গ্যালারিতে বসে মেসিদের উৎসাহ দেবো: ম্যারাডোনা
স্পোর্টস ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বিশ্বকাপ জ্বরে কাঁপছে পুরো বিশ্ব। সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার ডিয়েগো ম্যারাডোনাও বাদ যান কিভাবে? এবিসি নিউজ বিডি’র পাঠকদের জন্য ম্যারাডোনার একটি কলাম তুলে ধরা হলো। বিশ্বকাপের সবচেয়ে ভালো দিকটা কি জানেন? বিশ্বকাপ এলেই সবার আবার মনে পড়ে যায়, পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি উচ্চতার ডিয়েগো আর্মান্ডো ম্যারাডোনা নামের একটা লোককে, আর সে কী করেছিলো। আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ খেলাটাই ছিলো আমার কাছে স্বপ্ন। আর বিশ্বকাপের শিরোপাটা মাথার ওপর উঁচিয়ে ধরতে পারা তো আরো বড় স্বপ্নের ব্যাপার। আমি ভাগ্যবান যে সেটা আমি করতে পেরেছিলাম, তাও আবার অধিনায়ক হিসেবে। মেক্সিকো, আমি কখনো তোমাকে ভুলব না। অ্যাজটেকা, আর্জেন্টিনা কখনোই তোমাকে ভুলতে পারবে না। ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলটা যখন ঘোষণা করেন সিজার লুই মেনত্তি, তখন আমি সেই দলে জায়গা পাইনি। সেটা ছিল আমার জন্য এক কষ্টের রাত। আমার বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর, আর আমি খুব করে চাইছিলাম দেশের মাঠে হতে যাওয়া বিশ্বকাপের সঙ্গে কোনোভাবে সংশ্লিষ্ট হতে। প্রত্যাখ্যাত হয়ে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম, ওটা ছিল আমার জীবনের প্রথম নির্মম শিক্ষা। আমি বুঝেছিলাম, নিজের সবটুকু সামর্থ্য ঢেলে দিলেও সব সময় সব কিছু পাওয়া যায় না। সারারাত আমি কেঁদেছিলাম, হ্যাঁ সারারাত। ওই রাতটা এমনকি আমার জন্য ১৯৯৪ সালের সেই কালো রাতের চেয়ে তিক্ততায় ভরা ছিল, যেদিন ওরা ঘোষণা করেছিল যে আমি নাকি ডোপ টেস্টে পজিটিভ হয়েছি। দুটিই কষ্টকর ছিল, কিন্তু যেদিন আমি দল থেকে বাদ পড়ি, সেটা ছিল একেবারে সহ্যের বাইরে। মনে হচ্ছিল যেনো আমার সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। মেনত্তি কী বলছিলেন সেটা আমি বুঝতে পারছিলাম না, কী বোঝাতে চেষ্টা করছিলেন সেটাও বোঝার চেষ্টা করছিলাম না। সেদিনই আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, অনেকগুলো বিশ্বকাপে খেলবো। সেটা আমি করেছিলাম, ১৯৮২, ১৯৮৬, ১৯৯০ এবং ১৯৯৪ চারটি বিশ্বকাপে আমি খেলেছি, তার মধ্যে একটা জিতেছি আর একটায় হেরেছি ফাইনালে। এর মধ্যে শেষটিতে, আমি যখন আর্জেন্টিনাকে যত দূর সম্ভব নিয়ে যেতে প্রস্তুত ছিলাম, ব্ল্যাটার আর হ্যাভেলাঞ্জদের ভাবনায় ছিল অন্য কিছু। নিজে কোনো দোষ না করলেও আমাকে লাথি মেরে বের করে দেওয়া হয়েছিলো বিশ্বকাপ থেকে। তবে অনেক চেষ্টা করেও বিশ্বকাপের ইতিহাস থেকে আমার নামটা ওরা মুছে দিতে পারেনি! মেনত্তিকে আমি কখনো ক্ষমা করতে পারিনি। তবে একইসঙ্গে এ কথাও সত্যি, তাকে আমি কখনো ঘৃণাও করিনি। আমার ক্যারিয়ারকে সঠিক পথে রাখায় তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে, তার অধীনেই নিজের প্রথম বিশ্বকাপটা খেলেছি আমি। স্পেনের অভিজ্ঞতা অবশ্য খুব হতাশার ছিল। আমাকে কখনো ডান দিক থেকে কখনো-বা বাঁ দিক থেকে লাথি মারা হচ্ছিল, আর আমি মাথা ঠিক রাখতে না পারায় ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচে লাল কার্ড দেখতে হয়। তবে ওই ঘটনাটা চার বছর পরে মেক্সিকো বিশ্বকাপ খেলতে নামার সময় আমাকে আরো দৃঢ়সংকল্প করে তুলেছিল। কাজটা অবশ্য মোটেই সহজ ছিল না, বিশেষ দলে যখন ছিলেন দানিয়েল প্যাসারেলা। ১৯৭৮ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের কিছু নিজস্ব বিষয় ছিল। নতুন কোচ কার্লোস বিলার্দো আমাকে অধিনায়ক করেছিলেন, হয়তো প্যাসারেলার পক্ষে সেটা হজম করা কষ্টকর ছিল। মেক্সিকো পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে গিয়েও তিনি কোনো ম্যাচ না খেলেই ফিরে এসেছিলেন। আমাদের জন্য অবশ্য সেই অভিযাত্রাটা কেটেছিল দুর্দান্ত। দলের মনোবল ছিল তুঙ্গে, পরস্পরের জন্য আমাদের সহমর্মিতা ছিল, দুনিয়ার সবচেয়ে কাঙ্খিত শিরোপাটা জিততে আমরা সবাই মিলেমিশেই পরিশ্রম করছিলাম। অধিনায়ক হিসেবে আমি চেষ্টা করেছি সামর্থ্যর সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে। পাঁচটি গোল করেছিলাম, তার মধ্যে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করা দুটি গোল আমার হৃদয়কে সবচেয়ে বেশি করে ছুঁয়ে যায়। আর ফাইনালের সেই চূড়ান্ত পাসটি, যখন দেখেছিলাম বুরুচাগা তার দৌড়টা শুরু করল আর বলটাকে লক্ষ্যে পাঠাল, সেটাও। সেই ১৯৮৬ সাল থেকেই সবাই আর্জেন্টাইনদের ফুটবল প্রতিভার ওপর আস্থা রেখেছে। কিন্তু আমরা আর বিশ্বকাপ জিততে পারিনি। খুব কাছাকাছি গিয়েছিলাম ১৯৯০ সালে, আমরা ফাইনালে উঠেছিলাম আর আমাদের কাছ থেকে ট্রফিটা ছিনিয়ে নিয়েছিল রেফারি। চার বছর পর আমার নিষেধাজ্ঞা দলকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছিল, সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি আমরা। আর পরের চারবার ভাগ্য আমাদের পক্ষে ছিল না। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় আমি আবার সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করেছিলাম। কিন্তু জার্মানরা প্রায় নিখুঁত একটা ম্যাচ খেলেছিলো, আর আমাদের রক্ষণভাগ তাদের পাল্টা আক্রমণগুলো সামাল দিতে পারেনি সময়মতো। কোচ হিসেবে এর দায়টা তো আমাকেই নিতে হবে। তবে আমি চেয়েছিলাম প্রতিভাবান এই ছেলেগুলোর সঙ্গে আরো কিছুদিন কাজ করতে। শুরুতে আমাকে বলাও হয়েছিল যে আমি থাকছি, কিন্তু আর্জেন্টাইন ফুটবল ফেডারেশন চায়নি আমি থাকি। যাই হোক, আলবিসেলেস্তেদের জন্য সব সময় শুভ কামনা থাকবে আমার, আমি সব সময় সমর্থন করে যাবো আমার দেশকে। ব্রাজিলে গ্যালারিতে বসে মেসিদের উৎসাহ দেব। আলেহান্দ্রো সাবেইয়ার হাতে দারুণ একটা দল আছে, বাছাইপর্বেও ওরা প্রায় নিখুঁত খেলে শেষ করেছে গ্রুপের শীর্ষ দল হিসেবে। আমাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বিদের দেশ থেকে বিশ্বকাপ জিতে ফিরতে পারলে তার চেয়ে বড় কিছু আর হতেই পারে না। সূত্র-কালের কণ্ঠ।