ঈদের পর কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি খালেদার
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ ঈদের পর কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘আজকে দেশে সরকার ও গণতন্ত্র বলে কিছু নেই। গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত। জনগণ তাদের হাতে নির্যাতিত, অত্যাচারিত। খুন, গুম, হত্যা, নির্যাতন, দখল লুটপাট এখন প্রতিদিনে ঘটনা। এর সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগের গুণ্ডবাহিনী, ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং র্যা ব-পুলিশ।’ মঙ্গলবার রাতে চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে ঢাকা বিভাগের নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি। খালেদা জিয়া বলেন, ‘জনসমর্থনহীন একটি সরকার ক্ষমতায় বসে আছে। তাদের ভোট দিতে এ দেশের জনগণ ভোটকেন্দ্রে আসবে না।’ উপজেলা চেয়ারম্যানদের উদ্দেশে বেগম জিয়া বলেন, ‘অনেক প্রতিকুলতা ও নির্যাতন সহ্য করে আপনারা নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। কিন্তু এরা (বর্তমান সরকার) জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। আপনারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত। আপনারই হলেন জনগণের প্রকৃত জনপ্রতিনিধি।’ তিনি বলেন, ‘এই সরকার অবৈধ সরকার। এদের মধ্যে দেশ বা জনগণ নিয়ে কোনো চিন্তা ভাবনা নেই। আর এ কারণে এখানেও তারা ব্যবধান করে দেখে, তার দলের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান কে বা কারা। তাদের দলের চেয়ারম্যান হলে তাকে সকল সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়। আর অন্য দলের হলে তাকে সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয় না। এলাকার উন্নয়নে তার প্রাপ্য তাকে দেওয়া হয় না।’ খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনারা যে আশা আকাঙ্খা নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন এই অবৈধ সরকারের অসহযোগিতার ফলে আপনাদের কাজ করতে সমস্যা হবে। আপনারা সেগুলো জনগণকে জানাবেন, এই অবৈধ সরকার আপনাদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচারণ করছে। জনগণের পাশাপাশি আমাদের জানাবেন যাতে আমরা জনগণের সামনে তুলে ধরতে পারি।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘এই প্রশাসন যেখানে জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়ার কথা, তাদের সহায়তা করার কথা, সেখানে প্রশাসন জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে একটা অবৈধ সরকারের কথা মতো অন্যায় কাজ করছে। তারা সাধারণ জনগণকে ধরে নিয়ে গুম করে ফেলছে, হত্যা করছে এবং তাদের লাশ পথে ঘাটে মাঠে নদীতে পাওয়া যাচ্ছে।’ বেগম জিয়া বলেন, ‘দেশে কোনো উন্নয়ন নেই। এই অবৈধ সরকার বেছে বেছে প্রজেক্ট হাতে নিচ্ছে, যেখানে বেশী বেশী কমিশন পাওয়া যায় যেখানে টাকা বেশী পরিমাণে। সেই সব প্রজেক্ট তারা হাতে নিচ্ছে লুটপাট করার জন্য।’ বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘সিলেটের স্টেডিয়াম ভেঙ্গে পড়ে তিনজন মারা গেছে। স্টেডিয়াম বানাতে গিয়ে চুরি করেছে। এমন চুরি করেছে যে, সেখানে সিমেন্ট বালু ঠিকমত দেওয়া হয়নি। যে কারণে স্টেডিয়াম ভেঙ্গে পড়েছে। দেশ এবং দেশের মানুষের জানমালের কোনো দায়িত্ব বা ভালোবাসা তাদের মধ্যে নেই। সেজন্যই দেশের মানুষ এই সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।’ আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকেই বলে এই অবৈধ সরকার কবে বিদায় হবে। এরা কবে সরে যাবে। এরা যাবে না, এদের বিদায় করতেই হবে। এদের টাকা পয়সায় লোভ জেঁকে বসেছে। এ কারণে তারা ক্ষমতা ছাড়তে চায় না।’ এ সময় আন্দোলনে প্রস্তুত হওয়ার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের আহ্বান জানান তিনি। খালেদা জিয়া বলেন, ‘যেনতেনভাবে সংবিধান সংশোধন করে, বিরোধী দলকে ধ্বংস করতে যত রকম আইন কানুন নিয়মনীতি করা যায় আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য তা তারা করেছে। কিন্তু ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, কোনো স্বৈরশাসক জনগণের বিরুদ্ধে সরকারে টিকে থাকতে পারেনি। যত চেষ্টা করুক, যত আইন করুক, যত বুদ্ধিই করুক না কেন কেউ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি। তাদের বিদায় নিতে হয়েছে। শুধু বিদায় নয় করুণ পরিণতি নিয়েই বিদায় নিতে হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের একটাই দাবি দেশে গণতন্ত্র নেই। তারা দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন দেখতে চায়। দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেখতে চায়। দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি রোধ করতে চায়। যাতে মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারে। তারা দেশের সুষম উন্নয়ন দেখতে চায়।’ বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘সরকারকে আলোচনায় আসতে হবে, নির্বাচনও দিতে হবে। সরকারের নির্দেশে প্রশাসন জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ঈদের পর কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘বিনা ভোটে যারা এমপি হয়েছেন, তাদের দায়িত্ব বলে কিছু নেই। সেজন্য এলাকার কোনো উন্নয়ন করেন না। উন্নয়নের টাকা সব পকেটে যায়। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাস করা হচ্ছে টাকার বিনিময়ে। সব কিছু করা হচ্ছে টাকার বিনিময়ে। টাকার বিনিময়ে মানুষ পর্যন্ত খুন করছে তারা।’ এর আগে, বিএনপি সমর্থিত ঢাকা বিভাগের নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন বেগম খালেদা জিয়া। সভায় ঢাকা বিভাগের বিএনপি সমর্থিত নির্বাচিত ৫৯ জন চেয়ারম্যান ও ৪০ জন ভাইস চেয়ারম্যান অংশ নেন। উপজেলা চেয়ারম্যানদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- মানিকগঞ্জ সদরের আতাউর রহমান আতা, দোহারের কামরুল হুদা, নবাবগঞ্জের খন্দকার আশফাক, ধামরাইয়ের তমিজউদ্দিন, সাভারের কফিল উদ্দিন, ফরিপুরের নগরকান্দার শাহিনুজ্জামান শাহিন, সালথার ওয়াহিদুজ্জামান, মধুখালীর আজিজুর রহমান মোল্লা, চরভদ্রাসনের এ জি এম বাদল আমিন, নেত্রকোনার কেন্দুয়ার দেলোয়ার হোসেন ভুঁইয়া, বারহাট্টার মানিক আজাদ, মোহনগঞ্জের আ ক ম শফিকুল হক, মদনের হারেছ উদ্দিন এম এ হারেছ, কাপাসিয়ার খন্দকার আজিজুর রহমান পেয়ারা, গাজীপুর সদরের ইজাদুর রহমান মিলন, জামালাপুর সদরের আমজাদ হোসেন মল্লিক, সরিষাবাড়ির ফরিদুল কবির তালুকদার, বক্সিগঞ্জের আবদুর রউফ তালুকদার, ইসলামপুরের নবী নেওয়াজ খান লোহানি, কিশোরগঞ্জ সদরের শরীফুল ইসলাম, কুলিয়ার চরের নুরুল মিল্লাত ,ভৈরবের গিয়াস উদ্দিন, মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের তোজাম্মেল হক, সিংগাইরের আবিদুর রহমান খান, সাটুরিয়ার বসির উদ্দিন ঠান্ডু, শিবালয়ের মোহাম্মদ আলী আকবর, হরিরামপুরের সাইফুল হুদা চৌধুরী শাতিল, ঘিওরের খন্দকার লিয়াকত হোসেন, শ্রীনগরের মমিন আলী, ময়মনসিংহ সদরের কামরুল ইসলাম ওয়ালিদ, ফুলপুরের আবুল বাশার আখন্দ, গৌরীপুরের আহমেদ তায়েবুর রহমান, মুক্তাগাছার জাকারিয়া হারুন, ত্রিশালের জয়নাল আবদিন, নারায়ণগঞ্জের বন্দর আতাউর রহমান মুকুল, সোনারগাঁওয়ের আজহারুল ইসলাম মান্নান, নরসিংদীর বেলাবোর মোহাম্মদ আহসান হাবিব, শিবপুরের আরিফুল ইসলাম মৃধা, নরসিংদী সদরের মঞ্জুর এলাহি, রাজবাড়ী সদরের এম এ খালেক, শেরপুরের ঝিনাইঘাতির আমিনুল ইসলাম, নালিতাবাড়ির এ কে এম মুখলেসুর রহমান রিপন, টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের এস এম ফেরদৌস আহমেদ, নাগরপুরের আবদুস সামাদ, কালিহাতির মোজহারুল ইসলাম তালুকদার, বাসাইলের কাজী শহিদুল ইসলাম প্রমূখ। ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- মানিকগঞ্জ সদরের ফারজানা হোসেন, নেত্রকোনার বারহাট্টার আবদুল আউয়াল, খালিয়াঝুরির মনোয়ারা বেগম, মোহনগঞ্জের কামরুন্নাহার, টাঙ্গাইলের সখীপুরের সবুর রেজা, বাসাইলের রাশেদা সুলতানা রুবি, ময়মনসিংহ সদরের খালেদা আতিক, মুক্তাগাছার শাহরিয়ার শরীফ, রাজবাড়ী গোয়ালন্দের নার্গিস পারভিন, সদরের বিউটি আখতার প্রমুখ। মতবিনিময় সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, ব্রি. জে. (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।