অবসরে যাচ্ছেন ১০ সচিব, চলছে নানা হিসাব

রিপোর্টার, এ বি সি নিউজ বিডি, ঢাকা,  সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ১০ জন সচিব আজ বুধবার থেকে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে অবসরে যাচ্ছেন। এর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিবও রয়েছেন।

পরবর্তী ছয় মাসে অবসরে যাবেন আরও ১০ জন। এর মধ্যে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে অর্থ ও স্বরাষ্ট্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ সচিবসহ তিনজন অবসরোত্তর ছুটিতে যাচ্ছেন।

শীর্ষপর্যায়ে কাছাকাছি সময়ে একসঙ্গে এত পদ ফাঁকা হতে যাচ্ছে বলে এর প্রভাব পড়েছে জনপ্রশাসনে।  একই সঙ্গে শূন্য হতে যাওয়া এসব পদ পাওয়া নিয়ে চলছে হিসাব-নিকাশ। অবসরের সময় হওয়া কোনো কোনো সচিব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে চেষ্টা করছেন। তবে একটি পক্ষ এই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিরোধিতা করছে। এই পক্ষের কর্মকর্তারা নিজেরাই সচিব হওয়ার দৌড়ে আছেন।

আবার বিসিএস-৮২ ব্যাচের কর্মকর্তাদের (বর্তমানে জ্যেষ্ঠ কয়েকজন বাদে সব সচিব এই ব্যাচের) রেখেই বিসিএস-৮৪ ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তা সচিব হতে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে চেষ্টা করছেন।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসনসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, কোনো কর্মকর্তা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাবেন কি না, সেটি সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে কাউকে চুক্তিভিত্তিতে নিয়োগের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আর সচিবদের মধ্যে যাঁরা যখন অবসরে যাবেন, তখনই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে জনপ্রশাসনের নিয়মিত কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও বারবার তা উপেক্ষা করা হচ্ছে। সব সরকারের সময়ই কম-বেশি চুক্তিভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকার মুখে মুখে একাধিকবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিরুত্সাহিত করার কথা বললেও তারা এ ধরনের নিয়োগ অব্যাহত রেখেছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. গোলাম হোসেন, কৃষিসচিব এস এম নাজমুল ইসলাম ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব আশরাফুল মকবুলকেও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে এই সরকারই। এ ছাড়া রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যানসহ আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে চুক্তিভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এসব উদাহরণ সামনে থাকায় সচিব পদে আর যেন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ না দেওয়া হয়, এ জন্য এবার নিয়মিত কর্মকর্তারা, বিশেষ করে যাঁরা পরবর্তী সচিব হওয়ার দৌড়ে আছেন তাঁরা উঠে পড়ে লেগেছেন। সচিবদের অবসরে যাওয়ার বিষয়টিতে সামনে রেখে এই তত্পরতা আরও বেড়েছে। জনপ্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ২০১১ সালের ডিসেম্বরে সরকারি কর্মকর্তাদের চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার বয়স দুই বছর বৃদ্ধির ফলে অনেক কর্মকর্তার ওপরের পদে যাওয়ার পথ সংকুচিত হয়ে যায়। বর্তমানে অনেক কর্মকর্তা আছেন, যাঁরা পদোন্নতি পেয়েও পদের অভাবে আগের পদে কাজ করছেন। এখন নতুন করে চুক্তিতে নিয়োগের ফলে এ সমস্যা আরও বাড়বে।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদারও জনপ্রশাসনে ঢালাওভাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিরোধী। তাঁর মতে, ঢালাও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিলে প্রশাসনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

অবসরে যাচ্ছেন যেসব সচিব: জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী ১০ দিনের মধ্যে যে তিনজন সচিব অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে অর্থসচিব ফজলে কবির ৩ জুলাই, স্বরাষ্ট্রসচিব সি কিউ কে মুশতাক আহমেদ ৮ জুলাই, বেসরকারীকরণ কমিশনের সদস্য রোকেয়া সুলতানা আজ পিআরএলে যাচ্ছেন। এর মধ্যে অর্থ ও স্বরাষ্ট্রসচিবের মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদে কারা আসছেন, নাকি এঁদের মধ্যে কেউ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন, তা নিয়ে সচিবালয়জুড়ে আলোচনা চলছে। তবে অর্থসচিব পদে ফজলে কবীরকে চুক্তিতে রাখতে চাইছে ওই মন্ত্রণালয়ের একটি পক্ষ।

কিছুদিন ধরে সচিবালয়ে বিভিন্ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে গেলে প্রায় সবাই কোনো না কোনোভাবে এ বিষয়টির প্রসঙ্গ তোলেন এবং জানতে চান—এসব পদে কারা আসছেন।

আগামী ছয় মাসের মধ্যে আরও যেসব সচিব পিআরএলে যাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য উজ্জ্বল বিকাশ দত্ত ৯ আগস্ট, পরিবেশ ও বনসচিব শফিকুর রহমান পাটোয়ারী ৩১ আগস্ট, রেলসচিব আবুল কালাম আজাদ ১২ সেপ্টেম্বর, শিক্ষাসচিব মোহাম্মদ সাদিক ১৮ সেপ্টেম্বর, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিব কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী ৩০ অক্টোবর, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক ইকবাল মাহমুদ ২৯ নভেম্বর ও স্বাস্থ্যসচিব নিয়াজউদ্দিন মিয়া ৩০ ডিসেম্বর অবসরোত্তর ছুটিতে যাচ্ছেন।

পরের ছয় মাস, অর্থাত্ আগামী বছরের জুলাইয়ের মধ্যে অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়ার তালিকায় আছেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্যসচিব আবদুস সোবহান সিকদার, রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের সচিব শেখ আলতাফ আলী ও স্থানীয় সরকার সচিব মনজুর হোসেনসহ ১০ জন।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ