নারায়ণগঞ্জ কন্ট্রাক্ট কিলিংয়ের টাকা কোথায়

3 rab officerসিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ রাত তখন প্রায় পৌনে ৫টা। র‌্যাব সদরের ইন্ট্রারগেশন সেল। আলাদা দুটি কক্ষের চেয়ারে বসা র‌্যাব-১১’র সাবেক দুই কর্মকর্তা আরিফ হোসেন ও এম.এম রানা। বাইরের একটি কক্ষ থেকে র্যা ব সদরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা চিৎকার করে বলে উঠলেন, ‘আরিফ, অনেক সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। এখনো সত্য কথা বলো।’ আরিফ বলে উঠলেন, ‘স্যার, আমি একটু তারেক স্যারের (লে. কর্নেল তারেক সাঈদ) সঙ্গে কথা বলবো। শীর্ষ কর্মকর্তার মোবাইল ফোন থেকে সঙ্গে সঙ্গে ফোন গেল তারেক সাঈদের মোবাইলে। ‘তারেক তোমার সঙ্গে আরিফ কথা বলতে চায়। তারেক আরিফকে এখনও স্বীকার করতে বলো, নইলে কিন্তু ওদের এখনই লকাপে ঢোকাবো।’ শীর্ষ কমকর্তার এমন শক্ত কথা শুনে কৌশলের আশ্রয় নেয় তারেক সাঈদ। ‘তোমার কোনো কিছু জানা থাকলে বলো’ নরম ভাষায় আরিফকে বলে তারেক। ২৭ এপ্রিল নজরুল ইসলামসহ ৭ জনকে অপহরণের পর গভীর রাতে র‌্যাব-১১’র সাবেক সিও তারেক সাঈদের সঙ্গে ওই দুই কর্মকর্তাকেও র‌্যাব সদরে ডেকে আনা হয়। ইতিমধ্যে আরো খানিকটা সময় পোরিয়ে যায়। ঘড়ির কাটা তখন প্রায় সোয়া ৫টার কাছাকাছি। সময় ক্ষেপন না করে আরিফ ও রানা দুজনেই ‘নারায়ণগঞ্জের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ ৭ জনকে অপহরণের ঘটনার বর্ণনা দেওয়া শুরু করেন। অপহরণের ৮ ঘণ্টার মধ্যেই অপহৃতদের হত্যা করে শীতালক্ষ্যা নদীতে ডুবিয়ে দেওয়া হয় বলে জানান তারা। ঘটনার বর্ণানা শুনে স্তব্ধ হয়ে যান র‌্যাব সদরের কর্মকর্তরা। ‘কেন এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড, কোনো বড় ধরনের অর্থ লেন-দেন হয়েছিল কিনা র‌্যাব সদরের এমন প্রশ্নের জবাবে আরিফ ও রানা জানান, ‘তারা দুজনেই শুধু সিও’র (তারেক সাঈদ) নির্দেশ পালন করেছেন। অর্থ লেনদেন হয়ে থাকলে তা শুধুই জানেন সিও।’ র‌্যাব সদরে জিজ্ঞাসাবাদে অপহরণের সকল তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর ২৯ এপ্রিল অভিযুক্ত তিন কর্মকর্তাকে র‌্যাব থেকে সেনা ও নৌ-বাহিনীতে ফেরৎ পাঠানো হয়। ওই দিনই অপহৃত ৬ জন এবং এর একদিন পর ৩০ এপ্রিল বাকি এক জনের লাশ শীতালক্ষ্যা নদীতে ভেসে ওঠে। ২৯ এপ্রিল নিহত ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহিদ চেয়ারম্যান সংবাদ সম্মেলনে জানান, নূর হোসেনের কাছ থেকে র‌্যাব-১১’র সিও ৬ কোটি টাকা নিয়ে ৭ জনকে হত্যা করেছে। নারায়ণগঞ্জ পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদেও ৬ কোটি টাকা নিয়ে হত্যার বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে। যা আরিফ ও রানা তাদের আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতেও উল্লেখ করেছেন। এদিকে নারায়ণগঞ্জ পুলিশের গঠিত তদন্ত কমিটির একটি সূত্র এবিসি নিউজ বিডিকে জানায়, ‘কন্ট্রাক্ট কিলিংয়ে নূর হোসেনের দেওয়া সেই ৬ কোটি টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে তারা সন্দিহান রয়েছেন। কারণ হিসেবে কমিটি আরো জানায়, আলোচিত ৬ কোটি টাকাই মন্ত্রী পুত্র তারেক সাঈদের শ্যালক দিপু চৌধুরীর কাছে ছিল। কোথায় এই টাকা, দিপু চৌধুরীই বা কোথায়? তা তাদের জানা নেই। হত্যায় লেন-দেন হওয়া টাকা উদ্ধার চাঞ্চল্যকর এই মামালার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ।’ উল্লেখ্য, গত ২৭ এপ্রিল একটি মামলায় হাজিরা দিয়ে ঢাকায় আসার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারসহ ৭ জনকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের শীতালক্ষ্যা নদী থেকে নজরুল ও চন্দন সরকারসহ অপহৃত ৬ জনের এবং এর একদিন পর ১ মে বাকি ১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। অপহরণে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় র‌্যাব-১১’র সিও লে.কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির কারণে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মনোজকান্তি বড়াল ও জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলামকে ২৯ এপ্রিল প্রত্যাহার করা হয়। অপহরণের পর হত্যায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ স্পষ্ট হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ৫মে তারেক সাঈদ, আরিফ হোসেনকে সেনাবাহিনী থেকে এবং নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের সাবেক প্রধান লে. কমান্ডার এম.এম রানাকে নৌ-বাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এরা তিন জনই বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ