সিগারেট কোম্পানির লবিস্টরা সক্রিয়
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ গারেট কোম্পানিগুলো তাদের স্বার্থ রক্ষায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তদবিরের জন্য `শক্তিশালী লবিস্ট’ নিয়োগ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।
শনিবার তামাকের বিজ্ঞাপন, প্রণোদনা ও পৃষ্ঠপোষকতা বিষয়ে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য যেমন আন্দোলন রয়েছে। তার বিপরীতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তদবিরের জন্য তামাক কোম্পানি লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছে।”
তামাকবিরোধী আন্দোলনের বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীদের উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “তামাক নিয়ন্ত্রণে আমরা একটি আইন পাস করেছি। তবে এই আইন করতে আমাদেরকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। মনে রাখতে হবে, সিগারেটের এই বেনিয়া গোষ্ঠী কম শক্তিশালী নয়।
“সরকারের সদিচ্ছার কারণে তাদের তদবিরে কোন কাজ হয় নাই। সাধারণ মানুষদের দিকে লক্ষ্য রেখে সরকার শেষ পর্যন্ত আইনটি পাস করেছে।”
তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে শিগগিরই একটি বিধিমালা করা হবে বলেও জানান তিনি।
“আমরা এখন বাজেট নিয়ে ব্যস্ত আছি। বাজেটের ব্যস্ততা কমলে আমরা আইনের বিধিমালা প্রণয়নে হাত দেব। শিগগিরই বিধিমালা প্রণয়ন করব।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ধূমপানের কারণে প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়, ২০৩০ সাল নাগাদ যা ৮০ লাখে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এদের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে চারজনেরই মৃত্যু হবে নিম্ন বা মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে।
ধূমপানের কুফল বর্ণনা করতে গিয়ে নিজের ‘ধূমপায়ী জীবনের’ অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “এক সময় প্রচুর সিগারেট খেতাম। প্রায় ১২ বছর আগে আমি সিগারেট ছেড়ে দেই। আমার সিগারেট ছাড়ার একটি মজার কাহিনী আছে। একদিন আমার তিন মেয়ে এসে বললো- বাবা তুমি যদি সিগারেট খাও; তাহলে আমরাও খাব। তারা খুব সিরিয়াসলি এটা বলল। এরপর আর খেতে পারিনি। সেই যে ছেড়েছি আর একদিনের জন্যও ধরিনি।”
কামরুল মনে করেন, দারিদ্র্য, কর্মহীনতা, বেকারত্ব- ইত্যাদির কারণে হতাশা থেকে মানুষ সিগারেট ধরে।
“এটা একটা নেশা। এই নেশা পরে অন্য নেশার দিকে নিয়ে যায়। শেষে এটা পরিবার ও সমাজকে ধ্বংস করে দেয়।”
দেশে তামাকবিরোধী আন্দোলন অনেক দূর এগিয়েছে মন্তব্য করে কামরুল বলেন, এখন গণপরিবহন বা অফিস আদালতে মানুষ সিগারেট খায় না।
“তবে শহরের বস্তি এবং গ্রামের মানুষ অনেকেই এখনো তামাক ব্যবহার করে। অনেকে গুল ও জর্দা ব্যবহার করে। এটাও সমান ক্ষতিকর। আমাদের দেশের হুজুররা সিগারেট খায় না। কিন্তু সাদা-জর্দা খেয়ে তারাও তামাক ব্যবহার করে। সব কিছুই ছাড়তে হবে।”
মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে তামাকবিরোধী আন্দোলনের কর্মী নজরুল হক বলেন, অনেককে ‘সরকারি ইউনিফর্ম’ পরে ধূমপান করতে দেখা যায়। এটা বন্ধের জন্য বিধিমালায় বিষয়টি জোরালোভাবে আসা দরকার।
তামাকবিরোধী নারী জোটের নেত্রী শাহিনুর বেগম বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো নানাভাবে তত্পরতা চালাচ্ছে। সর্বশেষ তারা পোশাক খাতকে ‘টার্গেট’ করেছে। পোশাক শ্রমিকরা যেসব স্থানে থাকেন, সেখানে বিক্রি বাড়াতে বিক্রয়কর্মীও নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সাবেক সচিব এম আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে এই সভায় অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সাংসদ ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা বক্তব্য রাখেন।