র‌্যাব সদরদপ্তরের তাৎক্ষনিক নেয়া পদক্ষেপের কথা তদন্ত কমিটিকে জানালেন এডিজি

rab logoমনির হোসেন মিন্টু, সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ র‌্যাবের অতিরিক্ত মহা-পরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেছেন, হাইকোর্টের নির্দেশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটিকে আমরা সহযোগিতা করছি। নারায়নগঞ্জের ৭ খুনের প্রকৃত ঘটনা উন্মোচিত হোক, এমন নিশংসতার সঙ্গে জড়িতরা শাস্তি পাক, র‌্যাব সদর দফতর আন্তরিকতার সাথে তা প্রত্যাশা করে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে নারায়নগঞ্জের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৭ জনকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে স্বাক্ষ দিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান আলী মোল্লা কর্নেল জিয়ার স্বাক্ষ্য গ্রহন করেন। তদন্ত কমিটির অন্যরাও এসময় উপস্থিত ছিলেন।
কর্নেল জিয়াউল আহসান সাংবাদিকদের বলেন, আমরাও চাই, নারায়নগঞ্জের ৭ খুনের প্রকৃত ঘটনা উন্মোচিত হোক। এমন নিশংসতার সঙ্গে জড়িতরা শাস্তি পাক, র‌্যাব সদর দফতর আন্তরিকতার সাথে তা প্রত্যাশা করে।
এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি’র একটি সূত্র জানায়, নারায়নগঞ্জে প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৭ জনকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনা উদঘাটনে র‌্যাব সদর দফতর কি কি পদক্ষেপ নিয়েছিল, তা জানতে চেয়েছিল র‌্যাবের এই কর্মকর্তার কাছে। র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক র‌্যাব সদরের পক্ষ থেকে ২৭ এপ্রিল যেসকল পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল, তা তদন্ত কমিটিকে অবহিত করেছেন।
অপর একটি সূত্র জানায়, অপহরণের পর হত্যার এই ঘটনা র‌্যাব সদর দফতর অবগত ছিল না। সদর দফতরের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানার আগেই সব শেষ হয়ে যায়। সদর দফতর থেকে নারায়নগঞ্জের এই অপহরণের বিষয়ে র‌্যাব-১১’র সিও তারেক সাঈদের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করা হয়। র‌্যাব কিছুই জানে না বলে জানানোর পাশাপাশি তারাও ঘটনা উদঘাটনে মাঠে কাজ করছে বলে সদর দফতরকে আশ্বস্ত করা হয়। প্রথমে সদর দফতর তারেকের কথা বিশ্বাস করেছিল। পরে বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব সদর দফতরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ঘটনার মূল তিন নায়ক বর্তমানে কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা তারেক সাঈদ, আরিফ হোসেন ও এম.এম রানাকে র‌্যাব সদরে নিয়ে এসে রাত ১টা থেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। টানা চার ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর ভোর সোয়া ৫টার দিকে আরিফ হোসেন ও রানা ঘটনা স্বীকার করেন। বর্ননা দেন পুরো ঘটনার। জানান- মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের সঙ্গে র‌্যাব-১১’র সম্পর্কের সাতকাহান। এসময় র‌্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘটনার বর্ননা শুনে বিষ্মিত হয়ে যান।
সূত্র আরো জানায়, বিষয়টি র‌্যাবের মহা-পরিচালককে অবহিত করা হয়। এর পর-পরই পুরো বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কর্মরত একজন সামরিক কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়। সামরিক কর্মকর্তারা অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রীকেও। এর পরই ঘটতে থাকে সব ঘটনা। র‌্যাব থেকে প্রত্যাহার, মামলা, সেনা ও নৌ-বাহিনী থেকে অভিযুক্ত তিন কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত ও গ্রেফতার, রিমান্ড, হত্যা মামলায় আসামি করা এবং সর্ব শেষ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া।
উল্লেখ্য, গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা-নারায়নগঞ্জ লিংক রোড থেকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ ৭ জনকে র‌্যাব-১১’র একটি দল অপহরণের পর হত্যা করা হয়। পরে নিহত ৭ জনের লাশ শীতালক্ষা নদীতে ডুবিয়ে দেয়া হয়। এঘটনায় জড়িত র‌্যাব- ১১’র সাবেক অধিনায়ক সেনা ও নৌ-বাহিনী থেকে চাকরি হারানো লে.কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ, মেজর (অব.) আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার (অব.) এম.এম রানা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। অভিযুক্ত এই তিন কর্মকর্তা বর্তমানে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ