সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট পাস
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ জাতীয় সংসদে আগামী মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট পাস হয়েছে। বর্তমান সরকারের প্রথম বাজেটে আলোচনার জন্য এবার সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সাংসদেরা উপস্থিত থেকে আলোচনায় অংশ নেন।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী আজ রোববার অধিবেশনের শুরুতেই জানিয়েছিলেন নয়টি মঞ্জুরি দাবিতে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির একজন ও একজন স্বতন্ত্র সাংসদ আলোচনা করবেন। তখন পর্যন্ত মঞ্জুরি দাবি ও ছাঁটাই প্রস্তাব দেওয়া অনেক সাংসদই অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু, পরবর্তী সময়ে বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সাংসদেরা আরও কয়েকটি দাবিতে আলোচনা করেন। মোট ৫৬টি মঞ্জুরি দাবির ওপর আলোচনা আসে। নির্দিষ্টকরণ বিল পাসের সময় বিরোধী দল সংসদে ছিল।
এর আগে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল সকাল ১০টায় অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনে চলতি অর্থবছরে দুই লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পাস হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নেতা রওশন এরশাদ উপস্থিত ছিলেন।
এই বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ধরা হয়েছে ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। তবে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে এডিপিতে পাঁচ হাজার ৬৮৫ কোটি ৪৮ টাকার কর্মসূচি রয়েছে। সব মিলে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের এডিপিতে মোট খরচ দেখানো হচ্ছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
নতুন বছরে অনুন্নয়ন ব্যয়ের পরিমাণ ধরা হয়েছে এক লাখ ৫৪ হাজার ২৪১ কোটি টাকা।
নির্দিষ্টকরণ বিল পাস: আগামী অর্থবছরের বাজেট ব্যয়ের বাইরে সরকারের বিভিন্ন ধরনের সংযুক্ত দায় মিলিয়ে মোট তিন লাখ ৮২ হাজার ৩৪০ কোটি এক লাখ ২১ হাজার টাকার নির্দিষ্টকরণ বিল জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে গতকাল পাস করা হয়েছে। এর মধ্যে সাংসদদের ভোটে গৃহীত অর্থের পরিমাণ দুই লাখ ৩০ হাজার ৪১৭ কোটি ১০ লাখ ৯৪ হাজার টাকা এবং সংযুক্ত তহবিলের ওপর দায় এক লাখ ৫১ হাজার ৯২২ কোটি ৯০ লাখ ২৭ হাজার টাকা।
সংযুক্ত তহবিলের দায়ের মধ্যে ট্রেজারি বিলের দায় পরিশোধ, হাইকোর্টের বিচারপতি ও মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রককে বেতন ইত্যাদি দায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে জানা যায়। উল্লেখ্য, মোট বাজেট ব্যয়ের মধ্যে বৈদেশিক অনুদান রয়েছে। সেই অনুদান বাদ দিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে নির্দিষ্টকরণ অর্থ মঞ্জুরের জন্য সংসদে পাস করা হয়েছে।
মঞ্জুরি দাবি ও ছাঁটাই প্রস্তাব: আগামী বছরের বাজেটের ওপর সংসদে উত্থাপিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খাতের ৫৬টি মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সাংসদেরা ২৪৯টি বিভিন্ন ধরনের ছাঁটাই প্রস্তাব আনেন।
ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো ছিল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, জনপ্রশাসন, আইন, স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নামে মঞ্জুর দাবির বিপরীতে।
তবে বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সাংসদদের আলোচনা সত্ত্বেও ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে বাতিল করা হয়।
২৪৯টি বিভিন্ন ধরনের ছাঁটাই প্রস্তাবে মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খাতে ব্যয় কমিয়ে সিংহভাগ ক্ষেত্রে মাত্র এক টাকা বরাদ্দ দেওয়া, প্রতীক ছাঁটাই প্রস্তাবে ১০০ টাকা ও ৫০০ টাকা হ্রাস করা, মিতব্যয় ছাঁটাই প্রস্তাবে এক হাজার টাকা হ্রাস করার প্রস্তাব করা হয়।
পাল্টাপাল্টি জবাব
বাজেটের অঙ্ক: আগামীকাল থেকে শুরু হওয়া ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্য পাস হওয়া বাজেট ব্যয় দুই লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকার মধ্যে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে এক লাখ ৮২ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা। ফলে সামগ্রিক বাজেট ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে ৬১ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। অর্থাত্ মোট দেশজ উত্পাদনের তুলনায় ঘাটতি ধরা হয়েছে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে অনুদান বাদ দিলে ঘাটতি গিয়ে দাঁড়াবে ৬৭ হাজার ৫৫২ কোটি টাকায়। শতকরা হিসাবে যা ৫ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে ছয় হাজার ২০৬ কোটি টাকার অনুদান পাওয়া যাবে বলে ধরে নেওয়া হয়েছে।