র‌্যাব সদর দপ্তর জানার আগেই সবশেষ

Narayongonj 7 Murder নারায়ণগঞ্জসিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ নারায়নগঞ্জে ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ ৭ জনকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনা র‌্যাব সদর দফতর জানার আগেই তাদের হত্যা করা হয়।অপহরণের ৮ ঘণ্টার মধ্যেই নজরুল ও চন্দন সরকারসহ ৭ জনকেই হত্যা করে শীতলক্ষ্যা নদীতে ডুবিয়ে দেয়া হয়। শুধু টাকার জন্যই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দেন সেনাবাহিনী থেকে চাকরি হারানো র‌্যাব-১১’র সাবেক সিও তারেক সাঈদ মোহাম্মদ। অপহরণ থেকে শুরু করে হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন করা পর্যন্ত মেজর (অব.) আরিফ ও লে. কমান্ডার (অব.) রানাসহ র‌্যাবের ১৭ সদস্য অংশ নেয়। নারায়ণগঞ্জ পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। সুত্র জানায়, ২৭ মে দুপুরে ঢাকা-নারায়নগঞ্জ লিংক রোড থেকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ ৭ জনকে অপহরণ করে নেয়ার ৮ ঘণ্টার মধ্যেই হত্যা করা হয়। অপহরণের পর র‌্যাবের গাড়িতে তুলেই তাদের সবাইকে ঘুমের ইনজেকশন পুশ করা হয়। কাঁচপুর ব্রিজ পার হয়ে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় নরসিংদতে। সেখানে র‌্যাব-১১’র কোম্পানী কমান্ডারের কার্যালয়ে কিছু সময় রাখার পর মুন্সীগঞ্জ নৌ-বন্দর হয়ে কাঁচপুর ব্রিজের নিচে নিয়ে আসা হয়। এখানে অপহৃত ৭ জনকেই হত্যা করে নিহতদের শরীরে ইটা বেঁধে শীতলক্ষ্যা নদীতে ডুবিয়ে দেয়া হয়। অপহরণ থেকে ডুবিয়ে দেয়া পর্যন্ত আর পুরো কাজ তদারকি করেন লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ। আর সরাসরি এই কার্য সম্পাদন করেন মেজর (অব.) আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার (অব.) এম.এম রানাসহ ১৭ র‌্যাব সদস্য। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, অপহরণের পর হত্যার এই ঘটনা র‌্যাব সদর দফতর অবগত ছিল না। সদর দফতরের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানার আগেই সব শেষ হয়ে যায়। সদর দফতর থেকে নারায়ণগঞ্জের এই অপহরণের বিষয়ে বার বার র‌্যাব-১১’র সিও তারেকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। র‌্যাব কিছুই জানে না বলে জানানোর পাশাপাশি তারাও ঘটনা উদঘাটনে মাঠে কাজ করছে বলে সদর দফতরকে আশ্বস্ত করা হয়। প্রথমে সদর দফতর তারেকের কথা বিশ্বাস করেছিল। পরে বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব সদর দফতরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ঘটনার মূল তিন নায়ক তারেক সাঈদ, আরিফ হোসেন ও রানাকে রাত ১১টার দিকে নারায়নগঞ্জ র‌্যাব-১১’র কার্যালয় থেকে ঢাকায় তুলে নিয়ে আসেন। সূত্র আরো জানায়, র‌্যাব সদর দফতরে রাত ১টা থেকে এই তিন সাবেক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়। টানা তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনা অস্বীকার করেই যাচ্ছিল। রাত পেরিয়ে ভোর সোয়া ৫টার দিকে আরিফ হোসেন ও এম. এম রানা ঘটনা স্বীকার করেন। বর্ননা দেন পুরো ঘটনার। জানান- মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের সঙ্গে র‌্যাব-১১’র সম্পর্কের সাতকাহান। এ সময় র‌্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘটনার বর্ননা শুনে বিস্মিত হয়ে যান। তদন্ত সূত্র জানায়, বিষয়টি র‌্যাবের মহা-পরিচালককে অবহিত করা হয়। এর পর-পরই পুরো বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কর্মরত একজন সামরিক কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়। সামরিক কর্মকর্তারা অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রীকে। এর পরই ঘটতে থাকে সব ঘটনা। র‌্যাব থেকে প্রত্যাহার, শীতালক্ষ্যা নদীতে লাশ ভেসে ওঠা, মামলা, সেনা ও নৌ-বাহিনী থেকে অভিযুক্ত তিন কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত, পুলিশের হাতে গ্রেফতার, রিমান্ড, হত্যা মামলায় আসামি করা ও সর্বশেষ ১৬৪ ধারায় দুই কর্মকর্তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়া। এখনও রিমান্ডে আছেন ঘটনার মূল নায়ক তারেক সাঈদ। তবে সকল তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার পরও তারেক সাঈদ রিমান্ডে কোনো কিছুই বলছেন না বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। চলবে

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ