জিয়ার পুরো পরিবার খুনি: শেখ হাসিনা
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পুরো পরিবারকে খুনি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শেষ দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এ মন্তব্য করেন। এ ছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর মোশতাকের রাষ্ট্রপ্রধান ও জিয়াউর রহমানের সেনাপ্রধান হওয়া; ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে খালেদা জিয়ার ‘জ্বালাও-পোড়াও’ কর্মসূচি; সুইস ব্যাংকে টাকা পাচার, আওয়ামী লীগের অতীত ইতিহাসসহ তাঁর শাসনামলের নানা বর্ণনা তুলে ধরে বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার ও গত পরশু বুধবার একই স্থানে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান কর্মীশূন্য ছিল। তবে আজ শেষ দিনের অনুষ্ঠানস্থলে লোক সমাগম ছিল ব্যাপক।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের পুরো পরিবার খুনি। অন্যকে সরিয়ে বন্দুকের নলে ক্ষমতায় গিয়ে সে পথেই ক্ষমতা হারান জিয়াউর রহমান।’ তিনি বলেন, ১৯৮১ সালে খুন হন জিয়া, এর ৯ বছর পর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাঁর স্বামী জিয়াউর রহমান হত্যার জন্য এরশাদকে দায়ী করেন। কিন্তু জিয়া হত্যার পর এরশাদের কাছ থেকেই তিনি দুটি বাড়ি নিয়েছেন। জিয়ার খুনের সুফল ভোগ করছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া তাঁকেও (শেখ হাসিনাকে) হত্যা করার চেষ্টা করেছেন। খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানও একজন খুনি।
মোশতাক আ.লীগের কুলাঙ্গার বক্তব্যে খন্দকার মোশতাককে আওয়ামী লীগের ‘কুলাঙ্গার’ আখ্যায়িত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের পর ‘কুলাঙ্গার’ মোশতাক নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেছিলেন। এরপর তিনি জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করেছিলেন।
আ.লীগ হীরার খণ্ড, কাটলেই দ্যুতি ছড়াবে ১৯৭৫-এর পর থেকেই আওয়ামী লীগ ভাঙার ষড়যন্ত্র হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ হীরার খণ্ড, তাকে যতই কাটা হবে, ততই দ্যুতি ছড়াবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোশতাক এসে আওয়ামী লীগকে ভেঙে নতুন নামে দল গঠন করতে চেয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি সভাপতি হওয়ার আগে আওয়ামী লীগকে ভাঙার ষড়যন্ত্র হয়েছে। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে।
বঙ্গবন্ধু হত্যায় ফারুকদের সফলতা চেয়েছিল জিয়া বিবিসি বাংলায় বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ফারুকের এক সাক্ষাত্কারের উদ্ধৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তাদের (ফারুকদের) সম্পর্ক ছিল। জিয়াও তাদের এ কাজে সফলতা চেয়েছিল।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ইতিহাস বিশাল ইতিহাস, এত কম সময়ে বলে শেষ করা যাবে না। বাঙালির সব অর্জনের পেছনে আছে আওয়ামী লীগের অবদান।’
পাচার করা টাকা এনেছি, সুইস ব্যাংকেরও আনব প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সম্প্রতি সুইস ব্যাংকে রাখা দেশের টাকা নিয়ে কথা বলা হচ্ছে। আমরা ক্ষমতায় থাকলে সুইস ব্যাংকে কে কত টাকা রেখেছে, তা বের করব। শুধু বেরই করব না, দেশে ফিরিয়ে আনব। অতীতে যেমন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলের পাচার করা টাকা বিদেশ থেকে ফেরত এনেছি। সুইস ব্যাংকে রাখা টাকাও আমরা ফেরত আনব।’
অন্যরা ক্ষমতায় আসে খেতে, আমরা কাজ করতে ১৯৭১ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত ক্ষমতায় আসা দলগুলোর নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অন্য দলগুলো খেতে ক্ষমতায় আসে। আর আওয়ামী লীগ আসে দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে। আমরা কাজ করি মনের টানে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী দেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘দেশের ৪ কোটি ৮০ লক্ষ লোক এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। আমাদের শাসনে দেশের ৫ কোটি মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উঠে এসেছে।’
আ.লীগ বিদেশের প্রভুদের পায়ে ধরে না প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রেললাইন তুলে ফেলে, জ্বালাও পোড়াও করে, মানুষ খুন করে খালেদা জিয়া ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে পারেননি। নির্বাচন ঠেকাতে না পেরে তিনি বিদেশি প্রভুদের পায়ে কান্না করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ কখনো বিদেশের প্রভুদের পায়ে ধরে না। আওয়ামী লীগের শক্তি এ দেশের মানুষ।’
বঙ্গবন্ধুর সময়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে বাংলাদেশে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই প্রবৃদ্ধি যারা চায় নাই, তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। এরপরও ক্ষান্ত হয়নি, জেলে ঢুকে ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকেও তারা হত্যা করেছে।’