বাংলাদেশ এক অপার সম্ভাবনার নাম : তারেক রহমান

Tarek Tareq Rahman তারেক রহমানরিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বিশ্বমানচিত্রে বাংলাদেশকে অপার সম্ভাবনার দেশ হিসেবে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন দল, মত, দর্শন যার যার কিন্তু দেশ আমাদের সবার। দেশের শিক্ষা ও কৃষি খাতে উন্নয়ন ঘটাতে হবে, ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশ সাধন করতে হবে। মঙ্গলবার বিকালে পূর্ব লন্ডনস্থ  রমফোর্ডের সিটি প্যাভিলিয়নে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত ইফতার পূর্ব আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিশ্ব অর্থনীতির পালা বদলে এবং ভৌগোলিক কারণে গ্লোবাল ভিলেজে বাংলাদেশ এক অপার সম্ভাবনার নাম। কিন্তু এই সম্ভাবনার সফল বাস্তবায়ন নির্ভর করবে সবার দায়বদ্ধতা, কর্মকাণ্ড ঐক্য ও অর্জনের উপর। তাই স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে প্রত্যেককে কিছু কিছু ক্ষুদ্র স্বার্থের ঊর্ধ্বে ওঠা প্রয়োজন। তাহলে একটি ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকেও একটি উৎপাদনশীল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব। তিনি বলেন, একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে দুই দশকের বেশি সময়ের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকে আমার নিজেরও চিন্তা, চেতনা এবং কর্মকাণ্ড জুড়ে রয়েছে একটি সমৃদ্ধশালী ও উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন ও পরিকল্পনা।  বিশ্ব মানচিত্রে যার পরিচয় হবে কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ, শিল্পায়নে সার্থক, অর্থনীতিতে গতিশীল, মানব সম্পদে ঐশ্বর্যমণ্ডিত, সামাজিকভাবে ঐক্যবদ্ধ ও মূল্যবোধ সম্পন্ন একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে। প্রায় এক ঘন্টার বক্তব্যে একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কৃষি, শিক্ষা কর্মসংস্থান, শিল্পায়ন,  পরিবেশ ও জ্বালানি, অবকাঠামো ও স্থানীয় উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর কিছু কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, কারো বিরুদ্ধে কিছু বলতে চাই না, শুধু গতানুগতিক রাজনৈতিক বক্তব্যের বাইরে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কিছু উন্নয়ন পরিকল্পনা তুলে ধরতে চাই। তারেক রহমান তার কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে আরো বলেন, দেশের আনাচে-কানাচে পরিকল্পনামাফিক গড়ে তোলা সম্ভব ছোট-খাটো ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান। সৃষ্টি করা সম্ভব অর্ধকোটিরও বেশি কর্মক্ষেত্র। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিকাশে সরকারি সহায়তা বাড়াতে হবে। শহরগুলোতে প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধার পাশাপশি গ্রামগুলোতেও আধুনিক জীবনের উপকরণ নিশ্চিত করা সম্ভব। তাতে করে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ পরিচিত হয়ে উঠবে উন্নয়নশীল বিশ্বের কাছে একটি উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার মডেল হিসেবে। তবে এরজন্য এখন থেকেই কাজ শুরু করতে হবে। তারেক রহমান বলেন, দল মত বিশ্বাস ও দর্শন যার-যার; কিন্তু দেশটা আমাদের সবার। তিনি বলেন দেশটা কারো একার নয়, কারো বাবার নয়, আমাদের সবার। তিনি বলেন, আন্তরিকভাবে চাইলে নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব যেখানে ক্ষুধা বা দারিদ্র্য থাকবে না। তবে এসব পরিকল্পনা তখনি বাস্তবায়িত হতে পারে যখন দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতির প্রতি নিবেদিত সত্যিকার অর্থে নির্বাচিত একটি সরকারের ওপর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব অর্পিত হবে। তারেক রহমান বলেন, বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বর্তমান হারে বাড়তে থাকলে আগামী ২৫ বছরে জনসংখ্যা ২৫ থেকে ৩০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। কমে যাবে কৃষি ও আবাসন জমির পরিমাণ। কোটি কোটি মানুষ বঞ্চিত হবেন খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা সুবিধা থেকে। ঘনীভূত হবে পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট। যোগাযোগ ও যানজট সমস্যা আরো প্রকট হয়ে উঠবে। শিক্ষা উপকরণ এবং অব্যব্যবস্থাপনায় কমবে শিক্ষার হার। তিনি বলেন, সঠিক কর্মসংস্থানের অভাবে শিক্ষিত বেকারের হার বাড়বে। দরিদ্র জনগণ হয়ে উঠবে আরো দরিদ্র। ক্ষমতাধর দুর্নীতিবাজ ধনীরা হয়ে উঠবে আরো ধনী। সন্ত্রাস আচ্ছন্ন করে তুলবে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতিটি অঙ্গনকে। নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়বে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। বাড়তে থাকবে সামাজিক অস্থিতিশীলতা। চলতে থাকবে রাজনৈতিক অচলাবস্থা। সব মিলিয়ে ঘটতে পারে পরিস্থিতির অনাকাঙ্ক্ষিত ও নজিরবিহীন অবনতি। তারেক রহমান বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ যেভাবে চলছে তাতে এমনটিই হবে অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। তবে ভবিষ্যৎ আমাদের নিজেদেরই হাতে। আমরা আশা করি এমন পরিস্থিতি হবে না। হলেও একটি ধ্বংসস্তূপ থেকে আমরা গড়ে তুলবো একটি উৎপাদনশীল বাংলাদেশ, ইনশাল্লাহ। তিনি বলেন, পাবলিক সেক্টরের  নানা অব্যবস্থাপনা ও অকার্যকারিতার মাঝেও দেশটা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভালো করছে, তার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দেশের প্রাইভেট সেক্টরের। পাশাপাশি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দেশটিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষেরা। তাদের পরিশ্রম, দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগ আমাদের প্রতিনিয়ত আশান্বিত করে তোলে। সাধারণ মানুষের প্রেরণা নিয়ে এবং তাদের চেতনাকে অন্তরে ধারণ করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যদি উন্নয়ন উৎপাদনের রাজনীতি নিশ্চিত করা হয় তাহলে নিশ্চিতভাবে আমাদের ভবিষ্যৎ হয়ে উঠবে উজ্জ্বল। তারেক রহমান তার কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে বলেন, দেশের আনাচে-কানাচে পরিকল্পনামাফিক গড়ে তোলা সম্ভব ছোট-খাট ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান। সৃষ্টি করা সম্ভব অর্ধকোটিরও বেশি কর্মক্ষেত্র। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিকাশে সরকারি সহায়তা বাড়াতে হবে। শহরগুলোতে প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধার পাশাপশি গ্রামগুলোতেও আধুনিক জীবনের উপকরণ নিশ্চিত করা সম্ভব। তাতে করে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ পরিচিত হয়ে উঠবে উন্নয়নশীল বিশ্বের কাছে একটি উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার মডেল হিসেবে। তবে এর জন্য এখন থেকেই কাজ শুরু করতে হবে। তিনি বলেন, দল মত বিশ্বাস ও দর্শন যার যার; কিন্তু দেশটা আমাদের সবার। দেশটা কারো একার নয়, কারো বাবার নয়, আমাদের সবার। কৃষি ও কৃষকদের উন্নয়নে তারেক রহমান সুষ্পষ্টভাবে কিছু নীতিমালা তুলে ধরে বলেন, উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও কৃষিকে একটি প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পে পরিণত করা এখন সময়ের দাবি। কৃষি ভর্তুকির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিশ্চিত করতে হবে যাতে কৃষি খাতের সব ভর্তুকি আমদানিকারক ও মধ্যসত্বভোগীদের কাছে চলে না যায়। শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন সম্পর্কে তিনি বলেন, বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন দূরে থাক দেশের তথাকথিত সরকার পাবলিক পরীক্ষাগুলোর আগের রাতেই প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দিয়ে পরীক্ষায় জিপিএ ৫ প্রাপ্তির তথাকথিত বিশ্বরেকর্ড গড়ে দেশীয় মেধার মানদণ্ডকে শুধু নষ্টই করছে না বরং আন্তর্জাতিক শিক্ষা প্রতিযোগিতায় দেশকে হাসির পাত্রে পরিণত করছে। তারেক রহমান বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল সংস্কার প্রয়োজন। শিক্ষা ব্যবস্থাকে করতে হবে একাধারে আধুনিক, গণমুখী, কর্মমুখী ও প্রযুক্তিনির্ভর। চাকরিতে কোটা প্রথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মেধাবীরাই পারে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে। সেই মেধাবীদের সুযোগ করে দিতে সরকারি চাকরিতে কোটার হার সর্ব্বোচ্চ শতকরা পাঁচভাগে নামিয়ে আনা যেতে পারে। শিল্প ও বিনিয়োগ প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, গত ৬ বছরে বর্তমান অবৈধ সরকারের ভ্রান্তনীতি আর চাটুকারিতার রাজনীতির বলি হয়ে দেশের গার্মেন্টস আর শ্রম রফতানিতে ধস নেমেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশ পা দিয়েছে বিনিয়োগবিহীন প্রবৃদ্ধির ফাঁদে। দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ এখন শূন্যের কোঠায়। গত কয়েক বছরে বন্ধ হয়েছে একের পর এক শিল্প ও কল-কারখানা। তিনি বলেন, পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে দেশে বর্তমানে ৩ লাখ বেকারের সংখ্যা ৩০ লাখে নামিয়ে আনা সম্ভব। সম্ভব জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত করে রেমিটেন্স বাড়ানো। তারেক রহমান বলেন, শ্রম, আবাসন, বিদ্যুৎ, বিপণন ও শিক্ষা এই ৫টি সুবিধার দিক থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ কয়েকটি শিল্প পার্ক নির্মাণ কাজ শুরু করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে আরেকটি সাবমেরিন ক্যাবল বসানো দরকার, দরকার ইন্টারনেট স্পিড বাড়ানো,  কমানো প্রয়োজন ব্যান্ডউইথ প্রাইস। অপরিকল্পিত নগরায়ন সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশের প্রধান দুটি শহর ঢাকা ও চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের আদলে মেট্রোপলিটান এরিয়া গড়ে তোলা সম্ভব। ঢাকা-নারায়নগঞ্জ-গাজীপুর এই ৩টি জেলা নিয়ে গঠিত হতে পারে ঢাকা মেট্রোপলিটন এরিয়া এবং পুরো চট্টগ্রাম জেলাজুড়ে গঠিত হতে পারে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটান এরিয়া। ঢাকার ওপর থেকে চাপ কমাতে চাকরি, শিক্ষা  নিরাপত্তা ও অবকাঠামো এই ৪টি বিষয় বিবেচনায় রেখে ঢাকার নিকটবর্তী জেলাগুলোয় কয়েকটি আধুনিক স্যাটেলাইট শহর গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। তারেক রহমান বলেন, এমন ২০টি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন স্যাটেলাইট শহর তৈরি করে প্রতিটিতে বর্তমানে ঢাকায় বসবাসকারী ৫ লাখ লোককে স্থানান্তর করা গেলে ঢাকার ওপর চাপ অনেকাংশে কমে যাবে। তবে এইসব স্যাটেলাইট শহর এমনভাবে নির্মিত হতে হবে যাতে চাষযোগ্য জমি নষ্ট না হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ঘণ্টায় ৬০ মাইল বেগে এমনভাবে রেল সংযোগ স্থাপন করার পরিকল্পনা করতে হবে যাতে রাজধানীর ৫০ থেকে ৬০ মাইল দূরত্বের জেলাগুলোতেও মাত্র ১ ঘণ্টায় চলে যাওয়া সম্ভব হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস, পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ। এ সময় মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মানবাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার হাসনাত হোসেন এমবিই, কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ডক্টর এম এ মালেক, যুক্তরাজ্য বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি নাজিমুদ্দিন আলম, ইউরোপভিত্তিক প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংগঠন সিটিজেন মুভমেন্টের আহবায়ক এম এ মালেক এবং যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র নেতারা। সভার শুরুতেই তারেক রহমান বোখারী শরিফের একটি হাদীস উল্লেখ করে বলেন, তোমাদের কেউ সিয়ামের দিন যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং শোরগোল ও চেঁচামেচি না করে। কেউ তাকে গালমন্দ করলে বা তার সঙ্গে ঝগড়া করলে সে শুধু বলবে, আমি সিয়াম পালনকারী।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ