ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুল আদালতের রায়ে ১ যুগ পর নিজ কর্মক্ষেত্র ফিরে পেলেন প্রধান শিক্ষিকা
আবদুল হাই তুহিন, স্টাফ রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ ১৩ টি মিথ্যা মামলায় নির্দোষ প্রমানিত হয়ে অবশেষে দীর্ঘ ১ যুগ পর নিজ কর্মক্ষেত্র ফিরে পেলেন ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। চাকরি ফিরে পাওয়া শিক্ষিকার নাম এস.এম কানিস ফাতেমা। আদালতের রায় পাওয়ার পর বুধবার তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নিজ কর্মক্ষেত্রে যোগ দেন। ম্যানেজিং কমিটির পক্ষে যোগদানপত্র গ্রহণ করেন শিক্ষক প্রতিনিধি মোঃ নাজিম উদ্দিন ও আবদুল হামিদ। এ সময় প্রধান শিক্ষিকাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির নের্তৃবৃন্দ।
জানা যায়, ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুলে ১৯৯৯ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন কানিস ফাতেমা। কিন্তু ২০০২ সালের শেষ দিকে তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নাসির উদ্দিন পিন্টু কানিস ফাতেমাকে স্কুল থেকে বের করে দিয়ে তার রুমে তালা ঝুুলিয়ে দেন এবং তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও মোসারফ হোসেন। তারাও পরবর্তীতে উক্ত প্রতিষ্ঠানে নিজেদের অযোগ্য লোককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন এবং প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। একটা মামলা শেষ না হতেই আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। কেবল তাই নয় গত ১২ বছরে কমিটির সভাপতির সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় প্রতিষ্ঠানটির ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে রীতিমতো। অভিভাবকরা অবিলম্বে ম্যানেজিং কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কানিস ফাতেমার বিরুদ্ধে গত ১২ বছরে দুদকে ৫টি, নিম্ন আদালতে ৩টি, হাইকোর্টে ৪টি এবং সুপ্রীম কোর্টে ১টি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। দায়েরকৃত সবগুলো মামলায় রায়ে জয়ী হন কানিস ফাতেমা।
কানিস ফাতেমা নিজ কার্যালয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমি আমার অধিকার ফিরে পেয়ে অনেক আনন্দিত। কমিটির লোকজন গত ১২ বছরে আমাকে ১৩টি মিথ্যা মামলা দিয়ে কেবল সামাজিকভাবেই হেয় প্রতিপন্ন করেননি। আমাকে অর্থনৈতিকভাবেও পঙ্গু করে দিয়েছে। আমি মামলায় লড়াই করতে গিয়ে আমি আমার সমস্ত জায়গা জমি হারিয়েছি। আমি সৎ ছিলাম তাই আমি মামলায় জয়ী হয়েছি। এসময় তিনি প্রতিষ্ঠানটির হারানো ঐহিত্য ফিরে আনারও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুল একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু গত ১২ বছরে স্কুলের সুনাম ধুলায় মিশে গেছে। ম্যানেজিং কমিটির স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম দুর্নীতিতে পুরো প্রতিষ্ঠান আজ ধ্বংসের পথে। স্কুলের গচ্ছিত টাকাও তছরুপ করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
জানা যায়, গত ১২ বছরে একবার ও ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য মনোনয়ন ফরম নিলেও পরে কমিটির সভাপতির প্রত্যক্ষ চাপে মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য হন স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকরা। ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে মহিলা সংরক্ষিত পদে (২০১৩-১৫) ৩ হাজার টাকা ফি জমা দিয়ে আবেদন পত্র নেন আজিজুন নাহার ও জান্নাতুল ফেরদৌস। তারা দুজন সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, আমাদেরকে মনোনয়ন ফরম তুলতে বাধ্য করা হয়। অন্যথায় চাকরি হারানোর ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। অথচ ম্যানেজিং কমিটিতে সংরক্ষিত মহিলা সদস্যপদ শূণ্য আছে।
অভিযোগ উঠেছে, বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি (২০১৩-১৫) বিধি লঙ্ঘন করে নানা অনিয়ম মাধ্যমে গঠিত হয়েছে। যার সন্তান এই স্কুলে পড়াশোনা করে না তারা ও এখানকার অভিভাবক প্রতিনিধি। গত বছরের ২৩ অক্টোবর ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুলের ২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানীর অভিযোগ উঠে। তারা হলেন শাহাদাত হোসেন ও আবদুল হাকিম। ঐ সময় শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক ও কমিটির সভাপতির কাছে অভিযুক্ত ২ শিক্ষকের বিচার দাবি করেন। কিন্তু কমিটির সভাপতি মোসারফ হোসেন ১ শিক্ষকের (শাহাদাত হোসেন) কাছ থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাকে মওকুফ করে দেন। এ ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের হলে এর সত্যতা পায় মন্ত্রনালয়। তদন্ত কমিটির সুপারিশে বলা হয়, খন্ডকালীন শিক্ষক আবদুল হাকিমের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্তেঅনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রমানীত হওয়ায় তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। অভিযুক্ত শাহাদাত হোসেন রয়েছেন বহাল তবিয়তে।
এদিকে এ ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা রয়েছেন চরম আতঙ্কে। এমতাবস্থায় অভিভাবকরা বর্তমান কমিটির অপসারন দাবি করেন।
এ প্রসঙ্গে ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোসারফ হোসেনের বক্তব্য নিতে বারবার মোবাইলে কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তাসলিমা বেগম এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, কমিটির কোন অনিয়ম পেলে আমরা অবশ্যই কমিটি ভেঙ্গে দেব। প্রসঙ্গত, ১৯২০ সালে ঢাকার আজিমপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় এ স্কুলটি।