দিন দুপুরে এক ছাত্রকে কুপিয়ে হত্যা
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, যশোরঃ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নাইমুল ইসলাম ওরফে রিয়াদকে কুপিয়ে হত্যা করেছে একদল দুর্বৃত্ত। আজ সোমবার বেলা দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, দুপুরের দিকে নাইমুল বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে গল্প করছিলেন। এ সময় তিনটি মোটরসাইকেলে করে একদল দুর্বৃত্ত এসে নাইমুলকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। নাইমুলের বন্ধু দেলোয়ার হামলাকারীদের হাত-পা জড়িয়ে ধরলে তাঁর ওপরও চড়াও হয় দুর্বৃত্তরা। একপর্যায়ে নাইমুল নিস্তেজ হয়ে পড়লে হামলাকারীরা ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিত্সকেরা নাইমুলকে মৃত ঘোষণা করেন।
যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেছেন, ‘ছাত্রলীগের আভ্যন্তরীন কোন্দল আছে। গতকাল সন্ধ্যায় ইফতারের পর দু’পক্ষের সংঘর্ষ হযেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এর জেরে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি’।
নাইমুলের বন্ধু রাতুল দাস সাংবাদিকদের বলেছেন, আজ দুপুর ১২টার দিকে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হাসান নাইমুলকে হত্যার হুমকি দিয়ে ফোন করেন।
নাইমুলের সহপাঠী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে কয়েক মাস ধরে ঝামেলা চলছিল। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও কয়েক মাস আগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি সুব্রত বিশ্বাসকে সভাপতি ও শামীম হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নাম ঘোষণা করে। এই কমিটির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় সঞ্জয় ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন একটি অংশ। নাইমুল সঞ্জয় ব্যানার্জির অনুসারী ছিলেন। সর্বশেষ গতকাল ছাত্রলীগের ইফতার পার্টিতে সঞ্জয় ব্যানার্জির অনুসারীরা অংশ নেননি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গতরাত থেকেই শামীম হাসানের অনুসারীরা মুঠোফোনে তাঁদের হুমকি দিতে থাকেন। ইফতার পার্টির পর সাধারণ সম্পাদক শামীম হাসানের ভাগনে ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র তানভীর চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নাইমুলের বন্ধু বাদলকে মারধর করেন। এ ঘটনার পর নাইমুল তানভীরকে ডেকে পাঠান। অসন্তুষ্ট শামীম আজ সকালে কৈফিয়ত চেয়ে নাইমুলকে ফোন করেন ও ‘লাশ ফেলে দেয়ার’ হুমকি দেন।
এ দিকে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হাসান বলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ভিত্তিহীন। তিনি কাউকে হুমকি দেননি। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য সুপরিকিল্পিতভাবে এমন একজনকে হত্যা করা হয়েছে যে ছাত্রলীগের সদস্যই নয়।
নাইমুলের মৃতদেহ যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলাও হয়নি। ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি থমথমে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো মন্তব্য করেনি।
এ দিকে জেলা ছাত্রলীগ এ ঘটনার পরপরই শহরে একটি মিছিল করে।