বিরোধী দল আলোচনা চায় না: শেখ হাসিনা
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি ঢাকাঃ নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ বিরোধী দল ভেস্তে দিচ্ছে বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি শনিবার দলের এক সভায় বলেছেন, “মুলতবি প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিয়ে দেখালো আমরা (সরকারি দল) আলোচনা চাই, তারা (বিরোধী দল) চায় না।”
আগামী নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে দুই প্রধান দলের বিপরীত অবস্থানে সংসদের অষ্টাদশ অধিবেশন শুরুর দিন ‘তত্ত্বাবধায়ক’ ফিরিয়ে আনার দাবিতে জমা দেয়া মুলতবি প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেয় বিএনপি।
গত ২২ মে সংসদ সচিবালয়ে ওই প্রস্তাব জমা দেয়া হয়। কার্যপ্রণালী বিধির ৬২ বিধিতে দেয়া ওই নোটিসে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের স্বার্থে কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের প্রস্তাব রাখা হয়েছিলো।
শেখ হাসিনা বলেন, “তারা সংসদে মুলতবি প্রস্তাব দিলো, ভেবেছিলো আমরা আলোচনা করবো না। কার্য উপদেষ্টা বৈঠকে যখন আমরা আলোচনার সিদ্ধান্ত নিলাম, তখন তারা তা প্রত্যাহার করে নিলো।”
গণভবনে শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা আবার বলেন, অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, দেশে সেভাবেই আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে।
“বাংলাদেশে বার বার গণতন্ত্রের ওপর আঘাত এসেছে। কখনো হত্যা-ক্যু, কখনো সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে নানাভাবে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে।”
“এখন নিরবিচ্ছিন্ন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতার পরিবর্তন হবে। সাংবিধানিক বিধি বিধান অনুযায়ীই ক্ষমতার পরিবর্তন হবে। এটা শুরু করতে হবে। এবারই সেই সুযোগ।”
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিলুপ্ত হওয়ায় এখন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে।
তবে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না দাবি করে নির্দলীয় সরকারে প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে বিরোধী দল।
শেখ হাসিনা তার সরকার আমলে হয়ে যাওয়া বিভিন্ন নির্বাচনের কথা তুলে ধরে বলেন, “একটি নির্বাচন নিয়েও কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেনি। একটি দল ক্ষমতায় থাকতে নির্বাচন যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়, তা আমরা প্রমাণ করেছি।”
সামরিক শাসকদের আমলের নির্বাচনের প্রসঙ্গ ধরে তিনি বলেন, “৮১তে দেশে ফিরে দেখি, নির্বাচনের নামে প্রহসন হচ্ছে। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে ভোট ম্যানিপুলেশন করা হচ্ছে।”
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই সেতুর কাজ শুরু হবে। আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে এই সেতুর কাজ দ্রুত শেষ হবে।
পদ্মা সেতু নিয়ে মহলবিশেষের ‘ষড়যন্ত্র’ ছিলো দাবি করে তিনি বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের কাজ নিয়ে কোনো কথা বলতে পারেনি। বললো যে, দুর্নীতি হয়নি। দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে। যেখানে টাকাই ছাড় হয়নি।
আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘উচ্চাভিলাষী’ বলে যারা মন্তব্য করছেন তাদের বক্তব্যের সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
“উচ্চাভিলাষী তো অবশ্যই, উচ্চাভিলাষ না থাকলে রাজনীতি করি কার স্বার্থে? খালি কি বিশ্ব দরবারে হাত পেতে চলবো?”
“কিছু কিছু আঁতেল শ্রেণী আছেন, যাদের কিছুই ভালো লাগে না,” বলেন শেখ হাসিনা।নির্বাচনের বছরে দুই লাখ ২২ হাজার কোটি টাকার যে বাজেট অর্থমন্ত্রী প্রস্তাব করেছেন, তাতে এক লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কীভাবে পূরণ হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি।
শেখ হাসিনা কারো নাম উল্লেখ না করে বলেন, “অবশ্যই রাজস্ব আদায় করেই তো দেশ গড়ে তুলতে চাই। আমরা কি ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে চলবো?”
“এটা করলে এই আঁতেল শ্রেণী কনসালটেন্সি করতে পারে। কিছু চুরি করতে পারে”, যোগ করেন হাসিনা।
শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বেশ কয়েকবার বলেন, যারা তাকে এবং খলেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে বাদ দিতে চায় তাদের ‘চক্রান্ত’ অব্যাহত আছে।
একবার শেখ হাসিনা বলেন, “যারা মাইনাস টু ফর্মূলা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলো- তাদের খায়েশ তো আছে। চক্রান্ত তো আছে।”
“কেউ তো দল গঠন করতে চেয়েছিলো, ব্যর্থ হয়েছে।”
সভায় শরীয়তপুরের সংসদ সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ও নাহিম রাজ্জাক।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সতীশ চন্দ্র রায়, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মদ হোসেন, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলীও সভায় ছিলেন।