আমাদের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা আছে, ব্রিটিশ মন্ত্রী : লন্ডনের সাম্প্রতিক একটি রাজনৈতিক সভায় তারেক রহমান

Tarek-Ldমোহাম্মাদ আল সাইফ, এবিসি নিউজ বিডিঃ বাংলাদেশে সফররত ব্রিটিশ একজন মন্ত্রী অ্যালান ডানকান বলেছেন, তারেক রহমানকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রশ্নটা ব্রিটেনের রাজনৈতিক নেতৃত্বের কোনও সিদ্ধান্তের বিষয় নয়। এটা সম্পূর্ণ আইনগত বলেই তিনি উল্লেখ করেছেন।

এদিকে এর আগে ব্রিটিশ এই মন্ত্রীর কাছে বিএনপি নেতা তারেক রহমানকে লন্ডন থেকে দেশে ফেরত আনতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ দীপু মনি সহযোগিতা চেয়েছিলেন। কিন্তু বিরোধী দল বিএনপি সরকারের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে।

২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান জামিন এ মুক্তি নিয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডন গিয়েছিলেন, তারপর থেকে তিনি শারীরিক অসুস্তাতার কারণে আর দেশে ফেরেননি।

তারেক রহমান পাঁচ বছর ধরে লন্ডনে থাকলেও সেখানে কিছুদিন আগে প্রথম তিনি বিএনপির এক রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন, আর তার পরই তাঁকে দেশে ফেরত আনার বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হয়।

দুর্নীতি দমন কমিশনও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করে।

ঢাকার একটি আদালত দুর্নীতির মামলায় ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে তাকে ফেরত আনার নির্দেশ দেয়।

মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ দীপু মনি সাংবাদিকদের বলেছেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দেশে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার বিষয়টি ব্রিটিশ সরকার এবং ইন্টারপোলকে জানানো হয়েছে।

এমন পটভূমিতে ঢাকায় সফররত ব্রিটিশ মন্ত্রী অ্যালান ডানকানের কাছে সাংবাদিকরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, তারেক রহমান ব্রিটেনে কিভাবে অবস্থান করছেন এবং তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন কি না!

“আমরা কোনও ব্যক্তিবিশেষের রাজনৈতিক আশ্রয়ের ব্যাপারে মন্তব্য করি না। আর এখানে রাজনীতিকদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কিছু নেই – আমাদের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা আছে, এবং বিষয়টা সম্পূর্ণ আইনগত! ”

অ্যালান ডানকান, ব্রিটিশ সরকারের মন্ত্রী

তাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে বাংলাদেশ সরকার যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছে, সে ব্যাপারেও সাংবাদিকরা মি ডানকানের কাছে প্রশ্ন রেখেছিলেন।

এর জবাবে ব্রিটিশ মন্ত্রী অ্যালান ডানকান সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি শুধু বলেছেন, বিষয়টা আইনগত।

মি ডানকান বলেন, ‘আমরা কোনও ব্যাক্তির রাজনৈতিক আশ্রয়ের বিষয় নিয়ে কোন মন্তব্য করি না। বিষয়টি আসলে কী – তা বোঝার জন্য আপনাদের বলব যে এই সিদ্ধান্তটা কেবল রাজনীতিকদের জন্য নয়।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমাদের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে বিষয়টিতে রাজনীতিকদের আপনারা দোষারোপ করতে পারেন না। কারণ আইনগত বিষয়ে রাজনীতিকরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার কেউ নন।’

তারেক রহমানকে ঘিরে সরকারের পদক্ষেপের প্রতিবাদ করে আসছে বিরোধী দল বিএনপিও। দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দাবি করেন এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর মন্তব্য রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত।

তিনি বলেন, ‘তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোন মামলায় এখনও রায় হয়নি। এরপরও তাকে ফেরারি আসামী হিসেবে বিদেশিদের কাছে তুলে ধরা কতটা যুক্তিসঙ্গত। সরকারের এসব অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করার চিন্তা এখন বিএনপিতে কাজ করছে। ফলে তারেক রহমান যে কোন সময় দেশে আসতে পারেন।’

alan-duncan1

তবে তারেক রহমান দীর্ঘ সময় ধরে লন্ডনে কীভাবে আছেন, তা নিয়েও বিতর্ক চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

অবশ্য বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শমসের মবিন চৌধুরী দাবি করেন চিকিৎসার জন্য যেহেতু তারেক রহমান লন্ডনে আছেন,ফলে তাঁর থাকার ‘স্ট্যাটাস’ নিয়ে কোনও সমস্যা নেই।

মি চৌধুরী আরও জানান, ‘তারেক রহমানের স্ত্রী-কন্যার থাকার ক্ষেত্রেও কোনও সমস্য হচ্ছে না। তারা সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয়ে নেই। চিকিৎসার কাগজপত্র দেখে ব্রিটিশ সরকার প্রতি বছর তাদের ভিসার মেয়াদ নবায়ন করে থাকে।’

কিন্তু তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রশ্নে বিএনপির অনেক নেতাই নানা রকম বক্তব্য তুলে ধরছেন। মি চৌধুরী অবশ্য মনে করিয়ে দেন তারেক রহমান নিজে এ প্রসঙ্গে কিছুই বলেননি এবং তাঁর দেশে ফেরার বিষয়টা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে চিকিৎসার উপর।

মি চৌধুরী জানিয়ে দেন, তারেক রহমান যখন সুস্থ হবেন,তখনই ফিরবেন। এর সাথে নির্বচনের কোনও সম্পর্ক নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং চাঁদাবাজির অভিযোগে মোট ১৪টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দু’টি মামলায় বিচার কার্যক্রম এখন চলছে।

 

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ