ছাত্রদলের ব্যানারে কোনো রাজনীতি না

মোহাম্মাদ আল সাইফ, এবিসি নিউজ বিডিঃ   গত ৫ মে দিবাগত রাতে শাপলা চত্বরে হেফাজত সমাবেশে র‌্যাব-পুলিশের অ্যাকশনের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন, �রাতের অন্ধকারে বাতি নিভিয়ে সমাবেশে আক্রমণ, মানুষ হত্যা, এ কোন গণতন্ত্র?Tarek-Ld
ওই সমাবেশে অগণিত মানুষ হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারকে এই হত্যাকাণ্ডের দায় নিতে হবে।

২০ মে সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত দেড়টায় পূর্ব লন্ডনের নিউহ্যাম পামট্রি রেস্টুরেন্টে ডকল্যান্ড ক্রাউন প্লাজা হোটেলে পণ্ড হওয়া অসমাপ্ত সমাবেশেরসমাপনী বক্তব্যে তারেক রহমান এ অভিযোগ করেন।

এ সময় সমাবেশে উপস্থিত দৈনিক আমার দেশের একজন সাংবাদিককে দেখিয়ে তিনি বলেন, নিজের প্রাণ বাঁচাতে এই সাংবাদিক আজ দেশ ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন। ওই সাংবাদিকের কাছ থেকে সংখ্যা জেনে নিয়ে তারেক বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে এই পর্যন্ত প্রায় ২০ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে।
ঈদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির এ শীর্ষ নেতা অভিযোগ করেন, সাংবাদিক সাগর-রুনি সরকারের একটি বড় ধরনের দুর্নীতি প্রকাশ করতে যাচ্ছিলেন বলেই তাদের হত্যা করা হয়। তিনি আরও অভিযোগ করেন, সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডকে ধামাচাপা দিতে সরকারি পৃষ্টপোষকতায় এখন চলছে বিভিন্ন নাটক।

ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে বর্তমান সরকার তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে অভিযোগ করে তারেক বলেন, একটি শীর্ষ পত্রিকার কয়েক হাজার পাঠকের ওপর করা জরিপে প্রমাণ হয়েছে দেশের ৯০ ভাগ মানুষ তত্বাবধায়ক সিস্টেম চায়। কিন্তু সরকার জনমতের প্রতি কোনো তোয়াক্কা না করেই এক তরফা নির্বাচনের দিকে হাটছে।

তারেক রহমান বলেনযুক্তরাজ্যে ছাত্রদলের ব্যানারে কোনো রাজনীতি না করার পক্ষপাতি। কারণ ছাত্ররা এখানে আসেন লেখাপড়া করতে। মা-বাবার কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয় করে এখানে এসে রাজনীতি নয়। লেখাপড়ায় ছাত্রদের মনোনিবেশ করা উচিত।

দলের ঐক্য ধরে রাখার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ১/১১ এ দলের অনেক বড় বড় নেতার উচিত ছিল দলের ঐক্য ধরে রাখা, তখন তা তারা করেননি। ওই মুহূর্তে দেশের জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন কমিটির নেতারাই দলকে ধরে রেখেছিলেন। যুক্তরাজ্যের সাংসদ, মন্ত্রীসহ ব্রিটেনের মূলধারার রাজনীতিকদের কাছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, প্রয়োজনে বাংলাদেশের পরিস্থিতি জানিয়ে তাদের কাছে চিঠি লিখুন। যুক্তরাজ্যে আমাদের রাজনীতি হবে একটু ভিন্নরকম।

তারেক বলেন, জনগণের প্রয়োজনেই বিএনপির জন্ম হয়েছিল। সুতরাং এ জনগণের প্রয়োজনেই দলকে সুসংগঠিত করে বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে দিতে হবে সারা দেশে। নিজেদের অভ্যন্তরীণ সব ভেদাভেদ ভুলে ব্রিটেনে দলকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দলকে তুলে ধরতে যুক্তরাজ্য বিএনপির একটি দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্ব সম্পন্ন কমিটি এখন সময়ের দাবি, এবং অচিরেই একটি যোগ্য কমিটি আসবে বলে আমি আশাবাদী।

দেশে ফিরে দলের হাল ধরা বিষয়ে নেতাকর্মীদের আহ্বানের জবাবে তারেক জানান, তিনি এখনও পুরোপুরি সুস্থ নন। বেশি সময় দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারেন না,শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়।

নেতাকর্মীরা লন্ডনের বাইরে অন্যান্য শহরেও তাকে নিয়ে সমাবেশ করার আগ্রহ দেখালে তারেক বলেন, যুক্তরাজ্য বিএনপির নতুন কমিটি গঠিত হওয়ার পর ইনশাল্লাহ ব্রিটেনের অন্যান্য শহরে গিয়েও আমি নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার চেষ্টা করবো।

তারেক রহমান প্রায় আধাঘণ্টার বক্তব্য রাখেন। আরো বক্তব্য রাখেন দলের সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মহিদুর রহমান, বাতিলকৃত আহবায়ক কমিটির আহবায়ক এম এ মালেক, যুগ্ম আহবায়ক ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এ সালাম, এনামুল হক লিটন, সাবেক যুগ্নসম্পাদক মল্লিক হোসাইন আহমেদ হাসনু, নাসিম চৌধুরী, কয়সর আহমেদ, জমিলুল হক, ফযসল আহমেদ, এম লুৎফুর কল্যান্ড ক্রাউন প্লাজা রেস্টুরেন্টে আয়োজিত দলের এ সভা কর্মীদের হাতাহাতি ও উত্তেজনার কারণে পণ্ড হয়ে যারহমান, মোশাহিদ হোসেইন ও এম জাহেদ আলী প্রমুখ।

সভার সূচনা বক্তব্য রাখতে গিয়ে ওই সময় তারেক রহমান বিগত দিনে রাজনৈতিক কারণে মৃতু ও নির্যাতন ভোগকারী দলীয় নেতাকর্মীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

বাংলাদেশ সময় রাত ১১টার দিকে পামট্রি রেস্টুরেন্টে অসমাপ্ত সভা শুরু হয়ে তা চলে বাংলাদেশ সময় রাত আনুমানিক ২টা পর্যন্ত।

উল্লেখ্য, বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের সময় লন্ডন নির্বাসনে আসার পর দলের বিভিন্ন শাখা কমিটির নেতাদের নিয়ে তারেক রহমানের প্রকাশ্য সভা কার্যত এই প্রথম। গত দুয়েক দিন ধরে এই সভা নিয়ে বিভিন্ন গুজব গুঞ্জন চলছিল লন্ডনের কমিউনিটিতে। দীর্ঘদিন যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতৃত্বহীন ভাবে চলছিল।

কয়েক সপ্তাহ আগে উমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে গিয়ে রাজনৈতিক সমাবেশে যোগদান করায়, লন্ডনেও তারেক শিগগিরই প্রক্শ্যা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করবেন, এমনটি শোনা যাচ্ছিল। হঠাৎ করেই রাজনীতিতে পুরোপুরি সক্রিয় হচ্ছেন তারেক, এমন আলোচনা লন্ডনের কমিউনিটিতে ডালপালা বিস্তার করে গত কয়েক দিন ধরে।

যুক্তরাজ্য বিএনপির নতুন কমিটি নিয়ে বিগত বেশ কয়েকদিন যাবত টানা কাজ করার পর একটি কমিটি এরইমধ্যে ঠিকও করেছেন তারেক, এমন খবরই আলোচিত হচ্ছিল বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে। এরমধ্যে গত শুক্রবার তিনি বেলজিয়াম গিয়েছেন বলেও গুজব ওঠে কমিউনিটিতে। হঠাৎ করে কেন তার এই বেলজিয়াম যাত্রা, এমন প্রশ্নও ঘুরপাক খেতে থাকে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির সিনিওর ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, আপনাদের অভিযোগ-অনুযোগ থাকতে পারে। সেটি দলীয় সভায় বলুন। দলীয় ফোরামের বাইরে অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কথা না বলার অনুরোধ করেন। যুক্তরাজ্য বিএনপির আসন্ন কমিটির ব্যাপারে তারেক রহমান বলেন,ভালো মন্দর মিশ্রনেই কমিটি আসবে।

আগামী কমিটিতে আমার একটি চিন্তা ভাবনা আছে, এ কমিটিতে আমরা আলাদা কয়েকজন নেতৃবৃন্দ আনার চেষ্টা করবো যাদের দায়িত্ব হবে কুটনৈতিক তৎপরতা।

দীর্ঘ বক্তব্যের এক পর্যায়ে তারেক রহমান ক্লান্ত হয়ে বলেন, শরীরটা এখন আর আগের মত ভাল নেই, ক্লান্ত হয়ে পড়ি।অতক্ষন বক্তব্য দিতে কষ্ট হয়।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ