সরকার অল্প সময়ে যা করেছে, অন্য কেউ পারেনি
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ জাতীয় সংসদে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে আজ উত্তর দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অল্প সময়ে সরকার এত কাজ করেছে, যা অন্য কেউ করতে পারেনি। তিনি বলেন, যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সাহস ও মনোবল সরকারের রয়েছে। দেশবাসীকে সরকারের ওপর আস্থা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ২০০৯ সালে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদে জর্জরিত দেশ এবং আতঙ্কগ্রস্ত জাতির দায়িত্ব নিয়ে আওয়ামী লীগ বর্তমান পর্যায়ে
পৌঁছেছে।
আজ বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ৩০ মিনিটের প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিয়ে সংসদ নেতা এসব কথা বলেন। এর আগে বিকেল পাঁচটায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়।
পিরোজপুর থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজী এক সম্পূরক প্রশ্নে জানতে চান, দুর্নীতি হ্রাস, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে বিদেশি বিনিয়োগ কীভাবে নিশ্চিত করবেন? জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৮ সালে দেশ ছিল দুর্নীতিবাজ ও জঙ্গি-সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট দেশকে এই পরিচিতি এনে দিয়েছিল এবং এর পরের দুই বছর তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছিল, অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছিল। সেই আতঙ্কগ্রস্ত জাতির দায়িত্ব নিয়ে আওয়ামী লীগের গৃহীত পদক্ষেপে দুর্নীতি হ্রাস পেয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। এত অল্প সময়ে সরকার এত কাজ করেছে, যা অন্য কেউ করতে পারেনি। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) এক থেকে ছয় পর্যন্ত অর্জন করেছে। এত দূর যখন আসা সম্ভব হয়েছে, তখন যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে এগিয়ে যাওয়ার সাহস-মনোবল ও পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।’
বিএনপি-জামায়াত মানুষ মেরেছে
আওয়ামী লীগের সাংসদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট তাদের আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে না পেরে মানুষ হত্যা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে হত্যা, বাসে অগ্নিসংযোগে লিপ্ত হয়েছিল। এসব করে তারা পণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দ্রব্যমূল্যের বাড়াতে চেয়েছিল। কিন্তু সরকারের বিভিন্ন ত্বরিত পদক্ষেপের কারণে তাদের সব অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়। তিনি বলেন, এসব খুন-খারাবিতে যারা লিপ্ত, অবশ্যই তাদের বিচার হতে হবে। নইলে ভবিষ্যতে এ ধরনের অরাজকতার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। এসব ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ এটাই মানুষের দাবি।
ঢাকাকে যানজটমুক্ত করা হবে
কুমিল্লা থেকে নির্বাচিত সাংসদ নুরুল ইসলাম মিলন প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, বিশ্বে বসবাসের সবচেয়ে অযোগ্য ঢাকা শহরের দুর্নামের জন্য কোন কোন মন্ত্রণালয় দায়ী? এ দুর্নাম ঘোচানোর জন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ইকোনোমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শহরের যে তালিকা প্রস্তুত করেছে, তার মধ্যে ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ ও জীববৈচিত্র্য-সংক্রান্ত তথ্য উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে বায়ুদূষণের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিদেশি পত্রিকাটির বিবেচনাকালে দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব বিবেচনা করতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে অশুভ শক্তির নারকীয় তত্পরতা থেকে ঢাকা মহানগরও বাদ যায়নি। চোরাগোপ্তা হামলা, নিরীহ পথচারীদের ওপর হামলা, চলন্ত গাড়িতে পেট্রলবোমা দিয়ে জীবন্ত মানুষ হত্যার বিষয়গুলো এ মূল্যায়নের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বায়ুদূষণ, পয়ঃপ্রণালি ও কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য থেকে নদী ও পরিবেশদূষণ, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা, শিল্পবান্ধব পরিবেশ সৃজন, যানজট নিরসন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণসহ বিভিন্ন সংস্থার গৃহীত নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা ঠিক যে ঢাকা মহানগর যানজট, জলাবদ্ধতা, পরিবেশদূষণ, আবাসনের ঘাটতিসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। ঢাকা মহানগরকে পরিকল্পিত উপায়ে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার বিগত মেয়াদেই নানবিধ উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্যতম টার্গেট ঢাকাকে যানজটমুক্ত হিসেবে গড়ে তোলা। এ লক্ষ্যে ফ্লাইওভার নির্মাণ, মেট্রো পদ্ধতি চালু ইত্যাদির পাশাপাশি ঢাকা মহানগরের ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানে নতুন সড়ক ও লিংক রোড নির্মাণের প্রস্তাব রয়েছে। ধারাবাহিকভাবে এর বাস্তবায়ন করা হবে। এ ছাড়াও বর্তমান সরকার সুষ্ঠু ও পরিকল্পিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপ করছে। ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঢাকা মহানগরকে মধ্যম আয়ভুক্ত দেশের রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলতে রাজউকের মাধ্যমে কাজ শুরু হয়েছে।