আবারও ডিগবাজির পথ খুঁজছেন এরশাদ

ershadরিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ আবারও ডিগবাজির পথ খুঁজছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দেশের রাজনীতিতে এরশাদের উল্টো পথে হাঁটা নতুন কিছু নয়। সাধারণ মানুষের কাছে তিনি অবিশ্বস্ত এক রাজনীতিক। তার কথার সঙ্গে কাজের মিল নেই। সুযোগ বুঝে সিদ্ধান্ত নেন। সুযোগের আশায় সিদ্ধান্ত পাল্টান। এরশাদ আসলে কার? তা তিনি নিজেই জানেন না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এরশাদের ভূমিকায় এবিসি নিউজ বিডিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন কথাই বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বুধবার লালমনিরহাটে এক জনসভায় এরশাদ দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া সম্পর্কে বলেছেন, আমি বলেছিলাম সব দল না এলে নির্বাচনে অংশ নেব না, আমি কথা রেখেছি। তাই আমি বা আমার ভাইসহ ২৬০ জন যারা আসল জাতীয় পার্টি করে তারা নির্বাচনে অংশ নেয়নি। আমার দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল, আমাকে ছাড়া। তাছাড়া এ নির্বাচনের কোনো মূল্য নেই। তিনি আরো বলেন, আমি কিভাবে এমপি হলাম তা নিজেই জানি না। আমি ভোট করিনি, অথচ লালমনিরহাট-১ আসনে আমাকে প্রার্থী বানিয়ে ৫ হাজার ভোট দিয়ে অপমাণিত করেছে। তাই ভবিষ্যতে আমি এর জবাব দেব। আমি অসুস্থ ছিলাম না, অথচ ভোটের সময় আমাকে অসুস্থ বানিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে নির্বাচনের পর হাসপাতাল থেকে এসে বিভিন্ন সময় এরশাদ বলেছেন, জাতীয় পার্টি একটি নির্বাচনমুখী দল। অতীতে জাতীয় পার্টি সব নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় নির্বাচনের বিকল্প নেই। বিএনপি নির্বাচনে না এসে ভুল করেছে। অথচ এরশাদ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগ থেকেই বলে আসছিলেন সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না। কোনো পাতানো নির্বাচনে অংশ নিয়ে জীবনের শেষ সময়ে তিনি ‘দালাল’ হয়ে মরতে চান না। সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনে গেলে মানুষ তাকে থুতু দেবে। হাসিনার সঙ্গে বেহেস্তে যেতে দেওয়া হলেও তিনি রাজি হবেন না। আল্লামা শাহ আহমদ শফীর দোয়া নেওয়ার পর মহাজোট ছাড়ার ঘোষণাও দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘চরম অবিশ্বস্ত’ হিসেবে খ্যাত এরশাদ চমক দেখালেন আওয়ামী লীগের কথিত সর্বদলীয় সরকারের যোগদানের মধ্য দিয়ে। সর্বশেষ চমক দেখালেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে। বিশ্লেষকদের ধারণা, এরশাদ মনে করে যেকোনো সময় বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে দেশে সরকার বিরোধী আন্দোলন আবার দানা বাঁধতে পারে। পতন হতে পারে সরকারের। এজন্য সরকারে থেকেও ভবিষ্যতের আশায় সরকারি বিরোধী শক্তির আনুকুল্যের আশায় ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সমালোচনা করছেন। গত ১৬ নভেম্বর এরশাদ বলেছেন, নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারে থাকলে জাতি আমাকে বেঈমান বলবে। আবার নির্বাচনে অংশ না নিলেও হাসিনা সরকারের পতন হবে না। এ সঙ্কট সমাধানের পথ খুঁজছি। ২১ অক্টোবর এরশাদ বলেন, বিএনপি নির্বাচনে না এলে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ আলাদাভাবে নির্বাচন করবে মর্মে ২০ অক্টোবর রাতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের দেওয়া বক্তব্যকে ভিত্তিহীন ও অসত্য দাবি করেন এরশাদ। তিনি বলেন, কাউকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য জাতীয় পার্টি নির্বাচন করবে না। ২০০৬ সালের নির্বাচনের আগেও দেশের মানুষ এরশাদের ‘ডিগবাজি’ চরিত্রের প্রমাণ পেয়েছে। সে সময়েও এরশাদ চারদলীয় জোটে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে মহাজোটে নাম লিখিয়েছিলেন। ২০০৬ সালে এরশাদের যে রাজনৈতিক কৌশল ছিল তার চরিত্র এতটুকু বদলায়নি। ওই বছর ২৭ জুলাই রাতে এরশাদের বাসভবনে প্রেসিডেন্ট পার্কে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব তারেক রহমানের সঙ্গে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। পরদিন এরশাদ চারদলীয় জোটে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং ১৪ দলের শরিক বিভিন্ন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে নানারকম কথা বলেন। তিনি শেখ হাসিনাকে দুর্নীতিপরায়ণ হিসেবে অবহিত করেন এবং তার ওপর নূর হোসেনের খুনের দায় চাপান। আর বিএনপির রাজনৈতিক আদর্শ এবং দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব তারেক রহমানের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তবে বছরের শেষ দিকে তিনি মহাজোটের সঙ্গে গাটছড়া বাধেন। এরপর থেকে গত ৭ বছর এরশাদ মহাজোটের বড় সুবিধাভোগী চরিত্র। হঠাৎ করে এরশাদ কেন ভোল পাল্টালেন এমন প্রশ্নের জবাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক(সুজন) এর সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, নির্বাচনের সময় এরশাদের অংশগ্রহণ করা না করা নিয়ে কারসাজি ঘটেছে। তবে এরশাদ সব সময় সুযোগ সন্ধানী। ডিগবাজিতে চ্যাস্পিয়ন। তাই মাঝে মধ্যে কিছু বক্তব্য দিয়ে মাঠ রাখতে চায়। এ বিষয়ে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, বয়সের কারণে এরশাদ ভারসাম্যহীন। তাকে গুরুত্ব না দেওয়াই ভালো।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ