন্ধ রয়েছে মালবাহী ট্রাক, ট্যাংকলরিও। গত ১৫ মে রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে নসিমন, করিমন, ভটভটি পাওয়ারটিলার, ট্রাক্টরসহ অবৈধ যানবাহন বন্ধ করা না হলে ছয় দফা দাবিতে ২৯ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। একই দাবিতে ২০ মে বিকেল ৩টা থেকে ২১ মে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রতীকী পরিবহন ধর্মঘটও পালন করা হয়। ওই দিন বিকেলে অনুষ্ঠিত শ্রমিক সমাবেশ থেকে একই দাবিতে পুনরায় ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে পরিবহন নেতারা জানান, এর মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ২৫ মে রোববার সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হবে। রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদাক মুন্জুর রহমান পিটার জানান, ২১ মে রাজশাহী জেলা বাস-ট্রাক মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে ৬ দফা দাবিতে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ঘোষণা করা হয়েছিল। তার অংশ হিসেবে আজ ধর্মঘট শুরু হয়েছে। রাজশাহী জেলা বাস-ট্রাক মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ৬ দফা দাবির মধ্যে অন্য দাবিগুলো হলো- সিএনজি, মাহেন্দ্রা, ত্রি-হুইলার, ইমা, রুট পারমিট বহির্ভূত এলাকায় চলাচল এবং রুট পারমিট দেওয়া বন্ধ করা, লিজ নেওয়া বিআরটিসি ও দ্বিতল বাস উপজেলা ভিত্তিক চলাচল বন্ধ করা, স্কেলের নামে ট্রাকের চাঁদাবাজি বন্ধ করা এবং সব ধরনের পুলিশি হয়রানি বন্ধ করতে হবে। মুন্জুর রহমান পিটার বলেন, বিআরটিএ অনুমোদিত ও ফিটনেসবিহীন নসিমন, করিমন, ভটভটি, পাওয়ারটিলার, টাক্টরসহ অবৈধ যানবাহন সড়ক মহাসড়কে বেপরোয়াভাবে চলাচলের কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রশিক্ষণবিহীন চালকরা নিয়ন্ত্রণহীন যানবাহন নিয়ে দ্রুতগামী পরিবহনের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে সড়ক পথে বাড়ছে প্রাণহানীর ঘটনা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, জেলার বিভিন্ন থানার ইউএনও ও কতিপয় পৌর মেয়র ডাকের মাধ্যমে টাকা নিয়ে এসব চলাচলের ব্যবস্থা করছেন। যা আইনত তারা করতে পারেন না। এছাড়া সরকার কিছু সংখ্যক নিজস্ব মনোনীত ব্যক্তিকে বিআরটিসি বাস ভাড়া দিয়ে তা উপজেলা ভিত্তিক চালাচ্ছেন। এছাড়া দ্বিতল বাসগুলো উপজেলা ভিত্তিক নয়, টাউন সার্ভিস হিসেবে চলার কথা ছিল। এসময় তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ৬ দফা দাবি মানা না হলে এর পর গোটা উত্তরবঙ্গ এবং সবশেষ গোটা দেশ অচল করে দেওয়া হবে। আর এবার কোনোক্রমেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেবল আলোচনা বা আশ্বাসে পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের এ আন্দোলন স্থগিত হবে না। সুনামগঞ্জ: প্রবাসী বিএনপি নেতা মুজিবুর রহমানের গাড়ি চালক সোহেলের সন্ধান দাবিতে জেলা মাইক্রোবাস ও ট্যাক্সি চালক সমিতির ডাকে রোববার সুনামগঞ্জে সকাল-সন্ধ্যা পরিবহন ধর্মঘট চলছে। সকাল ৬টা থেকে মাইক্রোবাস ও ট্যাক্সি চালক সমবায় সমিতির সদস্যদের সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, ওয়েজখালি পয়েন্ট ও মদনপুর পয়েন্ট এবং সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কসহ সব কয়টি আঞ্চলিক সড়কে পিকেটিং করতে দেখা গেছে। এর আগে গত সোমবার বেলা ১১টার দিকে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে এক সমাবেশে পরিবহন শ্রমিকরা এ ধর্মঘটের ডাক দেন। ৪ মে মুজিবুর রহমান মুজিব তার ব্যবহৃত প্রাইভেটকারে করে সুনামগঞ্জ থেকে সিলেট যাওয়ার পথে গাড়ি চালক সোহেলসহ নিখোঁজ হন। নিখোঁজের দু’দিন পর ৬ মে মুজিবুরের ভাগনি জামাতা রাবিউল ইসলাম সুনামগঞ্জ সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এদিকে, ১০ মে সুনামগঞ্জের দিরাই পৌর শহরের হাজী আলীম উল্লাহ চৌধুরীর ছেলে আলী আকবর চৌধুরী, তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরি গ্রামের আব্দুল মতিনের ছেলে তারেকুজ্জামান ও সুনামগঞ্জ শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকার আজিজুল হকের ছেলে মো. জিহাদুল হককে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে পুলিশ। নিখোঁজ মুজিবুর রহমানের সন্ধান দাবিতে সুনামগঞ্জ জেলায় গত ১১ মে আধাবেলা হরতাল পালন করেছে জেলা বিএনপি। পাবনা: ইঞ্জিনচালিত নসিমন, করিমন ও ভটভটি বন্ধের দাবিতে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতির ডাকে রাজশাহী বিভাগের সবকটি জেলার সঙ্গে পাবনায়ও চলছে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট। রোববার সকাল ৬টা থেকে এ পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়। ধর্মঘট চলাকালে পাবনা থেকে দূরপাল্লার কোনো যানবাহন ছাড়েনি। রাস্তায় বাস ট্রাক চলাচল করতে দেখা যায় নি। পাবনা থেকে রাজশাহী, কুষ্টিয়া, বগুড়া নাটোরসহ সবকটি রুটেই যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। যান চলাচল বন্ধ থাকায় দূরপাল্লার যাত্রীরা পড়েছেন মহাবিপাকে। তাদের দুর্ভোগ এখন চরমে। এ ব্যাপারে পাবনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা ফিরোজ খান জানান, রুট পারমিট না থাকায় সড়কে অবৈধভাবে নসিমন, করিমন চলায় সড়কে দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে। এটা বন্ধের জন্যই ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছে। নেত্রকোনা: সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক ও বাস শ্রমিকদের দ্বন্দ্বে রোববার দ্বিতীয় দিনের মতো নেত্রকোনায় অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট চলছে। জেলার সব অভ্যন্তরীণ রুটে ধর্মঘট অব্যাহত থাকায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন যাত্রীরা। নেত্রকোনা জেলা বাস টার্মিনাল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোর্শেদ তালুকদার জানান, বুধবার অটোরিকশা চালকদের সঙ্গে বাস শ্রমিকদের কথা কাটাকাটি হয়। শুক্রবার বিকেলে বৈঠক ডেকে বিষয়টি মিমাংসা হয়। পরে রাতে আবার অটোরিকশা চালকরা বাস ভাঙচুর করলে শ্রমিক ইউনিয়ন জেলার অভ্যন্তরীণ সব রুটে শনিবার সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়। বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় রোববারও ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে। এদিকে, শনিবার সন্ধ্যায় টার্মিনাল এলাকায় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ হলে এই ধর্মঘট আরও জোরদার হয় বলেও জানান তিনি। জেলা প্রশাসক ড. আবুল কালাম আজাদ জানান, যাত্রী পরিবহন নিয়ে দ্বন্দ্বে এই ধর্মঘট চলছে। শনিবার এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েও সমাধান করা যায়নি। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।