চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতা ভারতের পর্যবেক্ষণে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের কঠোর সমালোচনার পর চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক দৃঢ় করার প্রচেষ্টাকে পশ্চিমাদের প্রতি উপেক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ৫ জানুয়ারির প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পর পশ্চিমাদের বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে শেখ হাসিনার কূটনীতিক কৌশল সীমিত হয়ে গেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বেইজিংয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাইপ্রোফাইল সফর, সেখানে দুই দেশের মধ্যে সক্রীয় অংশিদারিত্বের অঙ্গিকার এমনিতেই উষ্ণ সম্পর্ককে আরো মজবুত করার পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সর্বশেষ কূটনৈতিক কৌশল প্রতিবেশী দেশ ভারতের অগোচরে থাকবে না। বিশেষ করে যখন হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতা নরেন্দ্র মোদি দেশটির ক্ষমতায় রয়েছেন। মোদি এমনিতেই চীনকে সাম্রাজ্যবাদী হিসেবে সমালোচনা করে আসছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর শহিদুজ্জামান বলেন, নয়াদিল্লি প্রাকৃতিকভাবেই এ সফরের বিষয়ে সন্দেহপ্রবণ হবে। একইসঙ্গে তারা এটাও বুঝবে যে, চীন অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা দিলে বিদ্যমান আওয়ামী সরকার টিকতে পারবে। চীনে হাসিনার ৬ দিনের সফরে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা অনেকগুলো চুক্তি করেছেন। যার মধ্যে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর, যৌথ ব্যবস্থাপনায় কয়লা বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণসহ বিভিন্ন চুক্তি রয়েছে। তাছাড়া সম্পর্কের উন্নয়নের ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে কূটনীতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৪০ বছরপূর্তী ২০১৫ সালে উদযাপনের বিষয়ে ঐকমত্য হয়। গত ৪০ বছর ধরে ঢাকা চীনের সঙ্গে মজবুত সম্পর্ক রক্ষা করে আসছে। যা দেখা গেছে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা কার্যক্রম, যোগাযোগ ও আবকাঠামোগত প্রকল্পে অংশিদারিত্বের ক্ষেত্রে। তবে সর্বশেষ শেখ হাসিনার চীন সফরকে চীন, রাশিয়া ও জাপানের মতো দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন ঢাকার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা। কারণ এদেশগুলো সরকারের বৈধতা নিয়ে পশ্চিমাদের মতো উদ্বেগ দেখায়নি। ৫ জানুয়ারির সহিংস ও বিরোধীদলগুলোর বর্জন করা নির্বাচনের পর ফলাফলকে বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে সমালোচনা করে নতুন নির্বাচন দেওয়ার দাবি করে আসছে পশ্চিমারা। ফলে হাসিনার চীন সফরে বাণিজ্যিক সুবিধার বাইরে আরো অনেক ইস্যু রয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আরেক প্রফেসর ইমতিয়াজ আহমেদ। নির্বাচনের সমালোচনা ও সরকারের বৈধতা প্রশ্নে পশ্চিমাদের অবস্থানের কারণে চীন জাপানের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ় করতে চাইছেন হাসিনা। উপেক্ষা করছেন পশ্চিমাদের। সাম্প্রতিক তার চীন ও জাপান সফরে বিভিন্ন অংশিদারিত্ব ও কৌশলগত চুক্তি থেকে তা স্পষ্ট। ভারত শেখ হাসিনার চীন সফরকে তীক্ষ্ণভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। দেশটির প্রভাবশালী মিডিয়া দ্য হিন্দু সবিস্তার এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ চীন সম্পর্ক নিয়ে সামনের দিনগুলোতে মোদি সরকার আমাদের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করে তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে। ভারতের নির্বাচনের প্রচারণার সময় অবৈধ বাংলাদেশি ইস্যুতে উস্কানিমূলক অনেক বক্তব্য দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। বাংলাদেশ চায় ভারতের সঙ্গে সীমান্ত চিহ্নিকরণ, তিস্তার পানি বন্টন ও অন্যান্য ইস্যু নিষ্পত্তি হোক। ২৫ জুন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের তিনদিনের সফরে এসব বিষয়ে কথা বলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা। সেখানকার প্রাপ্তির ওপর নির্ভর করবে অনেক কিছু।