কারাগারে সন্ত্রাসী বিপ্লবের বিয়ে নিয়ে প্রশাসনে তোলপাড়
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসিনিউজবিডি
ঢাকা : লক্ষ্মীপুর জেলা কারাগারে তাহের পুত্র ভয়ংকর সন্ত্রাসী বিপ্লবের বিয়ে নিয়ে ঢাকায় প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। গণমাধ্যমে ফলাও করে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর টনক নড়েছে কারা-প্রশাসনেরও। অভিযোগ উঠেছে লক্ষ্মীপুর জেল-সুপারের বিরুদ্ধে। তিনি বিপ্লবের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে কারাগারের ভেতরে বিয়ে আয়োজনে সহায়তা করেছেন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, রোববার এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে লক্ষ্মীপুর জেলা কারাগারে খুনের মামলায় যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত সন্ত্রাসী এইচ এম বিপ্লবের বিয়ে সম্পন্ন হয়। কনে পৌরসভার লামচরী গ্রামের মৃত আবুল খায়েরের মেয়ে সানজিদা খায়ের। তবে কারারুদ্ধ বিপ্লবের সঙ্গে কনের ফোনে বিয়ে হয় বলে দাবি করেছে কারা-কর্র্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন। জেল গেটে বিয়ের কাবিনে স্বাক্ষর করেছে বিপ্লব।
কারাগারের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিপ্লবের বিয়ে উপলক্ষে কারাগারে গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয়। বাইরে থেকে উন্নতমানের খাবার পাঠানো হয়। কারা-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আটক সন্ত্রাসীরাও অংশ নেয়। সূত্র আরো জানায়, লক্ষ্মীপুর জেল-সুপার বিপ্লবের বিয়ে আয়োজনে কারাগারের ভেতরে অবৈধ সহায়তা করেছেন। অভিযোগ উঠেছে, তিনি এ জন্য বিপ্লবের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন।
শনিবার গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ঢাকার প্রশাসন ও কারা-কর্তৃপক্ষের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়। ক্ষোভের সৃষ্টি হয় সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়েও। একই সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য রোববার চট্রগ্রাম বিভাগীয় কারা কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠাচ্ছে বলে জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, আইজি প্রিজনের দায়িত্বে থাকা কারা-কর্মকর্তাকে রোববার সকালে তলব করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল এ বিষয়ে এবিসিনিউজবিডিকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি পত্রিকায় দেখেছি। কি ঘটেছে, তা না জেনে তো বলা যাবে না। আগামীকাল মন্ত্রণালয়ে গিয়ে জেনে এ বিষয়ে পরবর্তি পদক্ষেপ জানাতে পারবো।’
চট্রগ্রামের ডিআইজ প্রিজন অশিত কুমুর পাল এবিসিনিউজবিডিকে বলেন, ‘লক্ষ্মীপুরের বিষয়টি আমার জানা নেই। পত্রিকায় দেখেছি। লক্ষ্মীপুরের জেলারের কাছে ঘটনার সঠিক তথ্য চাওয়া হয়েছে। তার কাছ থেকে জবাব পাওয়ার পর এ বিষয়ে পরবর্তি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক এ কে এম টিপু সুলতানকে এই রিপোর্ট লেখার সময় বার বার ফোন (০১৭২৩-১২১১৬৬) করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। জেলা পুলিশ সুপার এসময় একটি সম্বর্ধনা অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত থাকায় তার বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও আইনজীবী নুরুল ইসলামকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়। পরে তাঁর লাশ কয়েক টুকরা করে মেঘনা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকায় আদালত তাহেরপুত্র বিপ্লবকে ফাঁসির দন্ড দেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই সাজা মওকুফের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন বিপ্লব। ২০১১ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান মৃত্যুদন্ড মাফ করে দেন। পরের বছর রাষ্ট্রপতি আরও দুটি হত্যা মামলায় (মহসিন ও কামাল হত্যা) বিপ্লবের যাবজ্জীবন সাজা কমিয়ে ১০ বছর করেন।
এর আগে ২০০৯ সালে স্কুলছাত্র জাহিদ হত্যা মামলা ও এতিমখানায় অগ্নিসংযোগের মামলা থেকে বিপ্লকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা’ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে মামলা দুটি প্রত্যাহার করা হয়।