তালিকায় নেই ঢাকা, চুক্তিতে নেই তিস্তা
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ নরেন্দ্র মোদীর বিদেশ সফর তালিকায় বাংলাদেশ নেই, বরং তার প্রথম বিদেশ সফরের জন্য নির্ধারিত দেশটি ব্রাজিল। ডিপ্লোম্যাটিক ক্যালেন্ডার একথাই বলছে।
কূটনৈতিক ইস্যুতে তিস্তা প্রসঙ্গে ছিটেফোঁটাও উচ্চারণ নেই, আন্তর্জাতিক পরিম-লে ব্রিকস (ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া, চায়না, সাউথ আফ্রিকা) কূটনীতিতেই মোদীর প্রথম অংশগ্রহণ।
আর সেই সফর শুরু হবে জুলাইয়ে। সে মাসে রিওডিজেনেরিও’র ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিম-লে নিজের অবস্থান জানান দেওয়ার প্রথম সুযোগটি নেবেন নরেন্দ্র মোদী।
দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো মোদীর কূটনৈতিক গতিবিধি জানাতে আরও বলছে, ভারতীয় নতুন প্রধানমন্ত্রীর জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তত তিন দফায় দেখা হতে পারে চিনের প্রেসিডেন্ট জি জিনপিংয়ের সঙ্গে। এ বছরের শেষ দিকে জি‘র সম্ভাব্য ভারত সফর বাদ দিয়েই এসব সাক্ষাত। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙেও সাক্ষাতের সুযোগ থাকবে একাধিক।
ব্রাজিলে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিম-লে বিশেষ করে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হবে মোদীর। সেখানেই চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার প্রথম দেখা হবে। ব্রাজিলের ডিলমা রুসেফ, দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাকব জুমা, রাশার ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও প্রথম সাক্ষাৎ হবে ব্রাজিলে।
এরপর সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যাবেন ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্ব নেতাদের সবার সঙ্গে দেখা হওয়ার সেটাই সুযোগ। এই সাইডলাইনে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক রীতিসিদ্ধ। সেই সুযোগ নিয়ে হয়তো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকও তিনি করবেন।
তবে নভেম্বরে এশীয় প্রতিবেশিদের দিকে নজর দেওয়ার সময় পাবেন নরেন্দ্র মোদী। ওই মাসে মিয়ানমারে পূর্ব এশীয় শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন। এরপর ওই মাসেই অস্ট্রেলিয়ার ব্রিজবেনে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন তিনি। সেখানেই নরেন্দ্র মোদী ভারতের অর্থনীতি নিয়ে তার ভাবনার কথা বিশ্ব ফোরামে প্রথম তুলে ধরার সুযোগ পাবেন। বহুজাতিক এই আয়োজনে চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আরও এক দফা দেখা হবে নরেন্দ্র মোদীর।
এদিকে চীন এরই মধ্যে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আভাস দিয়েছে বছরের শেষ ভাগে প্রেসিডেন্ট জি জিনপিং দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার জন্য ভারত সফরে আসতে পারেন। এর আগেই ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি এক দফা চীন সফর করার কথা রয়েছে। জি জিনপিংয়ের সফরটি হবে তারই বিপরীতে।
পূর্ব এশীয় শীর্ষ সম্মেলন ও জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন এ দুটোতেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর সাক্ষাতের সুযোগ তৈরি হবে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র এক দশকের বেশি আগে নরেন্দ্র মোদীর ভিসায় আরোপিত নিষেধাজ্ঞাটি তুলে নিয়েছে।
এছাড়াও চলতি বছরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর আরও দুটি দ্বি-পাক্ষিক সফর নির্ধারিত রয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি সফর জাপান ও রাশিয়ায়। জাপানের প্রধানমন্ত্রী সিনজো অ্যাবে এ বছরের প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনে অংশ নিতে ভারত আসছেন। দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার ছাড়াও গোটা এশিয়ায় ক্ষমতার মাপকাঠিতে এই দুই দেশের মধ্যে সখ্য ও বন্ধুত্বকে গুরুত্ব দিয়েই দেখা হচ্ছে।
আর পুতিনের ভারত সফরও এরই মধ্যে নির্ধারিত। ভারত-রাশা শীর্ষ সম্মেলনটি এবার ভারতেই হচ্ছে। এরই মধ্যে দুই দেশের মধ্যে সাক্ষরিত হচ্ছে পারমানবিক চুক্তি কুদানকুলাম ৩ এবং ৪। আর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ভারত-রাশিয়া সম্পর্ককে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে উভয় দেশ সে ব্যাপারে সন্দেহের এতটুকু অবকাশ নেই।
এর মধ্যে ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সফর করলে, কিংবা তিস্তা চুক্তি করলে তা হবে ডিপ্লোম্যাটিক ক্যালেন্ডারের বাইরের ঘটনা।