থানা হাজতে বিয়ে !
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে আল আমিন নামের এক যুবককে থানায় ধরে নিয়ে আসা হলো। তবে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত না করে পরদিন থানায় অভিযুক্ত তরুণের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ের আয়োজন করে বসেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)৷
এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল মিল্লাত ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি। বিয়ে শেষে আল আমিনকে হাজতখানা থেকে বের করে আনা হয়। সুখী-দাম্পত্য জীবন কামনা করে ছেড়ে দেওয়ার পর ঘটে যায় বিপত্তি। থানা এলাকা অতিক্রম করামাত্র মেয়েটিকে রেখে কেটে পড়েন আল আমিন। আর বিয়ের সময়কার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শ্বশুরবাড়ি গিয়ে গতকাল শনিবার মেয়েটিকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসার কথা ছিল আল আমিনের৷ তবে তাঁর হদিসই মেলেনি৷ পুলিশ হেফাজতে কথিত ওই বিয়ের ঘটনাটি ঘটে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে।
কুলিয়ারচর থানা ও একটি বেসরকারি সংস্থা ‘পপি’র আইন কেন্দ্রে দায়ের করা অভিযোগ থেকে জানা গেছে, আল আমিনের (২২) বাড়ি পৌর শহরের পশ্চিম গাইলকাটা মহল্লায়। আর মেয়েটি (১৬) থাকে পৌর শহরে৷ দুজনেই পূর্বপরিচিত। একপর্যায়ে বন্ধুত্বও গড়ে ওঠে। আল আমিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু পশ্চিম গাইলকাটার মান্না মিয়া। সাত মাস আগে মান্না মেয়েটিকে ডেকে নিয়ে যান। পরে গাইলকাটার এক বাড়িতে নিয়ে আল আমিন মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন। এতে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। এরপর বিচার চেয়ে সমাজপতিদের কাছে অনেক ঘুরে ব্যর্থ হন মেয়েটির বাবা।
উপায় না দেখে মেয়েটি পপির স্থানীয় শাখার আইন বিভাগে নালিশ করে। সংগঠনের কর্মীদের সহায়তায় ২৪ জুন আল আমিনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মেয়েটি থানায় লিখিত অভিযোগ করে৷ ওই রাতেই বাড়ি থেকে আল আমিনকে পুলিশ ধরে নিয়ে আসে। আটকের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর কিছুক্ষণের মধ্যে আল আমিনকে ছাড়িয়ে নিতে সমাজপতিদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে যায়। ছাড়া পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই—ওসির এমন বক্তব্য শুনে সমাজপতিদের কাছ থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসে। সেই প্রস্তাব গ্রহণ করে পরদিন বুধবার (২৫ জুন) রাতে বিয়ের আয়োজন করেন ওসি।
বিবাহ নিবন্ধনকারী (কাজি) যখন বিয়ে পড়ান, তখন আল আমিন হাজতখানায় ছিলেন৷ আর মেয়েটিকে বসানো হয় হাজতখানার বাইরে। নুরুল মিল্লাত ও গিয়াস উদ্দিন ছাড়াও পৌর কাউন্সিলর সেলিম মিয়া, সাবেক কাউন্সিলর মুর্শিদ মিয়া এবং সমাজপতি সিদ্দিক মিয়া উপস্থিত ছিলেন। সে সময় সিদ্ধান্ত হয়, শনিবার (গতকাল) দুপুরে আল আমিন পরিবারের ১৫ জনকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি যাবেন এবং স্ত্রীকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসবেন। গতকাল দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়৷ রাত নয়টা বেজে যায়৷ তবু আল আমিনের হদিস মেলেনি। তাঁর মুঠোফোনও বন্ধ ছিল৷
আল আমিনের বাবা শিশু মিয়া জানান, থানা থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তাঁর ছেলে আর বাড়ি আসেনি।
ধর্ষণের শিকার মেয়ের সঙ্গে অভিযুক্তের বিয়ের অনুষ্ঠানে জনপ্রতিনিধি উপস্থিত থাকতে পারেন কি না—জানতে চাইলে নুরুল মিল্লাত বলেন, ‘আইনের দিক দিয়ে ভাবলে পারা যায় না। তবে আমাকে ডেকে নিয়ে বিয়ের কথা জানানো হয়েছে। পরে উঠে আসতে পারেনি।’
ওসি দেলোয়ার হোসেন বলেন, সমাজপতিরা যখন কোনো বিষয়ে এক হন, তখন আর কী করা। তবে তিনি স্বীকার করেন, আইনের দিক দিয়ে এ ধরনের আয়োজনের কোনো সুযোগ নেই।
জিল্লুর রহমান মহিলা কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সমীর চক্রবর্তী বলেন, একজন নারীর কাছে ধর্ষক কখনোই স্বামী হতে পারে না। আবার থানাহাজতে রেখে বিয়ে করানো হলে ছেলেটির পক্ষে তা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করা কঠিন। এককথায়, এ ধরনের উদ্যোগ সফল হওয়ার সুযোগ নেই।