চাপ উপেক্ষা করে র্যাব সদরে সোয়া চার ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ প্রচন্ড চাপ ও হুমকি উপেক্ষা করে র্যাব সদর দফতরে সোয়া চার ঘন্ট জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় র্যাব-১১’র সাবেক তিন কর্মকর্তা তারেক সাঈদ, আরিফ হোসেন ও এম.এম রানাকে। ‘৭ খুনের নির্দেশদাতা হিসেবে ফাঁসিয়ে দেওয়া’ এবং ‘র্যাব ও সেনাবাহিনী থেকে চাকরি হারানো’র হুমকি দিয়েও জিজ্ঞাসাবাদে সংশ্লিষ্ট সদর দফতরের শীর্ষ এক কর্মকর্তাকে বিরত রাখা যায়নি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
নারায়নগঞ্জ পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ২৭ মে দুপুরে ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও এ্যাডভোকেট চন্দন সরকারসহ ৭ জনকে অপহরণের ঘটনায় নারায়নগঞ্জ রাজধানী ঢাকায় তোলপাড় শুরু হলে জেলা পুলিশের পাশাপাশি সকল গোয়েন্দ সংস্থা তদন্তে নেমে পড়ে। দুপুর গড়িয়ে বিকেলের মধ্যেই তারা নিশ্চিত হয় অপহরণে র্যাব-১১’র সংশ্লিষ্টতা। বিষয়টি পুলিশ হেড-কোয়াটার্সে জানিয়েও দেয়। তবে পুলিশ হেড-কোয়াটার্স এসময় ধীরে চলো নীতি অনুস্মরণ করে।
সূত্র আরো জানায়, অপহরণের সঙ্গে র্যাব-১১ সংশ্লিষ্টতার কথা পুলিশ হেড-কোয়াটার্স র্যাব সদর দফতরকে জানায়। র্যাব সদর দফতরের শীর্ষ কর্মকর্তা তখন রাজধানীর বাইরে ছিলেন। তিনি দ্রুত ঢাকায় ছুটে এসে র্যাব-১১’র প্রায় সব কর্মকর্তার সঙ্গে মোবাইলে অসংখ্যবার কথা বলেন। তবে কেউই এ বিষয়ে মুখ খোলেননি। অন্ধকারে রাখা হয়েছিল র্যাব সদর দফতরকে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, ২৭ মে গভীর রাতে তারেক সাঈদ, আরিফ হোসেন ও এম.এম রানাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালে ক্ষমতাধর একজন মন্ত্রী সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হন। এর পর তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজজ্জামান খান কামালের সঙ্গে কথা বলেন। এতেও কোন সুরাহা করতে না পেরে র্যাব সদর দফতরে যোগাযোগ করেন। তারেক সাঈদকে অপহরণের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিতে চাপ প্রয়োগ করা হয়। এক পর্যায়ে র্যাব ও সেনাবাহিনী থেকে চাকরি হারানো’র হুমকিও দেয়া হয় মন্ত্রীর পক্ষ থেকে।
এখানেই শেষ নয়, তারেক সাঈদ নিজে র্যাবের শীর্ষ পর্যায়ের এই কর্মকর্তাকে ৭ খুনের নির্দেশদাতা হিসেবে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তাকে রক্ষার আহবান জানান। তবে তারেক সাঈদ ও মন্ত্রীর ্এমন সব হুমকি-ধামকিতে তেমন কোন কাজ হয়নি।
র্যাব সদরের জিজ্ঞাসাবাদেই বেরিয়ে আসে অপহরণের পর হত্যার পুরো ঘটনা। অপহরনের ৮ ঘন্টার মধ্যেই নজরুল ও চন্দন সরকারসহ ৭ জনকেই হত্যা করে শীতালক্ষা নদীতে ডুবিয়ে দেওয়া হয় বলে জানান মেজর (অব.) আরিফ ও লে. কমান্ডার (অব.) রানা। তারা দুজনেই র্যাব সদরকে জানান, শুধু টাকার জন্যই এই নৃশংস হত্যাকান্ডের নির্দেশ দেন সেনাবাহিনী থেকে চাকরী হারানো র্যাব-১১’র সাবেক সিও তারেক সাঈদ। আর তারা দুজনসহ ১৭ র্যাব সদস্য স্পটে থেকে ঘটনা সম্পন্ন করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৭ এপ্রিল একটি মামলায় হাজিরা দিয়ে ঢাকায় যাওয়ার পথে ঢাকা-নারায়নগঞ্জ লিংক রোড থেকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও এাডভোকেট চন্দন সরকারসহ ৭ জনকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল নারায়নগঞ্জের শীতালক্ষা নদী থেকে নজরুল ও চন্দন সরকারসহ অপহৃত ৬ জনের এবং এর একদিন পর ১ মে বাকি ১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
অপহরণে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় র্যাবের-১১ সিও (অধিনায়ক) লে.কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির কারনে নারায়নগঞ্জের জেলা প্রশাসক মনোজকান্তি বড়াল ও জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলামকে ২৯ এপ্রিল প্রত্যাহার করা হয়। অপহরনের পর হত্যায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ স্পষ্ট হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ৫মে লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেনকে সেনাবাহিনী থেকে এবং নারায়নগঞ্জ ক্যাম্পের সাবেক প্রধান লে. কমান্ডার এম.এম রানাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
তারেক সাঈদ বর্তমানে পুলিশ রিমান্ডে আছে। গতকাল তার আরো চর দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। অন্যদিকে আরিফ হোসেন ও এম.এম রানা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।