বিএনপি ফাঁদে পা দেয়নি: রফিকুল ইসলাম
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেছেন, নির্দলীয় সরকার পদ্ধতি পুনর্বহাল নিয়ে তারা সংসদে মুলতবি প্রস্তাব তুললেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সরকারি দল তা বাতিল করে দিতো।
বিরোধী দল প্রমাণ করেছে তারা আলোচনা চায় না- বিএনপির ওই পদক্ষেপের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় শনিবার এক সভায় তিনি একথা বলেন।
সাবেক চিফ হুইপ রফিক বলেন, সংসদে আওয়ামী লীগ ও তার জোটের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। সেখানে ৩০/৪১ জনের বিরোধী দল মুলতবি প্রস্তাব দিলে তা গ্রহণের কোনো সম্ভাবনাই ছিলো না।
“ক্ষমতাসীন দল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ওই প্রস্তাবটি ভোটে দিয়ে ‘না’ ‘না’ বলে বাতিল করে দিতো। ওই মুলতবি প্রস্তাবটির মাধ্যমে সরকারি দল নির্দলীয় সরকারের বিষয়টির কবর রচনা করতে চেয়েছিলো। বিএনপি সেই ফাঁদে পা দেয়নি।”
আগামী নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে দুই প্রধান দলের বিপরীত অবস্থানে সংসদের অষ্টাদশ অধিবেশন শুরুর দিন ‘তত্ত্বাবধায়ক’ ফিরিয়ে আনার দাবিতে জমা দেয়া মুলতবি প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেয় বিএনপি।
গত ২২ মে সংসদ সচিবালয়ে ওই প্রস্তাব জমা দেয়া হয়। কার্যপ্রণালী বিধির ৬২ বিধিতে দেয়া ওই নোটিসে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের স্বার্থে কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের প্রস্তাব রাখা হয়েছিল।
এর প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নির্দলীয় সরকার নিয়ে আলোচনার সব পথ বিরোধী দলই বন্ধ করে দিচ্ছে। এর মধ্যদিয়ে প্রমাণিত হয়েছে, বিরোধী দল আলোচনা চায় না।
রফিক বলেন, “আমরা মনে করি, এই প্রত্যাহার সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। প্রধানমন্ত্রী ওই প্রত্যাহারের বিষয়টি নিয়ে এখন যেসব বক্তব্য রাখছেন, তা রাজনৈতিক শঠতা ছাড়া কিছুই নয়।”
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিলুপ্ত হওয়ায় এখন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে।
তবে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না দাবি করে নিদর্লীয় সরকারে প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে বিরোধী দল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিক বলেন, “সরকার যত কথাবার্তা বলুক না কেন, আগামী নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনেই দিতে হবে। নইলে কোনো নির্বাচন এদেশে হতে দেয়া হবে না।”
জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন তিনি।
সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মুনির হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ উপাচার্য অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি গোলাম সারোয়ার, মারুফ আল হাসান, আবু তাহের পাটোয়ারী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী রেজাউর রহমান লিটন প্রমুখ।
‘সরকার বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে’
জাতীয় প্রেসক্লাবের ‘জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম’র এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেছেন, “সংলাপ নিয়ে সরকার নানারকম কথা বলে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
“একবার বলছে, সংলাপ হবে; আবার বলছে, সংলাপ হবে না। একবার বলছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে; আরেকবার বলছে, অন্তর্বতীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে।”
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে ভরাডুবির আশঙ্কা থেকে সরকার বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা।
“সরকার বলবো, রাজতন্ত্রের মানসিকতা পরিহার করে গণতন্ত্রী হোন।”
অতীতে সামরিক শাসনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা ছিলো দাবি করে মঈন খান বলেন, “সেনাবাহিনী কখনো গণতন্ত্র হরণ করেনি। আওয়ামী লীগ যখনি ক্ষমতায় যেতে পারেনি, তখনি তারা ষড়যন্ত্র করে সেনাবাহিনীকে নিয়ে আসার পরিবেশ তৈরি করেছিলো।
“১৯৮২ সাল এরশাদের সামরিক শাসন ও ওয়ান-ইলেভেনে সেনা সমর্থিত সরকারের পেছনে আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততার কথা জনগণ ভুলে যায়নি।”
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের সভাপতি শ্যামা ওবায়েদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা দলের উপদেষ্টা ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল প্রমুখ।