কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি ফ্রান্স-জার্মানি
স্পোর্টস ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ দ্বিতীয় পর্বের উত্তেজনাপূর্ণ এক খেলায় আলজেরিয়াকে ২-১ গোলে পরাজিত করেছে জার্মানি। এর আগে নাইজেরিয়াকে ২-০ গোলে পরাজিত করেছিল ফ্রান্স। আফ্রিকান দুই দেশের সাথে এ জয়ের ফলে কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হবে জার্মানি এবং ফ্রান্স। ফ্রান্স-নাইজেরিয়া: ম্যাচের ৬২ মিনিটে নিষ্প্রভ অলিভিয়ের জিরদকে তুলে কোচ দিদিয়ের দেশম নামান আন্তোনে গ্রিয়েজমানকে। আর তাতেই যেন জেগে ওঠে ফ্রান্স। এতক্ষণ বল দখল ও আক্রমণের ধারে নাইজেরিয়ার চেয়ে পিছিয়ে থাকা ফরাসিরা একের পর এক হানা দিতে থাকে প্রতিপক্ষের রক্ষণে। গোলের সুযোগও তৈরি হতে থাকে নিয়মিতই। কিন্তু গোল হলে তো! কখনো প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডার বল গোললাইন থেকে ফিরিয়ে দেন তো কখনো আবার ক্রসবার লক্ষ্যভেদে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। সেই সঙ্গে অনেকের মতে এই বিশ্বকাপের সেরা গোলরক্ষক ভিনসেন্ট এনিয়েমার দুর্দান্ত সব সেভ মিলিয়ে ফ্রান্সের যত প্রচেষ্টা মাথাকুঁটেই মরছিল। ব্রাসিলিয়ায় শেষ আটে ওঠার লড়াই তাই এগোচ্ছিল অতিরিক্ত সময়ের দিকেই। নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হতে যখন বাকি মাত্র ১১ মিনিট, তখনই একটা ভুল করে বসলেন সেই এনিয়েমা। যিনি ফ্রেঞ্চ লিগের সর্বশেষ মৌসুমে টানা ১০৬২ মিনিট তাঁর ক্লাব দল লিলার জালে বল ঢুকতে দেননি।এমন অবিশ্বাস্য অর্জনের স্মৃতি নিয়ে বিশ্বকাপে আসা নাইজেরিয়ার গোলরক্ষকের ভুলেই পল পগবার গোল। এই গোলই ফ্রান্সের জয় নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট ছিল কিন্তু একটা ভুল কখনো কখনো আরো ভুলের পথও খুলে দিতে পারে। নাইজেরিয়ার ক্ষেত্রে হল সেটাই। ডিফেন্ডার জোসেফ ইয়োবো করে বসলেন আত্মঘাতী গোল। কর্নার থেকে আসা বলে ফ্লিক করেন গ্রিয়েজমান। কিন্তু গোলে যাওয়ার আগে সেটি ইয়োবোর পা ছুঁয়ে যাওয়াতেই আত্মঘাতী। যদিও গোলটা ফ্রান্সের এ বদলি খেলোয়াড়ের নামে লেখা হলেই মানাত সবচেয়ে বেশি। তিনি মাঠে নামার পরেই না আক্রমণের তোড় বাড়ল ফ্রান্সের। আর তাতে ম্যাচের বেশিরভাগ সময়ই ‘সুপার ঈগল’দের সামনে নুয়ে থাকা ফ্রান্স ২-০ গোলের জয়ে ২০০৬-র পর আবার উঠল বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে। যেখানে ৪ জুলাই রিও ডি জেনিরোতে বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় তাঁদের অপেক্ষায় আরেক ইউরোপিয়ান ফুটবল পরাশক্তি জার্মানি। আলজেরিয়া-জার্মানি: গত রাতে পোর্তো আলেগ্রেতে জার্মানির বিপক্ষে ৩২ বছরের পুরনো বঞ্চনার প্রতিশোধ নিতেই যেন নেমেছিল প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের শেষ ১৬-তে খেলা আলজেরিয়া। যাদের আসলে দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার কথা ছিল ১৯৮২-র স্পেন বিশ্বকাপেই। কিন্তু তখনকার পশ্চিম জার্মানি অস্ট্রিয়ার সঙ্গে ‘সমঝোতার ম্যাচ’ খেলেই তাঁদের প্রথম রাউন্ডের বাঁধা পেরোতে দেয়নি বলে অভিযোগ করে আসছে আফ্রিকার এ দেশটি। এ ম্যাচের শুরু থেকে তাই প্রতিশোধের প্রতিজ্ঞাই যেন দেখা যাচ্ছিল আলজেরিয়ান ফুটবলারদের শরীরি ভাষায়। যদিও কাগজ-কলমের হিসাবে অনেকে এ ম্যাচটি নিতান্তই একপেশে হবে বলে অনুমান করেছিলেন। প্রথমার্ধের খেলা একপেশে হলও, তবে আলজেরিয়া নয়, কোণঠাসা হয়ে থাকল জার্মানিই। প্রথম ২০ মিনিটে আক্রমণের ঝড় বইয়ে দেওয়া আলজেরিয়ান স্ট্রাইকার ইসলাম স্লিমানির গোল ওই সময়ে অফসাইডের কারণে বাতিলও হল। পুরো ম্যাচজুড়েই সবার মন জিতে নেওয়া ফুটবল খেলেও অবশ্য শেষপর্যন্ত মন ভাঙ্গল আলজেরিয়ার। অতিরিক্ত সময়ে গিয়ে ২-১ গোলের হারে আর নতুন ইতিহাস গড়া হল না তাঁদের। ঘাম ঝরানো জয়ে শেষ আটে পৌঁছে যাওয়া জার্মানিও তাই টানা চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখতে পারল। প্রথমার্ধের শেষদিকে গুছিয়ে ওঠা জার্মানিও দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত করে তুলল আলজেরিয়ান রক্ষণকে। কিন্তু আলজেরিয়ান গোলরক্ষক রাইস এমবোলহির দৃঢ়তায় গোলশূন্য ড্রয়ে শেষ নির্ধারিত সময়। এ ৯০ মিনিটে না হলেও অতিরিক্ত সময়ের ৯০ সেকেন্ডের মধ্যেই গোলের দেখা পেয়ে যায় জার্মানি। থমাস ম্যুলারের নীচু ক্রস খুঁজে পায় গোলের খুব কাছাকাছি অবস্থান নেওয়া বদলি খেলোয়াড় আন্দ্রে শুর্লের পা। সেখান থেকে ফ্লিক করে লক্ষ্যভেদ করেন এ ফরোয়ার্ড। অতিরিক্ত সময়ের শেষ মিনিটে মেসুত ওয়েজিল ব্যবধান দ্বিগুণও করেন। কিন্তু ইনজুরি টাইমে আবদেল মুমিন জাবু একটা পরিশোধ করে দেওয়াতেই আরো বেশি আফসোস বাড়িয়ে বিদায় আলজেরিয়ার।