পরিসংখ্যান দেখে দেশের অবস্থা বোঝার উপায় নেই
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেছেন, আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বিশাল বাজেট আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করা হতে পারে। যে কারণে নির্বাচনের আগে এতো বিশাল বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করার ক্ষেত্রে সময় অনুপাত মেনে চলার প্রস্তাব দিয়েছেন। এই সরকার বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ বেশি খরচ করে ফেললে বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নির্বাচন পরবর্তী সরকার অর্থ সঙ্কটে পড়বে।
রোববার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘সমুন্নয়’ আয়োজিত ‘প্রস্তাবিত বাজেট ২০১৩-১৪ কেমন হলো : একটি সমুন্নয় পর্যালোচনা’ শীর্ষক বাজেট প্রতিক্রিয়ায় প্রধান অতিথির ভাষণে ড. আকবর আলি খান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, নির্বাচনের বছরে বাজেটে বরাদ্দ অর্থ যাতে নির্বাচনী খাতে ব্যয় না হয়, নির্বাচন কমিশনকে সেজন্য সক্রিয় হতে হবে। এজন্য নির্বাচন কমিশনের পার্লামেন্টকে দেখিয়ে দেওয়া দরকার কোন কোন খাতে সরকার নির্বাচনী ব্যয় করতে পারে, আর কোন কোন খাতে পারে না। অন্যথায় এই বিপুল অংকের টাকা নির্বাচনী কাজে ব্যবহার হতে পারে। এতে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ‘সমুন্নয়’র সম্মানিত ফেলো খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। বাজেট আলোচনা উপস্থাপন করেন দিলরুবা ইয়াসমিন চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেন ড. মাহফুজ কবির।
প্রধান অতিথির ভাষণে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার শেষ অংশের উল্লেখ করে ড. আকবর আলি খান বলেন, আমাদের অর্থনীতি অশোভন আশাবাদের নয়। এখনও ভালোই আছে। তবে যেকোন মুহূর্তে ভেঙ্গে যেতে পারে। এজন্য সরকারের সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। আমরা দেখতে পারছি সেটা সরকার করছে না।
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করতে কষ্ট হবে। এর কারণ এ ধরনের বড় প্রকল্পে আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। তাছাড়া বড় প্রকল্পগুলোতে প্রাক্কলিত ব্যয় দুই বছরের মধ্যে দ্বিগুণ হয়ে যায়।
নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরু হলে কবে নাগাদ শেষ হবে তা বলা মুশকিল। এসব প্রকল্পের ব্যয় বহন করতে হয় বৈদেশিক মুদ্রায়। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক, কিন্তু রিজার্ভের কারণ সন্তোষজনক নয়। কেননা দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে না। যে কারণে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি কমে গেছে। এতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ নেই।
বাজেট বাস্তবায়নে সংশয় প্রকাশ করে ড. আকবর আলি বলেন, দেশে মূল্যস্ফীতি স্বস্তিদায়ক নয়। সরকারি কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পান। ফলে আমরা আয় ও ব্যয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি তা বাস্তবায়ন সম্ভবপর নাও হতে পারে।
ড. আকবর আলি খান আরো বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো রাজনীতিকরণ হয়ে গেছে। তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। ফলে দেশের বাস্তব অবস্থা কী তা পরিসংখ্যান দেখে বোঝার উপায় নেই। কি পরিমাণ বিনিয়োগ বা ব্যয় হয় তা বুঝা যায় না। দেশের সংখ্যাতাত্বিক উপাত্তের যথার্থতার জন্য আমাদের পরিসংখ্যান ব্যুরোর স্বাধীনতা এবং পরিসংখ্যান সঠিকভাবে প্রকাশ করা দরকার।
তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য পাটের ব্যাগে করে বাজেটের কাগজ দেওয়া হয় কিন্তু আমরা জানি না বাজেটের আয় বা ঘাটতি পূরণের উৎস কি? কতগুলো অনুমানের ওপর নির্ভর করে বাজেট করা হয়। আমরা তাও জানি না অনুমানগুলো কি। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে তা জানা সম্ভব হতো।
ড. আকবর আলি খান বাজেটের প্রস্তাবনায় অর্থের উৎস ও বিশ্লেষণ প্রকাশের প্রস্তাব করে বলেন, এটা বাজেটের স্বচ্ছতার জন্যও ভালো হবে। অন্যথায় বাজেটের গ্রহণযোগ্যতা কমতে থাকবে।
ড. আকবর আলি খান সংসদে বাজেট নিয়ে আলোচনা অনর্থক আখ্যায়িত করে বলেন, বাজেট নিয়ে নিজ নিজ মন্ত্রণালয় তাদের সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা করতে পারেন। এতে বরং বাজেটে সংসদ সদস্যদের অবদান বাড়বে।
সংসদে বিরোধী দলের অনুপস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারি দলের সদস্যরা গদবাঁধা কথা বলেন। বাজেটের প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকেন। অন্যদিকে বিরোধী দল না থাকাতে বাজেটের নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে কোন আলোচনা হয় না।
আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ সংসদ বিষয়ে আকবর আলি খানের বক্তব্যকে সমর্থন করে বলেন, এদেশের পার্লামেন্টের বাজেট সেশনে ৮০ ভাগ আলোচনা বাজেটের সঙ্গে সম্পৃক্ততাহীন। তাই বাজেট সংশোধনীর বিষয়গুলো পার্লামেন্টের সংসদীয় কমিটিতে হওয়া দরকার।