এইচএসসির ইংরেজি ও গণিতের প্রশ্ন হুবহু ফাঁস হয়

Question Paper প্রশ্নপত্ররিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ ঢাকা বোর্ডের অধীন উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার ইংরেজি ও গণিত (তত্ত্বীয়) দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্র হুবহু ফাঁস হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে সরকারের গঠিত আন্তমন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি। এ দুটি বিষয়েরই ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের নমুনা পাওয়া গেছে ফরিদপুর থেকে। তবে ফাঁসের সুনির্দিষ্ট উৎস বের করতে পারেনি কমিটি।
পৌনে তিন মাস তদন্ত করে গতকাল রোববার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি। এতে ভবিষ্যতে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া ঠেকাতে বেশিসংখ্যক প্রশ্নের সেট ছাপিয়ে পরীক্ষার দিন সকালে লটারির মাধ্যমে সেট নির্ধারণ করে পরীক্ষা নেওয়াসহ চারটি মূল সুপারিশ করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর শিক্ষামন্ত্রী এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসকে গত সাড়ে পাঁচ বছরের ইতিহাসে ‘কালো দাগ’ উল্লেখ করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটাকে আমরা সহজভাবে নিইনি। তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসির ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠায় পরীক্ষাটি স্থগিত করা হয়। গত ১০ এপ্রিল এই পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অভিযোগ ওঠার পর পরীক্ষার আগের দিন, অর্থাৎ ৯ এপ্রিল রাতে তা স্থগিত করা হয়।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ১০ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সোহরাব হোসাইনের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিতে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। দুই দফায় সময় বাড়িয়ে গতকাল প্রতিবেদন দেওয়া হলো।
কমিটির তদন্তকালেই গণিতসহ এইচএসসির আরও কয়েকটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠলে তাও তদন্তের আওতায় নেয় কমিটি। গণিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২৮ মে। কমিটি সূত্রে জানা গেছে, ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের মুদ্রিত প্রশ্নপত্র পাওয়া গেছে এবং তা হুবহু ফাঁস হয়েছে। গণিত (তত্ত্বীয়) দ্বিতীয় পত্রের ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রও হুবহু হলেও সেটি ছিল হাতে লেখা। পরীক্ষার আগের রাতে গণিতের প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ উঠলে পরদিন অন্য সেটে পরীক্ষা নেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইংরেজি প্রশ্নপত্র ফাঁসের নমুনা পাওয়া গেছে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা থেকে এবং গণিতের নমুনা পাওয়া যায় ফরিদপুর সদর থেকে। দুটি ঘটনাই ফরিদপুরে হওয়ার কথা উল্লেখ করে কমিটি বলেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর হলে ফাঁসের উৎস বের করা সম্ভব। কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, প্রশ্নপত্র বিজি প্রেস থেকে ফাঁস হয়ে থাকতে পারে বলে তাঁদের ধারণা।
কমিটির সুপারিশ: কমিটির মূল চার সুপারিশের দুটি হচ্ছে মূলত তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর। এর একটি সুপারিশে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, সংশোধন ও প্রশ্ন নির্বাচনের কাজটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে করতে বলা হয়েছে। এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারীদের কাছ থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করে তা তথ্যভান্ডারে রাখা হবে। সেখান থেকে প্রশ্নপত্রের সেট তৈরির কাজটি হবে। একাধিক প্রশ্ন সেট অনলাইনে পরীক্ষার দিন সকালে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে পাঠানো হবে। এরপর স্থানীয়ভাবে প্রিন্টারে ছাপিয়ে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
পরের সুপারিশও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর। উল্লিখিত পদ্ধতিতে প্রশ্নের সেট করার পর একাধিক সেট সুরক্ষিত যন্ত্রের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে কয়েক দিন আগেই পাঠানো হবে। ওই যন্ত্রটিতে এমনভাবে সময় নির্ধারিত করা থাকবে যাতে পরীক্ষার দিন সকালের আগে তা খোলা না যায়। পরীক্ষার সময় প্রশ্নপত্র নির্ধারিত প্রিন্টারে ছাপিয়ে বিতরণ করা হবে। কমিটির দুই সদস্য বলেন, এ কাজের জন্য এই মুহূর্তে অবকাঠামোসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই। তবে দু-তিন বছরের মধ্যে সেটা সম্ভব হবে।
আরেকটি সুপারিশে ৫ কিংবা ১০টি প্রশ্নপত্রের সেট ছাপিয়ে পরীক্ষার দিন সকালে লটারির মাধ্যমে সেট নির্ধারণ করে পরীক্ষা নিতে বলা হয়েছে।
মূল চারটি সুপারিশের আরেকটিতে তদন্ত কমিটি বলেছে, মডারেটররাই কম্পোজ ও প্রুফ দেখার কাজ চূড়ান্ত করে দেবেন। বিজি প্রেসে শুধু ছাপার কাজ হবে।
কমিটি বিজি প্রেসের নিরাপত্তাব্যবস্থা শক্তিশালী করাসহ আরও কিছু সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে ফাঁসের সুনির্দিষ্ট উৎস বের করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি দিয়ে এটি বের করা সম্ভব নয়। ৩৫ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞদের মতামতও তুলে ধরা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘উদ্ঘাটনের চেষ্টা করেছি। একজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। সেই সূত্র ধরে চক্র বের করা যেতে পারে।’

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ