ভারী বৃষ্টিপাতে জলোচ্ছ্বাস ও পাহাড়ধসের সতর্কবার্তা
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, চট্টগ্রামঃ চট্টগ্রামে ভারী বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে নগরের বেশির ভাগ এলাকা। বিভিন্ন স্থানে হাঁটু থেকে গলাসমান পানি জমেছে। একই সঙ্গে বিদ্যুত্ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বিভিন্ন এলাকার। আজ শুক্রবার সকাল নয়টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ৩২৬ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
আরও বৃষ্টিপাতের আশঙ্কায় উপকূলীয় জেলাগুলোয় জলোচ্ছ্বাস এবং চট্টগ্রামে পাহাড়ধসের সতর্কবার্তা জারি করেছে আবহাওয়া দপ্তর।
পতেঙ্গা আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট মৌসুমি লঘুচাপ এবং সঞ্চরণশীল মেঘমালার কারণে এই বৃষ্টিপাত হচ্ছে। উপকূলীয় জেলাগুলোয় জলোচ্ছ্বাস এবং চট্টগ্রামে পাহাড়ধসের সতর্কবার্তা জারির পাশাপাশি সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বিরামহীন বৃষ্টিতে নগরের বাকলিয়া, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর, জিইসি মোড়, ওয়াসা মোড়, কাপাসগোলা, পাঁচলাইশ, বাদুরতলা, হালিশহর, আগ্রাবাদ, চান্দগাঁওসহ বিভিন্ন স্থানে হাঁটু থেকে গলাসমান পানি জমেছে। ফলে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
বহদ্দারহাটের বারুইপাড়ার বাসিন্দা মো. ইব্রাহিম জানান, রাত থেকে সড়ক উপচে তাঁদের বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পানি বাড়ছে বলে তিনি জানান।
সতর্কবার্তা: আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তত্সংলগ্ন বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলীয় এলাকায় মৌসুমি লঘুচাপ অবস্থান করছে। একই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তত্সংলগ্ন বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চরণশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরের ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম, মংলা সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজারকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। মৌসুমি লঘুচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে এক-দুই ফুট অধিক উচ্চতায় প্লাবিত হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
পাহাড়ধসের সতর্কবাণী : লঘুচাপের প্রভাবে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। তাই চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা করছে আবহাওয়া দপ্তর।
বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন
টানা বর্ষণের সঙ্গে ঝোড়ো বাতাসের প্রভাবে নগরের বাকলিয়া, হালিশহর, রামপুর, খুলশী, পাহাড়তলী, আগ্রাবাদ, লালখান বাজার, জামাল খান, নাসিরাবাদ, পাঁচলাইশ—এসব এলাকায় রাস্তার পাশে গাছের ডালপালা ভেঙে পড়ে। কোনো কোনো এলাকায় দেওয়াল ধসের ঘটনাও ঘটে। এতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বিদ্যুত্-সংযোগ। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। কারণ বিদ্যুত্ না থাকায় পানির মোটরও চলছে না। এতে ভোর থেকে পানি-সংকটে ভুগছে অনেকে।
দুপুর ১২টায় পুনঃ সংযোগের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের (বিতরণ দক্ষিণাঞ্চল) জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, পুনরায় বিদ্যুত্-সংযোগ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। গাছপালা এবং কোথাও পানিতে ডুবে যাওয়া বৈদ্যুতিক মিটার সরিয়ে নিতে সময় লাগছে বলে সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে।