বাজেট বস্তবায়ন নিয়ে এরশাদের সংশয়

ershad এরশাদসিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ চলতি ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি বলেন, ‘বাজেট পেশের পর আমি প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলাম, এ যাবতকালের মধ্যে সর্ববৃহৎ আয়তনের এই বাজেট বাস্তবায়ন হবে সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আয়তনের দিক থেকে এটা যেমন পূর্বেকার থেকে সর্ববৃহৎ, আবার প্রবৃদ্ধি, ঘাটতি কিংবা আয়ের লক্ষ্যমাত্রার দিক থেকেও রেকর্ড গড়েছে। এ ধরনের একটি বাজেট বাস্তবায়নে সরকার কতটুকু সফল হবে তা নিয়ে আমি আশংকা ব্যক্ত করেছিলাম।’ শনিবার দুপুরে প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে দলীয় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। এরশাদ বলেন, আমি বলেছিলাম- আমরা কোন বৃহৎ বাজেটের সমালোচনা করি না। বাজেটকে উচ্চাভিলাষীও বলতে চাই না। কারণ অভিলাস না থাকলে অগ্রগতি আসে না। আমরা সেই বাজেটকেই একটি সফল বাজেট বলবো, যে বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব।’ ‘এই বাজেট একটি উচ্চাভিলাষী বাজেট’ অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘উচ্চাভিলাষে কোন দোষ নেই। কিন্তু বাস্তবে দেখেছি এটি একটি স্বপ্নবিলাসী বাজেট। এই স্বপ্ন কতটুকু সফল হবে তা নিয়ে আমাদের যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।’ এরশাদ বলেন, ‘এবার আড়াই লক্ষাধিক কোটি টাকার বিশাল বাজেট পেশ করা হয়েছে। এখানে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সুউচ্চ। কিন্তু লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথ স্পষ্ট নয়। বাজেটে উচ্চাভিলাষ থাকতেই পারে। কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন কতদূর সম্ভব সেটাই দেখার বিষয়। এখানে সাহসী লক্ষ্য রয়েছে কিন্তু ভীত রয়েছে নড়বড়ে।’ অর্থমন্ত্রীর ঘাটতি পূরণের বিষয়টি স্বপ্নবিলাসী বলে মনে হয় উল্লেখ করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘কারণ এ যাবতকালের মধ্যে এক বছরে বৈদেশিক সাহায্য হিসেবে ২৪ হাজার কোটি টাকা বা ৩০০ কোটি ডলার পাওয়া যায়নি। সুতরাং বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থ না পেলে সরকারকে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ গ্রহণ করতে হবে। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে বেসরকারি উদ্যোক্তরা কম ঋণ পাবেন। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ নিলে নতুন করে অর্থ ছাপাতে হবে। এতে বাড়বে মূল্যস্ফীতি।’ তিনি বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী মূল্যস্ফীতির ৬ শতাংশ রেখেছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ নেওয়া হলে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ ধরে রাখা যাবে না। এখানে অর্থমন্ত্রী জাতিকে একটি স্বপ্ন দেখিয়েছেন। যে স্বপ্ন সফল হওয়া সম্ভব নয়।’ প্রস্তাবিত বাজেটে কর্মসংস্থানের সুস্পষ্ট রূপরেখা নেই উল্লেখ করে এরশাদ বলেন, ‘কর্মসংস্থান ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্প। এখানে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করে। যার অধিকাংশই নারী শ্রমিক। বাজেটে কথার সুন্দর ফুলঝুরি আছে। কিন্তু তৈরি পোশাক শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার রূপরেখা নেই।’ তিনি বলেন, ‘বাজেটে গত বছরে ঘটে যাওয়া তাজরিন গার্মেন্টস কিংবা রানা প্লাজার মর্মান্তিক ঘটনার কোনো উল্লেখ নেই। কিভাবে তৈরি পোশাক শিল্পের নিরাপত্তা বাড়ানো যাবে এবং বিশ্ব বাজারে কিভাবে তৈরি পোশাকের রফতানি বাড়ানো যাবে তার কোনো দিকনির্দেশনা নেই এই বাজেটে। অন্যদিকে, বিভিন্ন কারণে দেশের দুই শতাধিক গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে আছে, শ্রমিকরা বেকার হচ্ছে, শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ আছে। সে ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীর কোনো বক্তব্য নেই।’ এইচএম এরশাদ বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, প্রবাসী আয় কমে গেছে। আমরা জানি প্রবাস আয় ও রফতানি আয় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান উৎস। প্রবাসে শ্রমবাজার কমে আসার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। এই বাজেটে শ্রমবাজার সৃষ্টির কোনো পরিকল্পনা নেই।’ তিনি বলেন, ‘বাজেটে যত উচ্চ আশাই ব্যক্ত করা হোক না কেন, যদি দেশে সুশাসন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং দেশে গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটানো না যায় তবে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না। উন্নয়ন ও সুশাসন অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। উন্নয়নের পূর্বশর্তই হচ্ছে সুশাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা।’ এরশাদ বলেন, ‘দেশে যদি সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, হত্যা, বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ড ঘটতেই থাকে তাহলে বৈদেশিক বিনিয়োগ যেমন শূন্যের কোঠায় চলে যাবে, তেমনি অভ্যন্তরীন বিনিয়োগও ব্যহত হবে।’ তিনি বলেন, ‘গত বছরের শেষের দিকে ৩-৪ মাসের সহিংসতার কারণে ১১ হাজার কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যা ১% জিডিপির সমান। এই ঘটনা না ঘটলে হয়তো প্রবৃদ্ধি ৭%-এ উন্নীত হতো।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই দারিদ্রমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত, টেন্ডারবাজিমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত একটি নিরাপদ বাংলাদেশ এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর একটি নির্দেশিকা হচ্ছে জাতীয় বাজেট। সেই বাজেট উচ্চাভিলাষী হোক আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু স্বপ্নবিলাস দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করা হোক আমরা তা চাই না।’ বাজেট কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে তার সুস্পষ্ট পরিকল্পনা জাতিকে অবহিত করে তারপর বাজেট পাশ করার দাবিও জানান সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ