সুন্দরবনে ৫০ জেলে অপহরণ
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, বাগেরহাটঃ সুন্দরবনে দস্যুরা জেলে বহরে পৃথক হামলা চালিয়ে মুক্তিপণ আদায়ে ৫০ জন জেলেকে অপরহণ করে নিয়ে গেছে। সুন্দরবনের বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলাধীন শেলা নদীর লথিমারার চর ও আড়–য়াবয়া এলাকায় বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত বনদস্যুরা জেলেদের ওপর এ হামলা চালায়। অপহরণের পাশাপাশি এসময় দস্যুরা ১৫ লাখ টাকার মাছ ও জাল লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় দস্যুদের হামলায় তিন জেলে আহত হয়েছেন। আহত জেলেদের স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। অপহৃত জেলেদের উদ্ধার ও দস্যুদের ধরতে কোস্টগার্ড মংলা পশ্চিম জোন ও বন বিভাগের সদস্যরা অভিযান চালাচ্ছে। সুন্দরবন থেকে ফিরে আসা জেলেরা জানান, দুটি দস্যুবাহিনীর সদস্যরা বৃহস্পতিবার ভোরে সুন্দরবনের শেলা নদীর লথিমারার চর থেকে ১৫ জন ও গভীর রাতে আড়ুয়াবয়া এলাকা থেকে ৩৫ জন জেলেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। অপহৃত ৫০ জেলের মধ্যে ৩৫ জনের বাড়ি বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার উত্তর রাজাপুর গ্রামে। দস্যুরা বেধড়ক মারপিট করে বেল্লাল মীর (২৩), বাদশা হাওলাদার (৪০) ও হালিম হাওলাদার (৩৫) নামে তিন জেলেকে আহত করে। আহত জেলেদের বাড়ি ওই গ্রামে। অপহৃত জেলেদের মধ্যে যে আট জনের পরিচয় পাওয়া গেছে তারা হচ্ছেন, শরণখোলা উপজেলার উত্তর রাজাপুর গ্রামের ওবায়দুল (২৪), কামাল হোসেন (২৮), নুরুল হাওলাদার (২০), সাগর হাওলাদার (১৮), সজিব হাওলাদার (১৭), ফারুক হাওলাদার (৩৫), দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের শাহীন শরীফ (২০) ও ধানসাগর গ্রামের কামাল ফরাজী (৪০)। অপহৃতদের মধ্যে ৩৫ জন শরণখোলা উপজেলার উত্তর রাজাপুর গ্রামের মৎস্য ব্যবসায়ী (মহাজন) বাদল ফকির, কবির তালুকদার, পান্না ও জাকির খানের নৌকার জেলে বলে জানা গেছে। মৎস্য ব্যবসায়ী (মহাজন) কবির তালুকদার ও জাকির খান জানান, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ থেকে ৪০টি নৌকার পাশ নিয়ে জেলেরা বনের শেলা নদীর আড়–য়াবয়া এলাকায় মাছ ধরছিলো। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ট্রলার যোগে আসা কুখ্যাত বনদস্যু আব্বাস বাহিনীর ১৫-২০ জনের একদল সদস্য জেলে বহরে হামলা চালায়। বেধড়ক মারপিট করে তিনজন জেলেকে আহত করে। এসময় ট্রলার থেকে দশ লাখ টাকা মূল্যের মাছ ও জাল লুট করে নেয়। যাবার সময় দস্যুরা মুক্তিপণের দাবিতে ৩৫ জন জেলেকে অপহরণ করে সুন্দরবনের গহীনে নিয়ে যায়। দস্যুরা অপহৃত জেলেদের মুক্তিপণ হিসাবে জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা করে দাবি করেছে। আগামী সাতদিনের মধ্যে দাবিকৃত টাকা না পেলে জেলেদের হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিয়েছে। জাতীয় মৎস্যজীবি সমিতির বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা শাখার সভাপতি মো. আবুল হোসেন জেলেদের বরাত দিয়ে জানান, সুন্দরবনের পৃথক স্থানে জেলেরা মাছধরার সময় দস্যুরা তাদের ওপর হামলা চালায়। ১৫ লাখ টাকার জাল ও মাছ লুট করে নেয়। মারপিট করে তিন জেলেকে আহত করে। যাবার সময় দস্যুরা মুক্তিপণের দাবিতে অর্ধশত জেলেকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। কোস্টগার্ড মংলা পশ্চিম জোনের অপারেশন বিভাগের স্টাফ অফিসার লে. কমান্ডার মো. আলাউদ্দিন জানান, অপহৃত জেলেদের উদ্ধার ও দস্যুদের আটক করতে কোস্টগার্ড সদস্যরা বনের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে। সুন্দরবনের ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) আব্দুল বারিক জানান, অপহরণের খবর শোনার পর ওই এলাকায় বনরক্ষীদের টহলে পাঠানো হয়েছে। শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী আব্দুস ছালেক জানান, মৎস্য ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে তিনি সুন্দরবনে জেলে অপহরণের খবর শুনেছেন। ধানসাগর ফাঁড়ি পুলিশকে সার্বিক নজরদারিতে রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।