পরিবহন ধর্মঘটে অচল ২৪ জেলা, দুর্ভোগে যাত্রীরা
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ ৭ দফা দাবিতে ময়মনসিংহ ও এর আশপাশের ৮ জেলায় মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। অন্যদিকে ৬ দফা দাবিতে উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলায় তৃতীয় দিনের মতো অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে।। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ২৪ জেলার সঙ্গে সড়কপথে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো এ সংক্রান্ত খবর- ময়মনসিংহ: ঢাকা বিভাগীয় মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকে ৭ দফা দাবিতে ময়মনসিংহ ও এর আশপাশের ৮ জেলায় মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ধর্মঘটের কারণে সড়কপথে বৃহত্তর ময়মনসিংহের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এতে চরম দুর্ভোগের মুখে পড়েছেন যাত্রীরা। বৃহত্তর ময়মনসিংহের নেত্রকোণা জেলায় পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ওপর আনসার সদস্যদের গুলি করার প্রতিবাদে নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক ড.আবুল কালামকে প্রত্যাহার ও হাইওয়ে সড়কে রুট পারমিটবিহীন অবৈধ সিএনজি, অটো রিক্সা, ইজিবাইকসহ ছোট যান বন্ধের দাবিতে এই পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিযেছে ঢাকা বিভাগীয় মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। সংগঠনটির আহ্বায়ক ও এফবিসিসিআই পরিচালক আমিনুল হক শামীম সোমবার দুপুরে নিজেদের যৌথ সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন। এ পরিবহন ধর্মঘটের ফলে বৃহত্তর ময়মনসিংহের সঙ্গে জেলা জামালপুর, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও গাজীপুরের সড়ক পথের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এ ৮ জেলার হাজার হাজার মানুষ। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ময়মনসিংহ শহরের মাসকান্দা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সব কাউন্টার বন্ধ রয়েছে। টার্মিনাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি এনা পরিবহনসহ দূরপাল্লার কোনো বাস। একই অবস্থা শহরের পাটগুদাম ব্রীজ মোড় বাসস্ট্যান্ডেরও। এখান থেকে কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা বা অন্য কোনো রুটে বাস-ট্রাক ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি। এ ব্যাপারে ঢাকা বিভাগীয় মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহবায়ক ও এফবিসিসিআই পরিচালক আমিনুল হক শামীম বলেন, নেত্রকোণা জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার করে সরকার যদি আমাদের দাবিগুলো নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে তবেই এ ধর্মঘট স্থগিত করা হবে। রাজশাহী: মহাসড়কে নসিমন, করিমন, ভটভটি চলাচল ও পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধসহ ছয় দফা দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো মঙ্গলবারও পরিবহন ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সড়কপথে ১৬ জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা। বাসের সঙ্গে বন্ধ রয়েছে মালবাহী ট্রাক ও ট্যাংকলরি। ট্রেন চলাচল করলেও পাওয়া যাচ্ছে না পর্যাপ্ত টিকিট। বাস না পেয়ে কেউ কেউ বিকল্প যানবাহনে বিভিন্ন গন্তব্যে রওয়ানা দেন। অনেককে রেল স্টেশনে ভিড় করতে দেখা গেছে। ছয়দফা দাবি না মানা পর্য ন্ত এ ধর্মঘট চলবে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী বাস-ট্রাক মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারা। সোমবার সন্ধ্যায় রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উত্তরাঞ্চলের পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের নিয়ে বিভাগীয় পর্যায়ের মতবিনিময় সভা কোনো সমঝোতা ছাড়াই শেষ হয়েছে। এর আগে বিকেল ৪টা থেকে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে পরিবহন সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে প্রশাসনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু উভয়পক্ষের আলোচনায় সমঝোতার বরফ না গলায় বৈঠক শেষে পরিবহন সংগঠনের নেতারা ধর্মঘট অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন। ধর্মঘট প্রত্যাহারের জন্য পরিবহন মালিক শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে বসেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দীন আহম্মদ। সভা চলাকালে পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা পর্যায়ক্রমে মহাসড়কে নসিমন করিমন চলাচল ও পুলিশি হয়রানির ফিরিস্তি তুলে ধরেন। এ সময় রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলার জেলা প্রশাসকগণ এসব বন্ধে কী ধরনের ব্যবস্থাগ্রহণ করেছেন তা পরিবহন নেতাদের জানান। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলা মতবিনিময় সভা শেষে বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দীন আহম্মদ শ্রমিকদের দাবিগুলো পূরণের আশ্বাস দিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। কিন্তু রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মুনজুর রহমান পিটার সাফ জানিয়ে দেন, আর কোনো আশ্বাস নয়, তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে। প্রশাসন যদি সত্যিই পরিবহন মালিক শ্রমিকদের দাবিগুলো পূরণে আন্তরিক হয়ে থাকে, তবে সেগুলোর বাস্তব রূপ দেখাতে হবে। প্রসঙ্গত, ছয় দফা দাবিতে পরিবহন ধর্মঘট ডাকে উত্তরাঞ্চলের বাস-ট্রাক মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। পরিষদের দাবিগুলো হচ্ছে- মহাসড়কে নছিমন, করিমন, ভটভটি, পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টরসহ অবৈধ যান চলাচল বন্ধ, সিএনজি, মাহেন্দ্র, থ্রি হুইলার, হিউম্যান হলারের রুট পারমিট-বহির্ভূত এলাকায় চলাচল বন্ধ ও রুট পারমিট প্রদান বন্ধ, ইজারাকৃত বিআরটিসি ও দ্বিতল বাস উপজেলাভিত্তিক চলাচল বন্ধ, ওজন স্কেলের নামে অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধ, বিআরটিএ’র ট্যাক্স টোকেন ও ফিটনেসের বর্ধিত ফি প্রত্যাহার এবং সকল প্রকার পুলিশি হয়রানি বন্ধ করা। এসব দাবিতে রোববার সকাল ৬টা থেকে ধর্মঘট কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।