আগামী বাজেট বাস্তবায়নই মূল চ্যালেঞ্জ
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বর্তমান সরকারের শেষ ও আগামী সরকারের শুরু- এই দুই সময়ে বাস্তবায়ন হবে আসন্ন বাজেট। সঙ্গে রয়েছে নির্বাচনকে সামনে রেখে বাজেটের বড় আকারও। সব মিলে আগামী বাজেট বাস্তবায়নকেই মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদ সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আগামী ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে এবিসি নিউজ বিডিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেছেন।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেক বড় বাজেট প্রস্তাব করছে। এবারের বাজেটের এক-তৃতীয়াংশ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে।
“এই বিশাল এডিপি বাস্তবায়নে ভালো ভালো প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দিতে হবে। প্রকল্পগুলো স্বচ্ছতা ও দক্ষতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করাটা সত্যিই চ্যালেঞ্জিং।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক প্রধান বলেন, “আসন্ন বাজেট বর্তমান সরকার ও আগামী সরকারের সময়ে বাস্তবায়ন হবে। এটি যেমন বাস্তবায়নে অন্তরায় তেমন আসন্ন বাজেটের বড় আকারও একটি সমস্যা। সব মিলে আগামী বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ হবে বাস্তবায়ন।”
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের এই মেয়াদের শেষ বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য খরচ চলতি অর্থ বছরের তুলনায় প্রায় তিনভাগের একভাগ বাড়ছে। প্রায় ৭৪ হাজার কোটি টাকার এডিপিতে বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাত উন্নয়নে সরকার খরচ বাড়াচ্ছে। পদ্মাও থাকছে এই এডিপিতে।
সালেহউদ্দিন বলেন, আসন্ন বাজেটে পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশাল বরাদ্দ রাখায় তা শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতের বরাদ্দ যথাযথ বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
“বিনিয়োগ ও রাজস্ব আয় বাড়াতে সরকারের ওপর ব্যাংকিং খাত ও পুঁজিবাজারসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে গতি আনার চাপ থাকবে। আর রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলে সরকার বাজেটের জন্য অর্থায়নের ঘাটতিতে পড়তে পারে।”
ঘাটতি মোকাবেলায় ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ না নিয়ে রাজস্ব আয় বাড়ানোর সুপারিশ করেন তিনি।
সাবেক গভর্নরের মতে, “ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ যেমন সঙ্কুচিত হয়, তেমনি মূল্যস্ফীতিও বেড়ে যায়।”
এজন্য অপচয় রোধ করে এবং পরোক্ষ কর কমিয়ে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করে তিনি বলেন, তবে করফাঁকি রোধে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের উপর আরোপিত কর্পোরেট কর কমাতে হবে।
তিনি বলেন, “কর্পোরেট ট্যাক্স-এর হার অনেক বেশি হওয়ায় এসব ট্যাক্সের আওতাধীন কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ফাঁকি দেয়। ট্যাক্স রেট কম হলে এই ফাঁকিও কমবে।”
বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারকে কিছু নীতিগত উদ্যোগ নেয়ারও সুপারিশ করেন তিনি।
“পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বিটিআরসিসহ বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে তাদের নীতিতে ধারাবাহিকতা রাখতে হবে।”
সম্প্রতি এসব প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে বলে মনে করেন তিনি।
সালেহউদ্দিন বলেন, বাজেটে বিদ্যুৎসহ সব ধরনের জ্বালানি সাশ্রয়ের পদক্ষেপ এবং কৃষিপণ্যের সহজ বাজারজাতের জন্য গ্রামগঞ্জের সড়কসহ অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে আরো মনোযোগ দেয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি বলেন, সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের যে পরিকল্পনা নিয়েছে তা বাস্তবায়নের জন্য এখাতে আরো বিনিয়োগ দরকার। এখাতের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, আইএসপি ও ইন্টারনেটের সমস্যা সমাধান এবং যৌক্তিক দাম নির্ধারণের ওপর গুরুত্ব দেন তিনি অর্থনীতিবিদ সালেহউদ্দিন আহমেদ