মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার চলতি বছরেও উদ্বোধন অনিশ্চিত
বিশেষ রিপোর্ট, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ তিন বছরেও শেষ হয়নি রাজধানীর গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ি সড়কে নির্মানাধীন মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নির্মান কাজ। নির্মান কাজে চলছে চরম স্থবিরতা। আর এ কারণেই চলতি বছরেও উদ্বোধন অনিশ্চিত হয়ে পরেছে। গত বছরের স্বাধীনতা দিবসে এই ফ্লাইওভার উদ্বোধনের কথা থাকলেও নির্মান কাজ শেষ না হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। কবে নাগাদ শেষ হবে তার সঠিক জবাবও মেলেনি কারো কাছ থেকে।
গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ি’র ব্যাস্ততম সড়কের যানযট নিরসনের লক্ষ্যে ২০১০ সালের ২২ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ঢাকা সিটির প্রয়াত মেয়র মোঃ হানিফের নামে নামকরণ করা এ ফ্লাইওভারের নির্মান কাজ শুরু হয়। ২০১২ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্মান প্রতিষ্ঠানের চরম অবহেলার কারণে শনিবার (১জুন ২০১৩ইং) পর্যন্ত মাত্র ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে । সংশ্লিষ্ট সুত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় ও সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) প্রকল্পের আওতায় শুরু হয় যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ। সূত্র মতে, শ্রমিকদের পাওনা, রড-সিমেন্ট-বালি ও পাথরের মূল্য বকেয়াসহ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ফান্ড ঘাটতির কারণে শুরুর প্রায় দু’বছর পর অর্থাৎ গত বছরের শুরুর দিকে প্রায় দু’মাসএই ফ্লাইওভারের কাজ বন্ধ ছিল।
পিপিপি’র আওতায় সরকারের এটিই প্রথম ও বৃহৎ প্রকল্প। সূত্র আরো জানায়, ১ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীর পূর্বাঞ্চলের প্রবেশদ্বার যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তান হয়ে পলাশি পর্যন্ত সম্প্রসারিত এই ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজের তত্ত্বাবধান করছে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। আর প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছে বেলহাসা একম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড। প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে কনসালট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসের ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের জনৈক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথম সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও স্থাপত্যকলা সম্পন্ন এ ধরণের প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। চার লেন-বিশিষ্ট এ ফ্লাইওভারটির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় নয় কিলোমিটার। এতে ছয়টি প্রবেশ ও সাতটি প্রস্থান পথ থাকবে বলেও জানান তিনি। এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন কখোনোই বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সম্ভব হয়ে ওঠে না বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিসিসির এক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানান, ২০০৬ সালে প্রথমবারের মত এই ফ্লাইওভারের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এরপর ওয়ান ইলেভেনের কারণে এর কাজ আর তেমন একটা এগোয়নি। নির্মানকারী প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেলহাসা একম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড’কে এ পর্যন্ত এই ফ্লাইওভার নির্মানের কাজে তিনটি সরকারকে ম্যানেজ করতে হয়েছে। তিনি এর নির্মানে ধীর গতির জন্য সরকারের অ-সহযোগিতাকে কিঞ্চিত দায়ি করেন।
চলতি বছরের (২০১৩ইং) ২৬ মার্চ এ ফ্লাইওভার চালুর পরিকল্পনা থাকলেও বর্তমান সরকার এ ফ্লাইওভার উদ্বোধন করে যেতে পারবে কি না এ নিয়ে জনমনে সংশয় দেখা দিয়েছে। এটি চালু হলে মহানগরীর যানজট নিরসনসহ দেশের পূর্ব এবং দক্ষিণাঞ্চলের কমপক্ষে ৩০টি জেলা বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে প্রস্তাবিত পদ্মাসেতুর মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে।
যাত্রাবাড়ির এলাকাবাসিরা জানান, ফ্লাইওভারের কাজ দ্রুত কাজ শেষ করতে গত বছরের ১ ডিসেম্বর এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক নির্মাণাধীন কোম্পানিকে লোকবল বৃদ্ধির নির্দেশ দিলেও কর্তৃপক্ষ তা করেননি। রাতের বেলা কাজ করার কথা থাকলেও যাত্রাবাড়ী পয়েন্ট ছাড়া রাতে কোন কাজ করা হয় না। বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক ও সময় ক্ষেপণের কারণে এটা এখন নগরবাসীর কাছে যন্ত্রনাদায়ক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যাত্রাবাড়ী-গুলিস্থান ফ্লাইওভারের পাইলিং অফিসার সিভিল ফোরম্যান খুরশিদ আলম এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ফ্লাইওভার কবে শেষ হবে তা বলতে পারব না। তবে পাইলিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে প্রায় তিন মাস আগে।’ ফ্লাইওভারের প্রায় ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলেও তিনি জানান।
প্রকল্প পরিচালক মোঃ আশিকুর রহমান বলেন, ‘সরকারের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আসলে এমন একটি ফ্লাইওভারের কাজ শেষ করা সম্ভব নাও হতে পারে।’ তিনিও দাবি করেণ ৭০ ভাগ কাজ শেষ হওয়ার।
সরেজমিন নির্মানাধীন প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর পূর্বাঞ্চলের মানুষের কাছে স্বপ্নের ‘গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার’ এখন অনেকটাই চরম ভোগান্তির কারণ। স্লাাব ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিস-পত্রের জন্য রাস্তা জুড়ে থাকা দীর্ঘস্থায়ী নিরাপত্তা বেষ্টনীগুলো পথচারী ও যানবাহন চলাচলে অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছে। ফলে চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষ। অসহনীয় যানজটে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যঘাতসহ ভোগান্তি বেড়েছে যাত্রীদের। প্রতিদিন পায়ে হেটে যাতায়াত করতে গিয়ে মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে শিক্ষর্থী-অভিভাবক, পথচারী ও কর্মজীবি মানুষদের। অপরদিকে রাস্তা পারাপারে ব্যবহƒত ফুটওভার ব্রিজটি না থাকাতে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা অনেকটা মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই এখানে ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। নিত্যদিনের অসহনীয় যানজটে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেটসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১৮ জেলায় চলাচলকারী যাত্রী ও মালবাহী গাড়িসহ বিভিন্ন প্রকারের যানবাহন সময়মত গন্তব্যে যেতে পারছেনা। বর্তমানে ৪ ঘণ্টার পথ যেতে সময় লাগছে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা। ফলে দুঃসহ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। আর্থিক ক্ষতির মুখে পরছেন পরিবহন ব্যবসায়ীরা। সময়মত মালামাল না পৌঁছানোর কারণে লোকসানে গুনতে হচ্ছে এসব ব্যবসায়ীদের।