কিছু জানেন না তথ্যমন্ত্রী, পত্রিকার প্রকাশনা বাতিলের প্রসঙ্গ নিয়ে সংসদে আলোচনা।

2013-06-16-07-25-07-51bd6853bb0b4-information-minister

রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা, কিছু জানেন না তথ্যমন্ত্রী

 

পত্রিকার প্রকাশনা বাতিলের প্রসঙ্গ নিয়ে সংসদে আলোচনা।

 সরকারের উচ্চপর্যায়ের ইঙ্গিতে সংবাদপত্রের প্রকাশনা বাতিল করার ক্ষমতা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু গতকাল প্রথম আলোকে বলেছেন, মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কিছুই জানে না। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে না আসা পর্যন্ত তিনি মন্তব্য করতে চান না।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে অনির্ধারিত আলোচনায় জাতীয় পার্টির সাংসদ পীর ফজলুর রহমান বলেছেন, সংবাদপত্র বন্ধের ক্ষমতা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ফিরিয়ে দিলে তা রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহৃত হবে। বিষয়টি তিন জোটের রূপরেখার পরিপন্থী।
প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে ফজলুর রহমান বলেন, ‘পত্রিকায় দেখলাম, সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়ার এই ক্ষমতা এক সময় জেলা প্রশাসকদের হাতে ছিল। সরকার সেই ক্ষমতা আবার জেলা প্রশাসকদের হাতে ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে। বাতিল করা এ আইন ফিরিয়ে আনা হলে তাতে সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করা হবে।’
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পত্রিকা প্রকাশ হওয়ার কথা উল্লেখ করে সুনামগঞ্জ-৪ আসনের এই সাংসদ বলেন, ওই সব পত্রিকায় সরকারি দলের কোনো নেতার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকািশত হলে তিনি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সে সংবাদপত্রটি বন্ধের ব্যবস্থা করবেন। সুতরাং এ আইন করা যাবে না।
ফজলুর রহমান আরও বলেন, ‘আমরা জানি, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সংবাদপত্রের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উসকানি দিয়ে দেশে মৌলবাদী শক্তির উত্থান ঘটানোর চেষ্টা চালানো হয়েছিল। কিন্তু সে কারণে জেলা প্রশাসকের হাতে সংবাদপত্র বন্ধের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ, সংবিধানের মৌলিক অধিকার অধ্যায়ে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে।’ এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে ফজলুর রহমান বলেন, বেতার-টিভির স্বায়ত্ত্বশাসনের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা হয়নি।
ওই সাংসদ বলেন, তিন জোটের রূপরেখার ভিত্তিতে সংবাদপত্র বন্ধ-সংক্রান্ত আইনের ধারাটি বাতিল হয়েছিল। এখন জেলা প্রশাসকদের কাছে সেই ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হলে সংবাদপত্রের ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বাড়বে।
তথ্যমন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, জেলা প্রশাসন এটা কেন চাইছে এবং কার ইচ্ছায় চাইছে, তা তিনি বলতে পারেন না। তবে তাঁরা চাইলেই তো আর হবে না।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি গঠন প্রসঙ্গে হাসানুল হক বলেন, তাঁর যতদূর মনে পড়ে, ওই কমিটি হয়েছে সাংবাদিকদের শ্রম আইন অনুযায়ী মজুরী বোর্ড থেকে বের করে ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ে প্রণীত ওয়েজবোর্ডে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য। এর মধ্যে ১৯৭৩ সালের ছাপাখানা ও প্রকাশনা আইন সংশোধন বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের পত্রিকা বন্ধের ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়টি আসার কথা নয়। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে তিনি বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন।
ঢাকার জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দেওয়া এক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রবিরোধী কিংবা ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত হানে, এমন কোনো বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে সেই পত্রিকার প্রকাশনা বাতিলের ক্ষমতা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে দেওয়া হোক। ৮ থেকে ১০ জুলাই অনুষ্ঠেয় জেলা প্রশাসক সম্মেলনে বিষয়টি উত্থাপিত হবে।
‘সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধে ফিরছে বাতিল আইন’ শিরোনামে গতকাল এ খবর প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়। বিষয়টি নিয়ে সম্পাদক, প্রকাশক, সাংবাদিকসহ নাগরিকদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। একাধিক সাংবাদিক নেতা বলেছেন, সংবাদপত্রসেবী, সুশীল সমাজ, সরকারি দল আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন সরকার ১৯৯১ সালে সংবাদপত্র বন্ধের এই ধারাটি বাতিল করে।
জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর গণমাধ্যম-বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেছেন, জেলা প্রশাসন পত্রিকা বন্ধের বিষয়ে ক্ষমতা চাইলেও এ বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কোনো আগ্রহ ও নির্দেশনা নেই। জেলা প্রশাসকেরা বিভিন্ন জেলায় এখনো পত্রিকা বন্ধ করছেন। কোন আইনে সেটা করছেন? আসলে তাঁরা নিজেদের মতো করে তলোয়ার চালাতে চান। এই সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না বলেও মন্তব্য করেন ইকবাল সোবহান।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ