শেখ মুজিব ব্যর্থ রাজনীতিক: তারেক রহমান
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, ‘শেখ মুজিব রাজনীতিক হিসেবে ব্যর্থ ছিলেন এবং জিয়া ছিলেন একজন সফল রাজনীতিক।’ তিনি বলেন, দেশে যেসব গুম-খুন হচ্ছে সেগুলোর দায় শেখ হাসিনা এড়াতে পারেন না।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনের ইলফোর্ডে এক মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় তারেক রহমান এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, শেখ মুজিব গণতন্ত্রের কথা বলে আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত করে বাকশাল গঠনের মাধ্যমে একদলীয় শাসন; জনগণের নিরাপত্তা বিধানের কথা বলে গুম-খুন; বিরোধী দল দমনের জন্য রক্ষীবাহিনী গঠন করে আতঙ্কের জনপদ এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কথা বলে দুর্ভিক্ষ তৈরি করেছিলেন। তিনি বলেন, শেখ মুজিব ৩০ বছর রাজনীতি করার পরও রাজনীতিক হিসেবে ছিলেন ব্যর্থ। অন্যদিকে, জিয়া সেনাবাহিনী থেকে রাজনীতিতে এসে মাত্র পাঁচ বছর রাজনীতি করে সফল রাজনীতিক ছিলেন। জিয়া দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং অর্থনীতিকে দৃঢ় বুনিয়াদের ওপর দাঁড় করিয়েছিলেন।
তারেক রহমান বলেন, জিয়া যেভাবে মাত্র পাঁচ বছরে রাজনীতিতে সফল হয়েছিলেন, একইভাবে বর্তমান সরকারকে সরিয়ে নতুন করে দেশকে সাফল্যের পথে নিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যা করছে, তা শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। আর সে কারণেই ওরা আওয়ামী লীগ, ওরা মানুষ নয়।’ তিনি বলেন, ‘ওরা যদি মানুষ হতো, তাহলে যে দল শেখ মুজিবকে এত কিছু দিল সেই দলকে তিনি মাত্র ১১ মিনিটে হত্যা করতে পারতেন না।’
তারেক বলেন, শেখ হাসিনা পিতার পথ অনুসরণ করে র্যাবকে রক্ষীবাহিনীতে রূপান্তর করে দেশে আতঙ্কের জনপদ তৈরি করেছেন। তিনি বলেন, বিএনপি সন্ত্রাস দমনের জন্য এলিট ফোর্স হিসেবে র্যাব গঠনের পর দেশে শান্তি ফিরে আসায় মানুষ তাকে স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু, বর্তমান সরকার র্যাবকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে একটি ভাড়াটে বাহিনীতে পরিণত করেছে। সে কারণে এই বাহিনী বিলুপ্ত করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
তারেক রহমান সরকারবিরোধী আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য দলের সব নেতা-কর্মীর প্রতি আহ্বান জানান। তবে, দলীয় নেতা-কর্মীরা তাঁকে দেশে ফিরে দল ও আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানালেও তিনি সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কোনো কথা বলেননি। তিনি বলেছেন, ‘আমরা সবাই স্বাভাবিক অবস্থায় দেশে ফিরতে চাই, স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই।’
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, সাবেক এক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের ঘোষণা দিয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে ওই তদন্ত তত্ত্বাবধান করছেন। কিন্তু, গত দুই বছরেও তার সুরাহা হয়নি। এখানে তাহলে তাঁর স্বার্থ জড়িত আছে কি না, সেই প্রশ্ন রেখে তারেক বলেন, শেখ হাসিনার ভাষাতেই বলতে হয় যে ‘ডাল মে কুচ কালা হ্যায়’। তিনি আরও বলেন, একজন অনির্বাচিত সাংসদ নারায়ণগঞ্জে সাত অপহরণের বিষয়টি পাঁচ মিনিটের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন বলে গণমাধ্যমকে বলেছেন। তাহলে প্রধানমন্ত্রী তাঁরে নিজের দলের লোকদের বাঁচাতে পারলেন না কেন? ফেনীর হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের পরপরই বিএনপিকে দোষারোপ করে তদন্ত বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। অথচ, প্রথমেই যাঁরা ধরা পড়েছেন, তাঁরা সব আওয়ামী লীগের লোক।
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারি পর্যবেক্ষকহীন, ভোটারবিহীন ও প্রার্থীবিহীন নির্বাচন হয়েছে। এটি প্রমাণ করে, দেশটিতে যতগুলো নির্বাচন কমিশন ছিল তার মধ্যে বর্তমান নির্বাচন কমিশনারেরা সবচেয়ে অযোগ্য, অপদার্থ ও মেরুদণ্ডহীন। দেশের বর্তমান দুরবস্থার জন্য শেখ হাসিনা যেমন দায়ী, তেমনই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সব কমিশনারও দায়ী। নির্বাচনকে ঘিরে যত মানুষ মারা গেছেন, প্রতিটি মৃত্যুর জন্য এসব কমিশনার শেখ হাসিনার মতোই সমভাবে দায়ী।