রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ঋণ বিতরণে মন্দা
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে আমানত সংগ্রহে প্রবৃদ্ধি হলেও ঋণ বিতরণ ঋণাত্বক পর্যায়ে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সরকারি ব্যাংকে ১৫ দশমিক ৩২ শতাংশ আমানত বাড়লেও ঋণ কমে দাঁড়িয়েছে (-) পাঁচ দশমিক ২৪ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ঋণ ও আমানতের গড় অনুপাত (এডিআর) সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতে ৭০ দশমিক ১৪ শতাংশ হলেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে এ অনুপাত মাত্র ৫৬ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো মোট আমানতের সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ এবং ইসলামী রীতিতে পরিচালিত ব্যাংকগুলো আমানতের সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারে। বিশ্লেষকরা এর কারণ হিসেবে বলছেন, রাজনৈতিক অনিশ্চিয়তা ও গ্যাস, বিদ্যুৎ সহ অবোকাঠামোগত সমস্যার কারণে গত এক বছর যাবৎ দেশে অব্যাহতভাবে কমছে বিনিয়োগ। এছাড়া হলমার্ক, বিসমিল্লার ঋণ জালিয়াতিসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে অনিয়ম দুর্নীতির কারণে ঋণের দীর্ঘসূত্রিতা বেড়ে গেছে। যার কারণে উদ্যোক্তারা নতুন করে ঋণ নিচ্ছে না ফলে কমেছে ঋণ বিতরণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ ২৪ এপ্রিলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের রাষ্ট্রীয় খাতের চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে রূপালী ব্যাংকের অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও খারাপ অবস্থা দাঁড়িয়েছে সোনালী, জনতা, ও অগ্রণী ব্যাংক। এ সময়ে সোনালী ব্যাংকে ১৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ আমানত প্রবৃদ্ধি হলেও ঋণ বিতরণ কমেছে (-) ১১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। জনতার ৯ দশমিক ৮ শতাংশ আমানত বাড়লেও ঋণ কমেছে (-) চার দশমিক ৫৬ শতাংশ। অগ্রণী ব্যাংকে ১৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ আমানত প্রবৃদ্ধি হলেও ঋণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে (-) ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ। রূপালী ব্যাংকের আমানত প্রবৃদ্ধি ৩২ দশমিক ০৭ শতাংশ হলেও আলোচ্য সময়ে ঋণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ৮৩ শতাংশ। বড় তিনটি ব্যাংকের ঋণ কমার প্রভাবে রাষ্ট্রীয় মালিকানার চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের গড় ঋণ বিতরণ (-) পাঁচ দশমিক ২৪ শতাংশ অর্থ্যাৎ ঋণাত্বক ধারায় নেমে এসেছে। আলোচ্য সময়ে ঋণ ও আমানতের গড় অনুপাত (এডিআর) দাঁড়িয়েছে ৭১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত তিন বাণিজ্যিক ব্যাংকসহ বেসরকারি এবং বিদেশি খাতের ১৮টি ব্যাংকের ঋণ প্রবৃদ্ধি ঋণাত্বক পর্যায়ে রয়েছে। ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থায় মোট আমানত রয়েছে ছয় লাখ ৪৪ হাজার ১৮১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। আলোচ্য সময়ে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৭০ হাজার ৩৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এ সময়ে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় গড় আমানত বেড়েছে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। আর ঋণ বেড়েছে মাত্র আট দশমিক ৩১ শতাংশ। সে হিসেবে আমানতের তুলনায় ঋণ প্রবৃদ্ধি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ১৫ দশমিক ৩২ শতাংশ আমানত বাড়লেও ঋণ কমে দাঁড়িয়েছে (-) পাঁচ দশমিক ২৪ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ঋণ ও আমানতের গড় অনুপাত (এডিআর) সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতে ৭০ দশমিক ১৪ শতাংশ হলেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে এ অনুপাত মাত্র ৫৬ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানার চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের গড় ঋণ বিতরণ (-) পাঁচ দশমিক ২৪ শতাংশ।আর আমানতে গড় প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ৩২ শতাংশ। এতে এসব ব্যাংকের এডিআর দাঁড়িয়েছে ৫৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। রাষ্ট্রীয় মালিকানার চার বিশেষায়িত ব্যাংকে ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ আমানত প্রবৃদ্ধির বিপরীতে ঋণ বেড়েছে মাত্র ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। এসব ব্যাংকের এডিআর দাঁড়িয়েছে ৭৫ দশমিক ৯১ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে আমানত প্রবৃদ্ধির ১৬ দশমিক ৫৭ শতাংশেরর বিপরীতে ঋণ বেড়েছে ১৩ দশমিক ২৭ শতাংশ। তাদের এডিআর রয়েছে ৭৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোতে আমানত রয়েছে ১৩ দশমিক ২৬ শতাংশ আর ঋণ বিতরণ (-১.২)শতাংশ অর্থ্যাৎ ঋণাত্বক ধারায় রয়েছে। এ সময় তাদের এডিআর দাঁড়িয়েছে ৫৯ দশমিক শূন্য চার শতাংশ। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ও সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য জায়েদ বখত বলেন, দেশে ব্যাংকিং খাতে হলমার্ক বিসামিল্লাসহ বড় বড় ঋণ কেলেঙ্কারি গ্রাহক-ব্যাংক আস্থা নষ্ট করেছে। ব্যাংকগুলো এখন ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে আগের তুলনায় সতর্ক হয়েছে। যার কারণে ঋণ বিতরণে দীর্ঘসূত্রিতা বেড়ে গেছে। এছাড়া রাজনৈতিক অনিশ্চিয়তা ও গ্যাস, বিদ্যুৎ সহ অবোকাঠামোগত সমস্যা থাকায় বাজারে ঋণের চাহিদা কম। জায়েদ বখত বলেন, এসব কারণে “ব্যবসা-বাণিজ্যে এক ধরনের স্থবিরতা থাকায় অনেক ভালো ব্যবসায়ী ঋণ নিচ্ছেন না।” যার ফলে আমানতের তুলনায় ঋণ বিতরণ কমে গেছে।