সমাজকল্যাণমন্ত্রী নিষিদ্ধ হতে পারেন গণমাধ্যমে

SYED Moh.সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসিনিউজবিডি.কম
ঢাকা : ‘আপনাদের জন্য এমন আইন করা হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে আপনাদের স্বাধীনতাই থাকবে না’ সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলীর দেওয়া এমন বক্তব্যে নিন্দার ঝড় উঠেছে দেশব্যাপী। একই সঙ্গে দেশের গণমাধ্যমেও এনিয়ে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। যেকোন সময়ে নিষিদ্ধ হতে পারেন বর্তমান সরকারের ৬ মাস বয়সী এই মন্ত্রী।

গত ৫ জানুয়ারীর একতরফা নির্বাচনের পর সৈয়দ মহসীন আলী মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। দায়িত্ব পান সমাজকল্যান মন্ত্রণালয়ের। এর পর থেকে মূলত তিনি বেসামাল হয়ে পড়েন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মঞ্চে বসে শিশুদের সামনে ধুমপান করা, মঞ্চে ঘুমিয়ে পড়া, গণমাধ্যম ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সচিবালয়ের ভেতরে বাহিরে অসংযত আচরন করা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরন করার হুমকিসহ নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ এই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দও এখন সৈয়দ মহসীন আলীর বিরুদ্ধে ক্ষুব্দ।

সমাজের কল্যানকর কাজের জন্য প্রতিষ্ঠিত এই মন্ত্রণালয়ের মত দায়িত্বশীল একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থেকে সৈয়দ মহসীন আলীর অসংযত আচরনে দেশের সাধারণ মানুষও বিষ্মিত। কেউ কেউ তাঁকে বিকারগ্রস্ত (পাগল) বলেও মন্তব্য করেছেন। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিস কেন্দ্র (আসক) এবং সাংবাদিকদের দুটি সংগঠন বিএফইউজে ও ডিইউজের একাংশ সৈয়দ মহসীন আলীর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সমাজকল্যানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের জন্য সরাসরি হুমকি।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলীর দেওয়া এমন বক্তব্যের কারণে তিনি যেকোন সময়ে নিষিদ্ধ হতে পারেন গণমাধ্যমে। বর্তমান সরকারের ৬ মাস বয়সী এই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন সিদ্ধান্ত আসতে পারে সাংবাদিকদের শীর্ষ সংগঠন থেকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) যৌথভাবে এবং আসক পৃথক বিবৃতিতে সমাজকল্যানমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানায়।

আসক মনে করে, জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমের প্রতি এ রকম হুমকি ও মন্তব্য মত প্রকাশের স্বাধীন চর্চার পরিবেশকে চরমভাবে দুর্বল করে দেয়। আসকের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামালের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও সংবাদমাধ্যমের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্তব্য করেছিলেন। প্রিন্টিং প্রেসেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স অ্যাক্ট, ১৯৭৩-এর সংবাদপত্রের স্বাধীনতাবিরোধী-সংক্রান্ত বাতিল করা ধারাটি পুনরায় কার্যকরের উদ্যোগও তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে গ্রহণ করা হয়েছিল বলে জানা যায়।
আসক আশা প্রকাশ করেছে, সরকার সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে। এর পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে এ ধরনের হুমকি বা মন্তব্য না করার জন্য জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

অপরদিকে বিএফইউজে ও ডিইউজের নেতারা বলেছেন, মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যমের প্রতি ক্ষমতাসীনেরা কতটা রুষ্ট, সমাজকল্যাণমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। এর অংশ হিসেবেই দৈনিক আমার দেশ, দিগন্ত ও ইসলামিক টেলিভিশন বন্ধ করে দিয়ে ভিন্ন মতের সাংবাদিকদের কণ্ঠ রোধ করা হচ্ছে।
বিএফইউজের সভাপতি শওকত মাহমুদ, মহাসচিব এম এ আজিজ, ডিইউজের সভাপতি আবদুল হাই শিকদার ও মহাসচিব জাহাঙ্গীর আলম প্রধান এ বিবৃতি দেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের কয়েকজন ব্যবসায়ী এই প্রতিবেদককে বলেন, এজন্যইতো সৈয়দ মহসীন আলীকে সমাজকল্যানমন্ত্রী বানানো হয়েছে। সিলেটে শিশুদের সামনে মঞ্চে বসে ধুমপান করলেন। এটাও সমাজকল্যান। নানা সময়ে তার অসংযত আচরন টিভি পর্দায় দেখি, যেমনটি সেদিন (মঙ্গলবার) সাংবাদিকদের বললেন, সংাদপত্রের স্বাধীনতা থাকবে না। দেশবাসী দেখলো।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক বৈঠকে সমাজকল্যাণমন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আপনাদের জন্য এমন আইন করা হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে আপনাদের স্বাধীনতাই থাকবে না।’ নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনার চিত্র বারবার গণমাধ্যমে দেখানোয় সমাজকল্যাণমন্ত্রী এই হুমকি দেন। তিনি আরো বলেন, ‘আপনারা যা ইচ্ছা তাই দেখাবেন, বারবার দেখিয়ে একটা সেন্টিমেন্ট তৈরি করবেন। মানুষকে উত্তেজিত করছেন।’

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ