রাজনৈতিক আশ্রয় চাইবেন নূর হোসেন !
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের প্রধান অভিযুক্ত নূর হোসেন ভারত সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতে যাচ্ছেন বলে বাংলাদেশ-ভারতের একাধিক গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত করেছে। আর নূর হোসেন এ আবেদনের জন্য সব ধরনের সাহায্য করছেন প্রধানমন্ত্রীর একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টা। নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনলে অনেক বড় বড় রাঘব বোয়ালের আন্ডারওয়ার্ল্ড কানেকশন প্রকাশ হবে এই ভয়ে যেকোনো উপায়ে তাকে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রাখতে বিপুল টাকার মিশনে মাঠে নেমেছে আন্ডারওয়ার্ল্ডের একটি প্রভাবশারী গ্রুপ এবং তাদের সঙ্গে রয়েছেন কিছু রাজনৈতিক রাঘববোয়াল। সূত্র জানায়, ভারতীয় বিচ্ছিন্নতবাদী সংগঠন উলফা নেতা অনুপ চেটিয়ার মতো কূটনৈতিক জটিলতা সৃষ্টির জন্যই নূর হোসেনকে দিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। অনুপ চেটিয়া বাংলাদেশে গ্রেফতার হওয়ার পর জাতিসংঘের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করলে দুদেশের মধ্যে বন্দি বিনিময় চুক্তি থাকার পরও তাকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করতে দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হচ্ছে। ঠিক তেমনি নূর হোসেন যদি ভারত সরকারে কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চায় তবে বন্দি বিনিময় চুক্তির থাকার পরও তাকে চাইলেও সহজে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারবে না বাংলাদেশ সরকার। তৈরি হবে কূটনৈতিক নানান জটিলতা। ভারতের একটি গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, নূর হোসেন যাতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করে সেজন্য ঢাকা থেকে একটি দল তার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করছে। দলটি নূর হোসেনকে এটাই বোঝাতে চাচ্ছে যে, সে যদি রাজনৈতিক আশ্রয় চায় তবে সে বড় ধরনের সাজার হাত থেকে বেঁচে যাবে। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, নূর হোসেনকে যারা রাজনৈতিক আশ্রয় দিতো তারাই মূলত চাচ্ছে নূর হোসেন যাতে ফিরে না আসতে পারে। এজন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে নূর হোসেনের আশ্রয় দাতারা। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ এবং ভারতীয় দূতাবাসে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি সরকারের আমল থেকে নূর দীর্ঘদিন পালিয়ে ছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রভাবশালী উপদেষ্টা তাকে দেশে ফিরে আসতে সব ধরনের সহায়তা করেছিলেন। এই উপদেষ্টা ইন্টারপোলের তালিকা থেকে নূর হোসেনের নাম বাদ দিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দিয়েছিল। সূত্র জানিয়েছে, সরকারের একজন উপদেষ্টা, একজন মন্ত্রীসহ একাধিক সংসদ সদস্য সরাসরি নূর হোসেনকে আশ্রয় দিত এমন তথ্য গণমাধ্যমে এসেছে। নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান নূর হোসেনকে ভারতে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন এবং এ বিষয়ে তাদের ফোনালাপও প্রকাশ হয়েছে। ভারতের কলকাতা পুলিশের কাছে গ্রেফতার হয়ে নূর হোসেন ৮ দিনের রিমান্ডে রয়েছে। ভারত সরকার আনুষ্ঠানিক ভাবে তাকে গ্রেফতারের বিষয়ে জানিয়ে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে তার সর্ম্পকে জানতেও চেয়েছে দেশটির পুলিশ। নূর হোসেন গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছে। উল্লেখ্য, গত ২৭ এপ্রিল নারায়গঞ্জের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম এবং আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাত জনকে অপহরণের পর খুন করে শীতলক্ষ্যা নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে র্যা ব-১১ অধিনায়ক তারেক সাঈদ এবং দুই কর্মকর্তা আরিফ হোসেন ও রানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্তার কথা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।