নির্দলীয় সরকার প্রশ্নে আপস নয়

fakhrul-460রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্দলীয় সরকার প্রশ্নে বিরোধী দল কোনো ছাড় দেবে না।

বিরোধী দলের দাবি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাকচ করে দেয়ার একদিন পর শুক্রবার বিএনপির মুখপাত্র একথা বললেন।

রাজনৈতিক সঙ্কট অবসানে সংলাপে বিএনপির আগ্রহের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি তিনি সরকার হুঁশিয়ার করে বলেছেন, প্রয়োজনে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ে বাধ্য করা হবে।

সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা নিয়ে দুদিন আগে ফেরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব শুক্রবার উত্তরায় তার বাড়িতে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “দেশের ৯০ ভাগ মানুষ চায়, আগামী নির্বাচন দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হোক। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট- নির্দলীয় অথবা দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন হতে হবে। এ থেকে আমরা বিচ্যুত হইনি।

“সরকারকে বলবো, যদি দল নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়ে আপনার একমত হন, তা হলে এ বিষয়ে সংলাপ হতে পারে। তা না হলে রাজপথের সংগ্রামে নির্দলীয় সরকার অর্জিত হবে।”

গলার ধমনীতে রক্ত চলাচলের জটিলতার চিকিৎসা নিতে গত ১৪ মে চিকিৎসকদের পরামর্শে সিঙ্গাপুর যান ফখরুল।

তিনি জানান, তিনি এখন  অনেকটাই সুস্থ। তবে চিকিৎসা চলছে।

নিজের বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পরোয়ানা, সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন ফখরুল।

সংলাপের ‘প্রত্যাশায়’ বিএনপি

রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে সংলাপের পক্ষে দলের অবস্থান জানিয়ে ফখরুল বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। তাই তারা সঙ্কট নিরসনে সংলাপ চান।

সংলাপ না হওয়ার জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, “সরকার সংলাপ নিয়ে বিভিন্ন কথা বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। একবার বলে তারা সংলাপ করবে, এখনি চিঠি নিয়ে যাচ্ছে। আবার বলে, তারা কোনো সংলাপ করবে না।”

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করেছে বলে অভিযোগ করেন ফখরুল।

“অথচ এই আওয়ামী লীগই একদিন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন করেছে। ওই দাবিতে তারা ১৩০ দিন হরতাল করেছে। এখন ক্ষমতায় গিয়ে বলেছে, নির্দলীয সরকার ব্যবস্থা বৈধ নয়।”

সরকারের উদ্দেশে বিএনপি নেতা বলেন, “আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট- সরকার যদি নির্দলীয় সরকার চান বলে ঘোষণা দেন, তাহলে এর কাঠামো নিয়ে আলোচনা হতে পারে। সংলাপে আগে অবশ্যই সরকারকে বলতে হবে, তারা নির্দলীয় সরকারের ব্যবস্থা মেনে নেবেন।”

নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা না মানলে আপনারা কী করবেন- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করছি। আলোচনা না হলে জনগণ তার রাস্তা ঠিক করে নেবে।”

সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞার পর বিএনপির প্রায় নীরব ভূমিকা নিয়ে অনেকে বলেছেন, তারা আন্দোলন থেকে পিছিয়ে গেছেন।

একথা নাকচ করে ফখরুল বলেন, “রাজনীতিতে এক পা এগোনো, দুই পা পেছানো একটি কৌশল। তার অর্থ এই নয় যে আমরা আমাদের লক্ষ্য নির্দলীয় সরকারের দাবি থেকে সরে গেছি।”

চার সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নেয়ার সুযোগ নেই।

“যারা নির্বাচন করছেন, তারা দলীয় ব্যানারে কেউ নির্বাচন করছেন না,” বলেন তিনি।

‘হরতাল বন্ধের উদ্যোগের’ প্রতিক্রিয়া

হরতালে নৈরাজ্য ঠেকাতে ক্ষতিপূরণ আইন করার কথা ভাবা হচ্ছে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে ফখরুল বলেন, “বিশ্বের কোনো গণতান্ত্রিক দেশে হরতাল-ধর্মঘট কিংবা প্রতিবাদ জানানোর কর্মসূচি বন্ধ করতে আইন আছে কি না, আমার জানা নেই।”

এর মধ্য দিয়ে সরকার জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করে একদলীয় শাসনের দিকে এগোচ্ছে বলে দাবি করেন বিএনপি নেতা।

“একদলীয় রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ভিন্ন মতের কোনো সুযোগ থাকে না, মানুষের মৌলিক অধিকার থাকে না। সেখানে হরতাল কিংবা ধর্মঘট নিষিদ্ধ হতে পারে।”

“স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট, আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের ওপর চাপিয়ে দিতে চায়।”

রাজধানীতে সভা-সমাবেশের অনুমতি না দেয়ার সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, “আগে আমরা পল্টন ময়দান ও মুক্তাঙ্গনে সভা-সমাবেশ করতে পারতাম। তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নয়া পল্টনে আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করা যেত, তাও এখন নিয়ন্ত্রিত করে ফেলেছে।”

“কেবল তাই নয়, সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। বিরোধী মত ও কণ্ঠকে রুদ্ধ করে দেয়া হচ্ছে। পত্রিকার সম্পাদককে গ্রেপ্তার করে নানাভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে।”

সংসদ সদস্যসহ বিরোধী দলের কারাবন্দি নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির মুখপাত্র।

‘মুচলেকা দেননি’ তারেক

দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান মুচলেকা দিয়ে বিদেশি চিকিৎসার জন্য গেছেন বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের বক্তব্য নাকচ করেন ফখরুল।

“স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে মুচলেকার কথা বলেছেন, তা সঠিক নয়। তারেক রহমান একজন রাজনীতিবিদ। রাজনীতিতে মুচলেকা বলে কিছু নেই।”

পাঁচ বছর ধরে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত তারেক গত সপ্তাহে লন্ডনে বিএনপির এক সভায় যোগ দেন। ওই সভায় যোগ দিয়ে তিনি ‘মুচলেকার’ শর্ত ভঙ্গ করেছেন বলে বৃহস্পতিবার বলেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর।

ওই সভায় যোগ দেয়ার পর মুদ্রা পাচারের একটি মামলায় তারেককে দেশে ফেরাতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।

ফখরুল বলেন, “তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে একচি মামলাও সরকার আজ পর্যন্ত প্রমাণ করতে পারেনি।”

বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন, জিয়া পরিবারকে হেয় করতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ওই মামলাগুলো করা হয়েছে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ