সিলেট ভোটে ইস্যু নন সিলেটিরাও
বিয়েসূত্রে সিলেটে ময়মনসিংহ অঞ্চলের ভোটারদের ভোট এতদিন একচেটিয়াভাবে পেয়ে আসছিলেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা বদরউদ্দিন আহমদ কামরান।
কিন্তু এবার তাকে যার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে, সেই আরিফুল হক চৌধুরীর শ্বশুরবাড়িও ময়মনসিংহে।
ফলে এবার আগের মতো ওই অঞ্চলের বাসিন্দাদের ভোট একচেটিয়াভাবে কামরানের বাক্সে পড়বে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
সিলেটে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম খান এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, সিলেটে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের পেশাজীবী-শ্রমজীবী প্রায় ৬৫ হাজার ভোটার রয়েছেন।
“বিগত নির্বাচনগুলোতে তারা বদর উদ্দিন কামরানকে ভোট দিয়েছেন। এবার যেহেতু এ অঞ্চলের আরেক জামাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাই ভোট কিছুটা ভাগাভাগি হতে পারে।’’
আরিফুল হকও বলেন, অতীতে ‘পুরাতন জামাই’ বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে ভোট দিয়ে তাদের আশার প্রতিফলন ঘটেনি । তাই এবার এবার ‘নতুন জামাই’ হিসেবে তাকে ভোট দেবেন বলে তিনি আশাবাদী।
তবে কামরান আশাবাদী, অতীতের মতোই শ্বশুরবাড়ির লোকজন থাকবে তার পাশেই।
নিজের এলাকার মানুষের ভোট স্বামীর বাক্স আনতে প্রচারে নেমেছেন কামরান ও আরিফুলের স্ত্রীরাও।
কামরানের আনারস প্রতীকের পক্ষে তার স্ত্রী আসমা কামরান যেমন ভোট চাইছেন, তেমনি আরিফুল হকের টেলিভিশন প্রতীকের পক্ষে সক্রিয় তার স্ত্রী শ্যামা হক চৌধুরীও।
শুধু ময়মনসিংই নয়, আগামী ১৫ জুন অনুষ্ঠেয় সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে লক্ষাধিক ভোট রয়েছেন, যারা অন্য জেলা থেকে এসে সিলেটে আবাস গড়েছেন এবং ভোটার হয়েছেন।
এই সংখ্যা মোট ভোটারের এক-তৃতীয়াংশ হওয়ায় এখন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীই জেলা সমিতিগুলোতে ধর্না দিচ্ছেন, ‘নন সিলেটিদের’ ভোট টানতে বিয়ের পাশাপাশি আত্মীয়তা বিভিন্ন সূত্রও প্রচারে নিয়ে আসছেন।
সিলেটে নগরীতে মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ। ‘অভিবাসী’ ভোটারদের মধ্যে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রায় ৬৫ হাজার, বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার এবং বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলের প্রায় ১০ হাজার। এর বাইরে অন্য জেলার মানুষও রয়েছেন এবং সব মিলিয়ে জেলাভিত্তিক ৩০টি সংগঠন রয়েছে।চাকরি ও জীবিকার প্রয়োজনে দীর্ঘদিন ধরে সিলেটে অবস্থানের পর ভোটার হয়েছেন তারা। এই ভোটারদের বেশিরভাগই নিজ নিজ এলাকাভিত্তিক আঞ্চলিক সমিতিতে সম্পৃক্ত।
‘নন সিলেটিদের’ ভোট টানতে কামরান ও আরিফুল হক গত কয়েকদিন খুলনা সমিতি, রংপুর সমিতি, ময়মনসিংহ সমিতি, নেত্রকোনা সমিতি, চট্টগ্রাম সমিতি, সুনামগঞ্জ সমিতি, মৌলভীবাজার সমিতি, হবিগঞ্জ সমিতি, কুমিল্লা সমিতিসহ বিভিন্ন আঞ্চলভিত্তিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
খুলনা সমিতির প্রচার সম্পাদক শেখ নাসির বলেন, দুই মেয়র প্রার্থীই তাদের কাছে দোয়া চেয়েছেন এবং সেই সঙ্গে খুলনার ৫ হাজার ভোটও চেয়েছেন।
রংপুরের প্রায় ৩৫ হাজার ভোটের জন্য দুই প্রার্থী মতবিনিময় সভা করেছে বলে জানান রংপুর সমিতির সভাপতি মামুন হাসান।
‘নন সিলেটিদের’ ভোটের বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এদের ভোটের সংখ্যা অনেক হওয়ায় আগের নির্বাচনেও তা প্রভাব ফেলেছিল। এবারও জয়-পরাজয়ে তাদের বড় ভূমিকা থাকবে।