পানিতে থই থই বগুড়া শহর, তিনজনের প্রাণহানি

Bogura বগুড়ারিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, বগুড়াঃ বগুড়া শহরে গতকাল শনিবার রাত থেকে আজ রোববার সকাল পর্যন্ত টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, দোকানপাট ও অফিস-আদালত। জলাবদ্ধতায় থমকে গেছে জনজীবন। এদিকে, দেয়ালচাপা, বজ্রপাত ও বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে তিনজনের প্রাণহানি ঘটেছে।

বর্ষণের পরিমাণ
বগুড়া আবহাওয়া অধিদপ্তর কার্যালয়ের উচ্চ পর্যবেক্ষক আফরোজা খাতুন জানান, গতকাল রাত সাড়ে ১১টা থেকে আজ বেলা পৌনে ১১টা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১১ ঘণ্টা টানা বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই সময়ে মোট ১৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি জানান, এর আগে ২০১১ সালের ১১ আগস্ট বগুড়ায় ২১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল। চার বছর পর আজ আরেক দফা রেকর্ড পরিমাণ ভাঙা বৃষ্টিপাত হলো।

টানা বর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা

শহরের বাসিন্দারা জানান, সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হয়। এ সময় রাস্তাঘাট ছিল প্রায় জনশূন্য। সকাল আটটার মধ্যে শহরের পথঘাট হাঁটুপানিতে ডুবে যায়।

সকাল সাড়ে আটটায় সরেজমিনে দেখা গেছে, পৌরসভার ময়লা-আবর্জনায় ভরা নালাগুলো দীর্ঘদিন সংস্কার না থাকায় ময়লা পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে শহরের সাতমাথা কবি নজরুল ইসলাম সড়ক, ঝাউতলা থেকে বড়গোলা সড়ক, চকজাদু সড়ক, মালগুদাম লেন, জলেশ্বরীতলা আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠ সড়ক, সাতমাথা-পার্ক রোড, সাতমাথা টেম্পল সড়ক, জিলা স্কুল সড়ক, সেউজগাড়ির সূত্রাপুর ঈদগাহ মাঠ থেকে জামতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সেউজগাড়ি কারমাইকেল সড়কসহ শহরের অধিকাংশ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। বিকেল পর্যন্ত এসব সড়কে পানি জমে ছিল। জলাবদ্ধতার কারণে শহরে সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ ছিল। এতে বিভিন্ন উপজেলা সদর থেকে শহরে আসা মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েন।

শহরের বৃন্দাবনপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল বারেক অভিযোগ করেন, শহরের এ রকম অবস্থার জন্য পৌরসভা দায়ী। শহরের কোনো নালা দিয়ে পানি নিষ্কাশন হয় না।

কলেজশিক্ষক নুরুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কাল থেকে কলেজ বন্ধ হবে। আজ না গেলেই নয়। অথচ সাতমাথা থেকে এ থানা মোড় পর্যন্ত আসতেই জামা-কাপড় ভিজে একাকার। বগুড়া এখন একটা ঘিঞ্জি শহর।’

জলেশ্বরীতলা এলাকার খেলার মাঠে জমে থাকা পানিতে কয়েকটি শিশুকে সাঁতার কাটতে দেখা গেছে।

চাকরিজীবী রাজীব সরকার বলেন, ‘খেলার মাঠে পানি জমে এখন রীতিমতো নদী। শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা কতটা নাজুক, সেটা এ চিত্র দেখলেই বোঝা যায়।’
জলাবদ্ধতা নিয়ে উদাসীন পৌরসভা
শহরজুড়ে জলাবদ্ধতার জন্য শহরবাসী পৌরসভার উদাসীন মনোভাবকে দায়ী করলেও বগুড়া পৌরসভার মেয়র এ কে এম মাহবুবর রহমান বলেন, পৌরসভার নালা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। তবে শহরের বিভিন্ন এলাকায় নালাতে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় পানি নিষ্কাশনে সাময়িক সমস্যা হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, অতিবৃষ্টির কারণে শহরজুড়ে এমন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
তিনজনের প্রাণহানি
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু হায়দার মো. ফায়েজুর রহমান জানান,  ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে শহরের দক্ষিণ বৃন্দাবনপাড়া এলাকায় আধা পাকা বাড়ির দেয়াল ধসে পড়ে স্বপ্না বেগম (৪০) নামে এক গৃহবধূ ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। তিনি দক্ষিণ বৃন্দাবনপাড়ার মতিউর রহমানের স্ত্রী।

এ ছাড়া সকালে সেউজগাড়ি কারমাইকেল সড়কে পানিতে তলিয়ে থাকা বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে অজ্ঞাতনামা এক রিকশা চালক নিহত হন।

দুপচাঁচিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুর রাজ্জাক জানান, আজ ভোররাতে সদর উপজেলার হেরুগঞ্জ গ্রামে বজ্রপাতে রহিম (১৬) নামের এক কলেজছাত্র মারা গেছে। বজ্রপাতে লুত্ফর রহমান নামে আরও এক ব্যক্তি আহত হন। তিনি দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ