ঢাকায় ফরমালিনযুক্ত খাদ্য প্রবেশ করবে না: ডিএমপি
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ আগামী ১১ জুন রাত ৮টার পর থেকে রাজধানী ঢাকায় ফরমালিনযুক্ত খাদ্য প্রবেশ করবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বেনজির আহম্মেদ। তিনি বলেন, ‘মৌসুমী ফলসহ খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন রোধে ঢাকার আটটি প্রবেশ পথে চেকপোস্ট বসাচ্ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।’ রোববার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি। ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘খাদ্যে ফরমালিনের মত বিষ মেশানো বন্ধ করা বর্তমান সময়ে বিশাল চ্যালেঞ্জ। এরা সামাজিক গণহত্যা করছে। এদের কঠোর হস্তে দমন করার সময় এসেছে। এ জন্য দরকার সামাজিক আন্দোলন।’ উৎপাদনকারী, পরিবহনকারী, পাইকারী বিক্রেতা এবং খুচরা বিক্রেতাদের প্রতি খাদ্যে ফরমালিন না মেশানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা অনুরোধ করবো উৎপাদনকারীরা খাদ্যে ফরমালিন নামক বিষ মেশাবেন না, পরিবহনকারীরা তা পরিবহন করবেন না, আড়ৎদাররা আড়তে জমা করবেন না এবং খুচরা বিক্রেতারা এসব অননুমোদিত কেমিক্যালযুক্ত ফল বিক্রয় করবেন না।’ মধু মাসে আটটি প্রবেশ পথে চেকপোস্ট বসানোর উদ্দেশ্য সম্পর্কে কমিশনার বলেন, ‘খুচরা বিক্রেতা আড়ৎদারের ওপর দোষ চাপান। আড়ৎদার পরিবহনকারীর ওপর; পরিবহনকারী উৎপাদনকারীর ওপর দোষ চাপান। আমরা প্রবেশ পথে চেকপোস্টের মাধ্যমে জানতে চাই আসলে কে দায়ী।’ তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিভাগীয় প্রশাসন ও বিএসটিআই’র সহযোগিতায় চেকপোস্ট পরিচালিত হবে। ফরমালিনযুক্ত ফল পাওয়া গেলে সেখানেই তা ধ্বংস করা হবে।’ কোনো পক্ষই যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য কমিশনার বলেন, ‘আমরা আশা করবো বুধবার থেকে ঢাকায় কেমিক্যালমুক্ত ফল আসবে। আর তাতে আমাদের কোনো ফল ধ্বংস করতে হবে না।’ স্বীকৃত প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করে ফল সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর মানুষকে উজ্জীবিত করবে বলে ও আশা প্রকাশ করেন তিনি। ঢাকার যেসব প্রবেশ পথে চেকপোস্ট বসানো হবে সেগুলো হলো- পোস্তগোলা ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী থানাধীন সাইনবোর্ড, ডেমরা চৌরাস্তা, বাবুবাজার ব্রিজ, সদরঘাট/ ওয়াইজঘাট, গাবতলী পর্বত সিনেমা হলের সামনে, আব্দুল্লাহপুর ব্রিজ ও ধউর ব্রিজ। সংবাদ সম্মেলনে ডিএমিপর অতিরিক্ত কমিশনার (লজিস্টিকস) আব্দুল জলিল মণ্ডল, অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) আব্দুল জলিল, অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মিলি বিশ্বাসসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ভেজালবিরোধী চলমান অভিযানের ওপর তথ্য সম্বলিত একটি ভিডিও প্রদর্শনী দেখানো হয়। ভিডিও প্রদর্শনী থেকে জানা যায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জনস্বাস্থ্যের প্রতি হুমকি হিসেবে চিহ্নিত ভেজাল ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ২১ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। চলমান অভিযানে যে সকল ফল ধ্বংস করা হয়েছে তাতে ৩.৫ থেকে ৪৬.০০ পিপিএম মাত্রায় ফরমালিন পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন গড়ে ১.৫ থেকে ১৪ মিলিগ্রাম বা ০.০৩ থেকে ০.১৫ পিপিএম মাত্রা পর্যন্ত ফরমালিন গ্রহণ করতে পারেন। অধিক মাত্রায় ফরমালিন গ্রহণ করলে মানবদেহ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, কিডনি বিকল হয়, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে সমস্যা দেখা দেয়, চোখের কর্ণিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং দৃষ্টি শক্তি হ্রাস পায়, যার পরিণাম অকাল মৃত্যু। বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্দি করে ফরমালিনযুক্ত ফল, মাছ ও তরকারি বিক্রি, খাদ্যে ভেজাল দেওয়া, অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে খাবার সংরক্ষণ, পঁচা ও বাসি খাবার বিক্রি, ভেজাল গুড়া মসলা তৈরি ও বিক্রি, নকল খাদ্য জাতীয় দ্রব্য তৈরি ইত্যাদি ক্ষেত্রে অভিযান পরিচালনা করা হয়। ইতোমধ্যে মিরপুর-১ শাহআলী মার্কেট, ফকিরাপুল মাছ বাজার, কাপ্তান বাজার, শান্তিনগর বাজার, উত্তর ও মধ্যবাড্ডা বাজার, নিউমার্কেট কাঁচা বাজার, গুলশান-১ ডিসিসি মার্কেট, ধানমন্ডি স্টার বেকারি ও কাবাব ঘর, মহাখালী কস্তরী, লাকী ও আল-ইসমাঈল হোটেল, হাতিরপুল ঢাকা ফুড, মগবাজার আগোরা সুপার স্টোর, চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, মালিবাগ ও খিলগাঁও রেলগেট মাছ বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার ও কাজী পাড়া মসজিদ মার্কেট বাজারসহ আরও কিছু এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।