চাঞ্চল্যকর তিন হত্যাকাণ্ডে বিব্রত সরকার!

7 akram mirpurসিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বর্তমান সময়ের চাঞ্চল্যকর তিন হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিব্রত সরকার। নারয়ণগঞ্জ, ফেনী ও ঢাকার কালশীতে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় সরকারে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ। নৃশংস এই তিন হত্যাকাণ্ডে মোট ১৮ জন নিহত হয়েছেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ ৭ খুন, ২০ মে ফেনীর ফুলগাজীতে উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক ও সর্বশেষ ১৩ জুন রাজধানীর মিরপুরে শিশুসহ ১০ জনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় সরকার বিব্রত। চাঞ্চল্যকর এই তিন হত্যাকাণ্ডে আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা-কর্মীরা অভিযুক্ত হওয়ায় সরকারের ভেতরে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলী ও প্রেসিডিয়ামের একাধিক সদস্য বিষয়টি পরবর্তী কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উত্থাপনের জন্য আলোচ্যসূচিতে অন্তভুক্ত করতে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এদিকে চাঞ্চল্যকর এই তিন হত্যাকাণ্ড নিয়ে সোমবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনা হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে। সূত্র জানায়, সচিবালয়ে সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী কড়া ভাষায় এসব ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেন। তবে এ বিষয়ে বৈঠকে উপস্থিত থাকা মন্ত্রিপরিষদের কোনো সদস্যই কথা বলতে রাজি হননি। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ, ফেনী ও মিরপুরের এই ঘটনা নৃশংস এবং হৃদয় বিদারক। এর সমালোচনা বা নিন্দা করার কোনো ভাষা আমার জানা নেই। এসব ঘটনায় আমি বেশি ক্ষুব্ধ এজন্য যে, এর প্রতিটি ঘটনায়ই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নাম এসেছে। অভিযুক্ত এই নেতা-কর্মীরা দলের সুনাম ক্ষুন্ন করেছে। এদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক, এটা আমার প্রত্যাশা। উল্লেখ্য, গত ২৭ এপ্রিল একটি মামলায় হাজিরা দিয়ে ঢাকায় যাওয়ার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে নাসিক প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারসহ ৭জনকে অপহরণ করে হত্যার পর পানিতে ডুবিয়ে দেয়া হয়। ঘটনার তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের শীতালক্ষ্যা নদী থেকে নজরুল ও চন্দন সরকারসহ অপহৃত ৬ জনের এবং এর একদিন পর ১ মে বাকি ১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডে নূর হোসেনসহ নারায়নগঞ্জ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার নাম প্রকাশ পায়। পরে আওয়ামী লীগ থেকে নূর হোসেনসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। অপহরণে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় র্যা বের-১১ সিও (অধিনায়ক) লে.কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির কারণে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মনোজকান্তি বড়াল ও জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলামকে ২৯ এপ্রিল প্রত্যাহার করা হয়। অপহরণের পর হত্যায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ স্পষ্ট হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ৫ মে লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেনকে সেনাবাহিনী থেকে এবং নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের সাবেক প্রধান লে. কমান্ডার এম.এম রানাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এছাড়া গত ২০’মে ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হককে জেলার একাডেমি রোডে গুলি করার পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম প্রকাশিত হয়। একজন ছাড়া আটকও হয়েছেন জেলার আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ। এর পর সর্বশেষ রাজধানীর মিরপুরের কালশীতে সংঘর্ষের সময় একটি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে একই পরিবারের ৯ জনসহ মোট ১০ জনকে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দাতা হিসেবে স্থানীয় সাংসদ ইলিয়াস মোল্লার নাম উত্থাপিত হয়। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ