কোটি টাকার স্থাপনা যমুনায় বিলীনের আশঙ্কা

Jamuna যমুনাপ্রতিনিধি, এবিসি নিউজ বিডি, জামালপুরঃ এবার চৈত্র মাস থেকেই যমুনা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। পানি বাড়তে না বাড়তেই পাল্লা দিয়ে ভাঙছে যমুনার তীরবর্তী এলাকা। এ অবস্থা চলতে থাকলে নদীর তীরবর্তী কোটি টাকার স্থাপনাগুলো বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার কুলকান্দি ও গুঠাইল এলাকায় যমুনার বামতীরে ভয়াবহ নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে চলতি বর্ষা মৌসুমে কুলকান্দি মাখন বাজার, গুঠাইল হাট-বাজার, গুঠাইল পাইলং ঘাট, গুঠাইল হাইস্কুল এন্ড কলেজ ও গুঠাইল সিনিয়র মাদ্রাসাসহ আশপাশের দুই সহস্রাধিক বসত-ভিটা, হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমিসহ কোটি কোটি টাকার স্থাপনা যমুনাগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে চরম আতঙ্কে দিনযাপন করছেন যমুনা তীরবর্তী এলাকার মানুষ। সরেজমিন দেখা গেছে, জেলার দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলা সমূহের পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যমুনার তীরে দুই যুগ ধরে ভয়াবহ নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ইসলামপুরের উলিয়া ও গুঠাইল এলাকার পশ্চিমে প্রায় ১৩ কিলোমিটার প্রশস্তের যমুনায় নদী এলাকায় চর আর চরের পর অসংখ্য ছোট-বড় নদীর সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বালুর বস্তা ড্রাম্পিংয়ের নামে ঠিকাদার পারিসা ইন্টারন্যাশনাল ও এম এস কনস্ট্রাকশনের আড়ালে ছায়া ঠিকাদার হিসেবে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতা পাউবোর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে প্রকল্পের বেশির ভাগ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। যে কারণে পশ্চিম জামালপুরের একমাত্র ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান জিলবাংলা চিনিকল, ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জের অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ও হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি যমুনার ভাঙনরোধে ‘রার’ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি কাগজ-কলমেই রয়ে গেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় এ বছরও একটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, একটি কমিউনিটি কিনিক, তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফ্রান্স ও জার্মান সরকারের অর্থায়নে ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কুলকান্দী হার্ড পয়েন্ট, বেলগাছা ও কুলকান্দী ইউনিয়নের শতাধিক ঘরবাড়ি, চিনাডুলী ইউনিয়নের শিংভাঙ্গা, কদমতলী, পশ্চিম বামনা ও গিলাবাড়ী গ্রামের পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রমতে, যমুনার বামতীর সংরক্ষণের জন্য ৪১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বর্তমান সরকারের যমুনা তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় এ বছর দেওয়ানগঞ্জের ফুটানী বাজার, ইসলামপুরের পশ্চিম বামনা ও শিংভাঙা এলাকায় ৯৮ কোটি টাকা ব্যায়ে যমুনার বামতীরে বালির বস্তা ও বণ্টক ডাম্পিং চলছে। নদী ভাঙ্গনের শিকার কুলকান্দি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জুবাইদুর রহমান দুলাল আক্ষেপ করে বলেন, ‘যমুনায় বস্তা ফেলে কি হবে। নদী ভাঙন তো থামে না। আগের বছর বস্তা ফেললে পরের বছরই তার কোনো চিহ্ন পর্যন্ত থাকে না। প্রায় দেড় যুগ ধরে যমুনার বামতীরে প্রায় প্রতি বছরই বালির বস্তা ডাম্পিং করা হচ্ছে। অথচ নদী ভাঙন ঠেকাতে বস্তা ডাম্পিং কোনো কাজেই আসছে না। রাক্ষুসী যমুনার পেটে সরকারের টাকায় বালির বস্তা ফেলে কেবল অফিসার আর ঠিকাদারদের পেট ভরানো হচ্ছে। এটা কোনো অবস্থাতেই মেনে নেওয়া যায় না।’ তিনি জানান, নদী ভাঙন ঠেকাতে ১৯৯০ সালে ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনার বামতীরে কুলকান্দি পয়েন্টে ‘কুলকান্দি রিভেটমেন্ট টেস্ট স্ট্রাকচার’ নির্মান করা হয়। এর পরের বছর গুঠাইল বাজার এলাকায় ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে হার্ড পয়েন্ট নির্মাণ করা হয়। এছাড়াও উলিয়া বাজার এলাকায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ করা হয়। সবশেষে মহাজোট সরকার যমুনার বামতীর সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় ৪১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনায় বিগত তিন বছর ধরে বালির বস্তা ডাম্পিং করছে। তবে এ কার্যক্রম নদী ভাঙন ঠেকাতে শুধু ব্যর্থই হয়নি উল্টো বিগত দিনে নির্মাণ করা কংক্রিটের বাঁধগুলোও নদী ভাঙন থেকে রক্ষা করতে পারেনি। চিনাডুলি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম জানান, বিগত বন্যা মৌসুমের ধারাবাহিকতায় চলতি বন্যায় গুঠাইল হার্ড পয়েন্টসহ চিনাডুলি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ জনপদ ও বেলগাছা এলাকায় ভয়াবহ নদী ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই দ্রুত যমুনার বামতীর সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় গুঠাইল এলাকায় বালির বস্তা ডাম্পিং ও কংক্রিটের বক্স ফেলে নদীভাঙ্গন ঠেকানো জরুরি হয়ে পড়েছে। অন্যথায় চলতি বর্ষা মৌসুমে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী গুঠাইল বাজার, গুঠাইল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও গুঠাইল সিনিয়র মাদ্রাসাসহ আশপাশের দুই সহস্রাধিক বসত-ভিটা ও বহু ফসলি জমি যমুনাগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। সাপধরী ইউনিয়নের নদী ভাঙনের শিকার অসহায় কৃষক সবজল চৌধুরী, আজাহার মণ্ডল ও মোকারম হোসেনসহ কুলকান্দি, সাপধরী, নোয়ারপাড়া, বেলগাছা ও চিনাডুলি ইউনিয়নের শত শত কৃষকের অভিযোগ, যমুনায় অপরিকল্পিতভাবে বালির বস্তা ডাম্পিং করার নামে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতি বছরই সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় করলেও নদী ভাঙন রোধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ